তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গাজীপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছেই

গাজীপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছেই,প্রবেশপথের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ
[ভালুকা ডট কম : ৩১ জুলাই]
ঈদে ঘরমুখো মানুষ এখন বিনোদনের জন্য পিকনিক স্পট, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রমুখী। গাজীপুরের নামকরা পিকনিক স্পট, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়। স্পটগুলোর চারপাশে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষ।

মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন প্রকার যানবহনে পর্যটন স্পটমুখী হচ্ছেন দর্শণার্থীরা। কেন্দ্রগুলোর প্রবেশপথের সড়কগুলোতে বাড়তি গাড়ীর চাপ থাকলেও কোথাও যানজট সৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ঈদের দিন মঙ্গলবার, ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার ও তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার গাজীপুরের পিকনিক স্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

গাজীপুর ন্যাশনাল পার্কের ইজারা নিয়েছেন বন্ধু কনস্ট্রাকশন। ওই কনস্ট্রাাকশনের পক্ষে মাসুদুল হক জানান, বেসরকারী হিসেব অনুযায়ী গাজীপুরে অর্ধশতাধিক পিকনিক স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঈদের দিন ন্যাশনাল পার্কে সাড়ে পাঁচ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন ৯ হাজার এবং ঈদের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও বিক্রি ভাল হচ্ছে। টিকিটের বাইরেও অনেক দর্শনার্থী এলোপাতাড়িভাবে পার্কে ঘোরাফেরা করেছে। এ সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। বছরের সেরা টিকিট বিক্রি হয়েছে এবার ঈদে। বিকেল থেকেই স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের পরিদর্শন শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ঈদের অবকাশ যাপনের জন্য স্পট কর্তৃপক্ষেরও ছিল বাড়তি প্রস্তুতি। বসার ব্যবস্থা, বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলার জন্য অস্থায়ী শেড নির্মান, খাওয়া-দাওয়ার জন্য অস্থায়ী হোটেল স্থাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বাবুল জানান, নুহাশে ঈদের পরদিন মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের সংখ্যা ছিল দুই’শর বেশি। ঈদের পরদিন বুধবার কমপক্ষে দুই হাজার দর্শনার্থী নুহাশ পল্লী পরিদর্শন করেছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, তরুন, যুবক ছাড়াও শিশু, কিশোরদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল এক হাজারের বেশি।

উত্তরা থেকে আসা এক অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারী কর্মকর্তা জামিল সিকদার জানান, দুই’শ টাকা করে প্রবেশ টিকিট ক্রয় করে নুহাশ পল্লীর ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। তিনি জানান, নুহাশ পল্লীতে এসে কথা সাত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সমাধি, সারিবদ্ধ নানান জাতের গাছপালা ও হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত নির্মান দেখতে পেয়েছি। যাদের দুই’শ টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই, তারাতো সেখঅনে প্রবেশ করতে পারছে না। হুমায়ুন আহমেদ কি এমনটি চেয়েছিলেন?

ঢাকার রামপুরা থেকে আসা স্কুল শিক্ষিকা নাজমা সুলতানা জানান, দুই’শ টাকা প্রবেশ মূল্য নুহাশ পল্লীতে একজন দর্শনার্থীর জন্য অনেক বেশি হয়ে গেছে। অনেক দর্শনার্থী ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও খরচের কথা ভেবে নুহাশ পল্লীর গেট থেকে ফিরে গেছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভেড়ামতলী গ্রামের আব্দুল হক বলেন, গত দু’বছর যাবত নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের জন্ম-মৃত্যু দিবস, বৈশাখী মেলা, ঈদ আয়োজনে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। ঈদের দিন বাইরের দর্শনার্থীর চেয়ে এলাকার দর্শনার্থী ছিল বেশি। ঈদ ও ঈদের পর দু’দিন নুহাশ পল্লীর গেটের সামনে ২০ ডজন পেয়ারা বিক্রি করেছি। মাঝারি আকারের পেয়ারা গড়ে প্রতি ডজনের বিক্রয়মূল্য ৬০ টাকা। স্থানীয় বাজারে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হত। আব্দুল হকের নুহাশ পল্লীর আশপাশের কেউ কেউ সব্জী বিক্রি করতেও নুহাশ পল্লীর গেটে বসেছেন। এর পাশাপাশি খাবার বিক্রির আয়োজনও রয়েছে।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বাবুল জানান, দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্যের টাকা দিয়ে নেত্রকোনায় স্যারের (হুমায়ুন আহমেদের) প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয় ও নুহাশ পল্লীর কর্মচারীদের খরচ চালানো হয়।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি বিভাগসুত্রে জানা হেছে, গাজীপুর সদর উপজেলায় ২৫টি, কালীগঞ্জে ৩টি, কালিয়াকৈরে ১০টি, শ্রীপুরে ১৫টি, কাপাসিয়ায় ৫টি।  এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল চড়ুইপাখি, শ্যামলী, খতিব খামার বাড়ি, নুহাশ পল্লী, নক্ষত্রবাড়ি, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, অঙ্গণা, নন্দন প্রমুখ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সিংগারদিঘী এলাকার সী-গাল পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে দর্শনার্থীদের ভীড় তুলনামূলক বেশি। ঈদের দিন থেকেই তার স্পটে দর্শনার্থীদের ভীড় চলে আসছে।

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া খামার বাড়ি পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন বলেন, তার স্পটেও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড় রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য জানান, ঈদের দিন ওই পার্কে ১০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর ভীড় ছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার এ সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবারও ১৫ হাজার অতিক্রম করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, ঈদের দিন প্রায় ১০ হাজার দর্শণার্থী সাফারি পার্কে বেড়াতে আসেন। দ্বিতীয় দিনও পার্কে ছিল উপচে পড়া ভিড়। কিছু দর্শনার্থী পার্কে গিয়ে বিভিন্ন ফুল গাছের ফুল-পাতা ও ডালা ভেঙ্গে ফেলেন। পশু-পাখিকেও ঢিল ছুঁড়েন। এতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। এখানে ৫২ জন লোকবল নিয়ে আমাদের হিমশিমখেতে হচ্ছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে ৩০০ পদের বিপরীতে ১৩৮ টি পদ সৃষ্টি করা হলেও  এখানে  কেউ  নিয়োগ পায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক  থেকে বাঘেরবাজার এলাকা থেকে পার্কে  আসার রাস্তাটি প্রশস্তকরণ ও ট্রাফিক পুলিশ প্রয়োজন। পার্কের উত্তর-পশ্চিমে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক ক্ষেত্রটিও অপসারনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো জানান, ওই বিস্ফোরনের কম্পন প্রাণীর সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি ওই কম্পন সহ্য করতে না পেরে ৩ টি  হরিণ মারা গেছে  ও হাতি ভয়ে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলেছে।  

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, পার্কে ১১ টি বাঘ, ৯ টি সিংহ, ৪ টি জিরাফ, ৪ টি হাতি, ২৮ টি কুমির, ২০ টি ম্যাকাউ, ৩ শতাধিক টিয়া পাখি, ৯ টি ভালুক, ২৩ টি হরিণ, ৪৫ টি ক্রাউন ফ্রিজেন্ট ও ৬ টি জেব্রাসহ ৪৭ টি বিভিন্ন প্রজাতির সহস্রাধিক পশু-পাখি রয়েছে।

সাফারী পার্ক প্রকল্পের পরিচালক ও বন সংরক্ষক ড. তপন কান্তি দে  জানান,  গাজীপুরের শ্রীপুরের ইন্দ্রপুর (বাঘেরবাজার) এলাকায় ৩ হাজার ৬৯০ একর জায়গার ওপর ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ পার্কটি মাষ্টার প্ল্যানের আলোকে গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১০ সালের জুনে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এ পার্কটি থাইল্যন্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ড-এর আদলে করা হচ্ছে। মাষ্টারপ্ল্যানের আলোকে ২০১৩ সালে সংশোধিত প্রকল্পে ২৬৩ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহসড়কের বাঘের বাজার হতে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্কটির অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১অক্টোবর গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় অন্যান্য প্রকল্পের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এখানে  বাংলাদেশের বন ও প্রাণী বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র, নেচার হিষ্ট্রি মিউজিয়াম, পার্ক অফিস, বিশ্রামাগার, ডরমেটরি, বন্যপ্রাণী হাসপাতাল, কুমির পার্ক, লিজার্ড পার্ক, ফেন্সি ডাক গার্ডেন, ক্রাউন্ট ফিজেন্ট এভিয়ারী, প্যারট এভিয়ারী, ধনেশ পাখিশালা, ম্যাকাউ ল্যান্ড, মেরিন একোরিয়াম, অর্কিড হাউজ, প্রজাপতি বাগান, ক্লাইমেট হাউজ, ভালচার কর্নার, জুলন্ত ব্রীজ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ফোয়ারা, বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরা, সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরা, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ইকো-রিসোর্ট, ফুট কোর্ট, এলিফেন্ট শো গ্যালারী, বার্ড শো গ্যালারী, এগ ওয়ার্ল্ড ও শিশুপার্ক চালু করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর উদ্বোধনের পর থেকেই সর্ব সাধারনের জন্য খুলে দেয়া হয় সাফারী পার্ক। পার্কে থাকা জন্তু দেখার জন্য রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

একই রকম তথ্য জানালেন গাজীপুর সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের পুষ্পদাম রিসোর্ট ও পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপক বিপ্লব। তিনি জানান, সারা বছর জুড়ে তার এ স্পটে দর্শনার্থীদের ভীড় থাকে। কিন্তু ঈদের সময় চাপ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ পর্যটক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পর্যটক শাহজাহান মাস্টার বলেন, পিকনিক স্পটগুলোতে যাতায়াতের জন্য সড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখা হয় না। দর্শনার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। এ সময়গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।

হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ীর সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি ঈদের দ্বিতীয় দিন নুহাশ পল্লীতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। দর্শনার্থীরা অনেকটা নিরাপদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেরিয়েছেন। কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর নেই।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই