তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

পীরগঞ্জে মামলার গ্রাম চাঁন্দপুর!

পীরগঞ্জে মামলার গ্রাম চাঁন্দপুর
[ভালুকা ডট কম : ০১ সেপ্টেম্বর]
পীরগঞ্জে মামলার গ্রাম বলে খ্যাত চাঁন্দপুর। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ওই গ্রামে ৩৫টি পরিবারের মধ্যে নারী-পুরুষসহ লোক সংখ্যা ৯ শতাধিক এবং ভোটারের সংখ্যা ৪’শ। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত থানা ও আদালতে দায়েরকৃত ২৮টি মামলায় প্রায় প্রতিটি পরিবারের লোকজন জড়িয়ে পড়েছে। ফলে গ্রামটিতে বিরাজ করছে মামলা আতংক। গ্রামটিতে বসবাসকারী অনেকে অন্য গ্রামে তাদের আত্বীয়-স্বজনের বাসা বাড়িতে রাত যাপন করে আসছে প্রায় ১৪টি বছর ধরে।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে ওই গ্রামের মামলায় ভাগ্যক্রমে জড়িত নয় এমন ৩  প্রবীন ব্যাক্তি আলহাজ্ব ফইম উদ্দিন (৭৫), নুরুল ইসলাম (৭৬) ও শমেস উদ্দিন (৮০)সহ গ্রামটির অনেকেই অভিযোগ করে বলেন- স্বল্প পরিবারের এ গ্রামটিতে এক সময় সুখ-শান্তির অভাব ছিলো না। আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে মৃত-সাহেব উদ্দিনের পুত্র আব্দুস ছাত্তার গ্রামটিতে সমিতি গঠনের নামে ৮ থেকে ১০জন লোককে সাথে নিয়ে হীনস্বার্থ হাসিলে সুকৌশলে অন্যের জমি জবর দখলে নারী নির্যাতন, অপহরণ, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মারপিটের ঘটনায় একের পর এক মামলা দায়ের করতে থাকে। ফলে প্রতিপক্ষরা আত্মরক্ষায় থানা ও আদালতের আশ্রয় নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি ২৮টি মামলা দায়ের করেছে। দায়েরকৃত ওইসব মামলায় আসামীর সংখ্যা ২ শতাধিক। প্রতি মাসেই গ্রামটি থেকে উল্লেখিত আসামীদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। যার ফলে চাঁন্দপুর গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিটি মূহুর্ত কাটছে অভাব-অনাটন আর মামলা কিংবা গ্রেফতার আতংকে।

গ্রামবাসি আরো জানান, উল্লেখিত আব্দুস ছাত্তার বিগত ১৯৯৯ সালে পৈত্রিক ভিটে ও সামান্য আবাদী জমি নিয়ে তার সাঙ্গ-পাঙ্গঁসহ সুকৌশলে সাধারন মানুষের জমি দখলসহ নারী নির্যাতনে মেতে উঠলে শুরু হয় পরস্পর বিরোধী হামলা-মামলা, মারপিট, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। এক পর্যায়ে উল্টো ছাত্তার পক্ষীয় মঞ্জু মিয়া বাদী হয়ে প্রথমে বিগত ১৯৯৯সালের ৪ডিসেম্বর পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে যার নং-৩/২১১, রফিকুল ইসলাম ২০০৫সালের ১১ডিসেম্বর বাদী হয়ে মামলা করে যার নং-২৫/৩৯৯। মজিবর রহমান ২০০৮সালের ১৫জুন ও ৪ নভেম্বর পৃথক দুটি মামলা করে যার নং-২০৭/০৮ ও ৩৮৬/৮। ২০১২সালের ৩ এপ্রিল রাণী বেগম বাদী হয়ে মামলা করে, যার নং-৪/১২৯, একই বছরের ৯ এপ্রিল আব্দুল গণী বাদী হয়ে মামলা করে, যার নং-১১/১৩৬। একই বছরের ৯এপ্রিল গোলাম মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করে, যার নং-৮৬/১২।

এছাড়াও আব্দুস ছাত্তার তার পুত্র সিরাজুল কে বাদী করে ২০১২সালের ২৪ফেব্রয়ারীতে দুটি, ৯ এপ্রিল, ১৮মেসহ ২০১৩সালের ২৯মার্চ পৃথক ৫টি মামলা দায়ের করে, যার নং-৪১/৭১, ৬০/১২, ৩০/১৯৯, ৪১/৭১, ৩১/৯৮। এদিকে আবারো আব্দুস ছাত্তার বাদী হয়ে ২০১২সালের ৭নভেম্বর, ২০১৩সালের ১০আগষ্ট এবং চলতি বছরের ৫ আগষ্ট পীরগঞ্জ থানায় মামলা করে যার নং-১৬/৪৮৪, ১৮/২৯২, ১২/৩০৯। অপরদিকে নিরীহ গ্রামবাসিরা উল্লেখিত মামলাগুলো প্রতিরোধ করতে গিয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা আলতাব হোসেন বিগত ২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল, ২০১২সালের ১১নভেম্বর পৃথক দুটি মামলা করে যার নং-৪৮৯/৫, ১০/৪৭৮। এছাড়াও ছালেহা বেগম নামের এক মহিলা ২০০৫সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলা করে যার নং-৬৪৮/৫। কোরছেদা নামের অপর এক মহিলা ২০০৬সালের ২১ডিসেম্বর মামলা আনায়ন করে যার নং-২৩/৪৬৬। একই গ্রামের আব্দুস সামাদ সরকার বাদী হয়ে বিগত ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল ও ২০১১সালের ১৯ আগষ্ট পৃথক দুটি মামলা করে যার নং-১৫১/৯ ও ২১/২৪৯। ওই গ্রামের সাইদুর রহমান ২০১১ সালের ১৮ নভেম্বর ও ২০১২ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারী এবং একই বছরের ১ এপ্রিল পৃথক ৩টি মামলা করে যার নং-৩৯৩/১১, ৬৯/১২ এবং ২/১২৭। গ্রামের মোসলেম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ২০১২ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারী বাদী হয়ে মামলা করে যার নং-২৬/৫৬। অন্যদিকে স্কুলের জমি দখল করা কে কেন্দ্র করে চান্দের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেন ২০১২সালের ৮মার্চ একটি মামলা করে যার নং-০৯/১২।

অপরদিকে একই বছরে ২৬ এপ্রিল সমেস উদ্দিন নামের এক গ্রামবাসি মামলা করে যার নং-২৫/১২। এবং শাহানারা বেগম নামের আরেক মহিলা ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পীরগঞ্জ থানায় আরো একটি মামলা করে যার নং-৩৬/২৫৩। গ্রামবাসিরা আরো অভিযোগ করে বলেন-সামান্য আবাদী জমি ও ভিটেমাটি নিয়ে জীবনযাত্রায় নেমে গ্রামবাসিদের উপর মামলা-হামলা চালিয়ে আব্দুস ছাত্তার ইতোমধ্যেই প্রায় ৮ একর জমির মালিক বনে গেছেন। পাশাপাশি তার সাঙ্গপাঙ্গঁরাও পিছিয়ে নেই। হয়ে গেছেন অনেক টাকার মালিক। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা দুরের কথা কথা বলাও দূরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে কথিত সমিতি’র নেতা আব্দুস ছাত্তারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দুলাল চৌধুরী সাথে কথা হলে তিনি বলেন-চাঁন্দপুর গ্রামের মামলা মিমাংসায় বহুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি শুধু প্রশাসনিক অসহযোগিতায়। বর্তমানে গ্রামটিতে কোন আত্বীয়-স্বজন আসতে চায় না। এমন কি বিয়ে-শাদিতে অনেকেই অনিহা প্রকাশ করেন। যেনো দেখার কেউ নেই।





সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই