তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

চলে গেলেন শ্রীপুরের বীরাঙ্গণা মমতাজ

চলে গেলেন শ্রীপুরের বীরাঙ্গণা মমতাজ
[ভালুকা ডট কম : ৩০ অক্টোবর]
১৯৭১ সনে পাশবিক নির্যাতনে পেটের ক্ষত অপারেশনের ১০ম বারে আর বেঁচে থাকতে পারেননি শ্রীপুরের বীরাঙ্গণা মমতাজ বেগম (৬৫)। তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিন মোড়লের স্ত্রী। টানা আড়াই মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহে.......রাজিউন) ।

মমতাজের দেবর অব্দুল মুহিত (৭০) জানান, ১৯৭১ সনের শেষ দিকের সকাল বেলা ১৮ জন মহিলার মধ্য থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মমতাজ বেগমকে বাছাই করে। একুশ বছর বয়সী মমতাজ বেগম সুশ্রী হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নজরে পড়েন। ১০ থেকে ১২ জন পাক সেনা তাকে নিয়ে যায় তার বাড়ির পাশের একটি আখ ক্ষেতে। সেখানে চলে পাশবিক নির্যাতন। উপর্যুপরি ধর্ষণে আট মাসের সন্তান সম্ভবা মমতাজকে শংকিত গ্রামবাসী অচেতন অবস্থায় প্রায় চার ঘন্টা পর উদ্ধার করেন।

কিন্তু ওইদিনই তিনি মৃত পুত্র সন্তান প্রসব করেন। শরীরে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার রাস্তা দুটি চিরদিনের জন্য এক হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর মোট আট বার অপারেশন করে স্বামীর সহায় সম্বল হারান। কিন্তু স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কাজ তিনি সারতে পারেন না। ৪০ বছর ধরে চিকিৎসকের পরামর্শে বিকল্প পথে পেট ফুটো করে প্রাকৃতিক কাজ সেরেছেন আমৃত্যু। সেই ঘটনার পর কানেও শুনেননি। বেশিরভাগ সময় তাকে ইশারা করে বুঝাতে হয়েছে। এক মাস আগে পেটের ক্ষত স্থানে আরও দ্ইুবার অপারেশন করা হয়েছে। এজন্য মোট ১০ বার অপারেশন হয়েছে তার ক্ষত স্থানে।

দেবর আব্দুল মুহিত আরো জানান, স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর্যন্ত বীরাঙ্গণা মমতাজ কিছু পায়নি। এ লজ্জা শুধু আমাদের নয়, সারা দেশের। রাজাকারেরা তাকে নির্যাতনের জন্য পাক হানাদারদের সহযোগিতা করেছে। ওই সময়ে আমরা প্রতিবাদ করলে রাজাকারেরা আমাদেরকে গুলি করারও হুমকি দিয়েছে। গত দুই বছর আগে বর্তমান সরকার তাকে তার বাসস্থানে ছাদ বিশিষ্ট একতলা পাকা বাড়ী তৈরী করে দেন।

লতিফপুর গ্রামের সাহেরা খাতুন (৯৫) জানান, দেশ স্বাধীনের পর লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে নির্যাতনের কথা জানায়নি তার পরিবার। স্বামী রমিজ উদ্দিন মোড়ল তার সহায় সম্বল বিক্রি করে স্ত্রী মমতাজের চিকিৎসা করেন।

এর মধ্যেই তার দুই কন্যা নিলুফা ইয়াসমিন ও জাকিয়া সুলতানাকে পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলায় বিয়ে দেন। সব শেষ করে এক পর্যায়ে মানুষের কাছে হাত বাড়ান। কেউ তাকে সাহায্য করেন না। বাঁচার তাগিদে অবশেষে নির্যাতনের কাহিনী বলতে বাধ্য হন মমতাজ বেগম। দেশ স্বাধীনের প্রায় ১৫ বছর পর স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা তার নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। সামান্য যা সাহায্য পান তা দিয়ে কয়েকদিন চলে। আবার কোনো গণমাধ্যমে ছাপা হলে আবার কিছু সাহায্য মেলে। সহায় সম্বল শেষ করে জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর বোনের সম্পত্তির ওপর বসবাস করেন বীরাঙ্গণা মমতাজ বেগম।

গত আট মাস আগে স্বামী রমিজ উদ্দিন মোড়ল (৭৫) বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।বীরাঙ্গণার দুই কন্যা নিলুফা ইয়াসমিন ও জাকিয়া সুলতানা জানান, সরকারের তৈরী করে দেওয়া ঘর বাড়ি সবই আমার মা পেয়েছে। কিন্তু ভোগ করে যাওয়া তার কপালে হয়নি। রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবী সময় থাকতেই যেন বীরাঙ্গণাদের সম্মান দেওয়া হয়।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার সিরাজুল হক বলেন, শ্রীপুর উপজেলায় পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আবাসন তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। বীরাঙ্গণা মমতাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের আওতায় সর্বপ্রথম একটি বাড়ির মালিক হয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক স্থানীয় নূর মোহাম্মদ ফকির বলেন, বীরাঙ্গণা মমতাজ বেগম ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় শেষভাগে পাক বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত বয়ে চলেছেন দীর্ঘ ৪৪ বছর। বীরাঙ্গণা মমতাজের মৃত্যুতে একটি জীবন্ত ইতিহাসের বিদায় হয়েছে। যার মুখ দিয়ে দেশবাসী পাক হানাদারদের প্রত্যক্ষ নির্যাতনের ইতিহাস শুনত সে এখন অতীত। তবে তার ত্যাগকে চেতনায় ধারণ করে এ প্রজন্ম এগিয়ে যাবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তার স্বামীর কবরের পাশেই তাকেই দাফন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম না থাকায় তার দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হয়নি। তবে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদেকুর রহমান, শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাশেম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সিরাজুল হক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই