তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

“সাদা মনের মানুষ” হনুফা বেগম শার্শার মানুষের গর্ব

“সাদা মনের মানুষ” হনুফা বেগম শার্শার মানুষের গর্ব
[ভালুকা ডট কম : ১৯ এপ্রিল]
সাদা মনের মানুষ হনুফা বেগম ছিলেন শার্শার মানুষের গর্ব। তাকে হারিয়ে অনাথ ও প্রতিবম্বিরা অসহায় হয়ে পড়েছে। হনুফা শুন্য এলাকার অনাথ ও প্রতিবম্বিরা কার কোলে আশ্রয় নিবে এ ভাবনায় পড়েছে সচেতন মহল।

‘সাদা মনের মানুষ’ হনুফা বেগম (৭০) ১২ এপ্রিল শুক্রবার সকালে সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার বাগআঁচড়ায় একটি ক্লিনিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঐদিনই বাগআঁচড়ার গণকবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

১৯৪৭ সালের ১৫ অক্টোবর বাগআচড়ার কুলবেড়ী গ্রামে তার জন্ম হয়। দেশের নির্বাচিত দশজন ‘সাদা মনের মানুষ’র মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। অজপাড়াগাঁয়ের অশিক্ষিত একজন নারী হয়েও মনের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন বড় মনের মানুষ। ২০০৬ সালে সাদা মনের মানুষ হনুফা বেগম’র জীবন কাহিণী নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় দৈনিক প্রথম আলো প্রত্রিকায়। সংবাদের সুত্র ধরে “ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড হনুফা বেগমকে সাদা মনের মানুষ নির্বাচিত করেন। ঢাকায় নিয়ে তাকে সম্মামনা ক্রেস্ট প্রদান করে হাতে তুলে দেয়া হয় এক লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান।

যশোরের শার্শা উপজেলার বাঁগআচড়া বাজারের পাশে বেত্রাবতী নদীর ধারে ছোট্ট একটি কুড়েঘরে বাস করতেন হনুফা বেগম। তিনি আট সন্তানের জননী। তাদের মধ্যে জিবিত আছে ৬ জন। তারা হলো আকবার আলী গাজি (৪৮),মুনসুর আলী গাজি (৪৫), আব্দুল কাদের গাজি (৪২), খোদেজা বেগম (৩৫), আয়সা খাতুন (২৮), রওশনারা খাতুন (২৭)।

২০ বছর আগে স্বামী মারফাতুললাহ মারা যাওয়ার পর খুব কস্টে কখনও লোকের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ আবার কখনও বা হোটেলে কাজ করে নিজে আধপেটা খেয়ে পিতৃহারা সন্তানদের বড় করে তোলেন। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বুঝতে শেখে সবাই তখন  একে একে তাদের বৃদ্ধ মাকে ছেড়ে চলে যায়। বৃদ্ধ হনুফা অসহায় হয়ে পড়ে শুরু হয় তার নুতন করে বেচে থাকার সংগ্রাম। বাগআচড়া বাজারেই রাস্তা ঝাড়ু দেয়ার কাজ নেয় সে। ভোর থেকে রাত অবধি চলে তার অক্লান্ত পরিশ্রম। রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে প্রতিদিন তার আয় হয় ৮০ টাকা। এই সামান্য আয় দিয়েই তার বেচে থাকার প্রেরনা।  

রাস্তা ঝাড়ু দিতে গিয়ে একদিন চোখে পড়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অনাথ দু‘টি শিশু। তাদের একজনের বয়স ১০ মাস আর অন্যজনের দেড় বছর। হনুফা বেগম তাদের কুড়িয়ে নিয়ে ঠাঁই দেন তার ভাংগা ঘরে। মায়ের আদরে বড় করে তোলে তাদের। পাশের বাড়ির ভাতের মাড় আর হোটেলের ফেলে দেয়া পচাবাসী  খাবার দিয়ে বড়ে করে তোলে তাদের। তার কাছে আশ্রয় পাওয়ার জন্য শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি অনেকই ছুটে আসে। অবাঞ্ছিত জন্ম যাদের, শৈশবেই বাবা মায়ের মৃত্যু হয়েছে এমন শিশুদেরকে নিয়েই গড়ে ওঠে হুনুফার সংসার।  নিজ উদরের সন্তানরা যখন তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনি যাদের কুড়িয়ে পেয়েছেন তাদেরকে  আশ্রয় দিয়ে মায়ের স্নেহে বড় করেছেন এমন ৪০ জন বড় হয়ে হনুফাকে ছেড়ে চলে গেলেও তারাই তার মৃত্যুর আগ দিন ভরন পোষন’র দায়িত্ব গ্রহন করে ছিল। হুনফার মৃত্যুতে তারাই আজ ডুকরে ডুকরে কাদছে। হনুফার মত এমন বড় মনের মানুষ আর  লক্ষ মানুষের শ্রেষ্ঠ মা এদেশের মাটিতে আর একটি আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এ অঞ্চলে হাজারো মানুষ। নিজে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও সব সময় ভেবেছেন অনাথ আশ্রয়হীন অসহায় মানুেষর জন্য।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিঃ-এর কাছ থেকে পাওয়া এক লক্ষ টাকা তিনি নিজে ভোগ না করে ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন লভ্যাংশ’র টাকা দিয়ে ঐ আশ্রয়হীন অনাথ মানুষগুলোর মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে। নিজের মাথা গোজার ঠাই নেই, নদীর পাড়ে এক খন্ড জমিতে ঘর বেধে ছিলেন কুড়িয়ে পাওয়া পলিথিন আর বিচলী দিয়ে । বর্ষায় পুরো সময়টাই ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে স্যাত স্যাতে কাদা মাটিতে বসবাস ছিল তার। এলাকায় শত শত কোটি পতি থাকলেও জীবন দশায় তার পাশে এসে স্থাণীয়ভাবে এতোটুকু সাহায্য করেনি কেউ।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

জীবন যাত্রা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই