তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকা চাঞ্চল্যকর চার খুন,মুলহুতা তনুর সন্ধান পায়নি ডিবি পুলিশ

ভালুকা চাঞ্চল্যকর চার খুন,মুলহুতা তনুর সন্ধান পায়নি ডিবি পুলিশ
[ভালুকা ডট কম : ১৮ ডিসেম্বর]
ভালুকায় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হওয়া শ্রমিকদল নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু তার স্ত্রী শেফালী আক্তার পারুল,দুই শিশু কন্যা হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তনুর স্ত্রীসহ ৬জনকে আটক করলেও মুলহুতা বাসের হেলপার তনুকে ৩দিনেও আটক করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। তনু এঘটনার মুল নায়ক বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে। বাচ্চুর বাসা থেকে লুট হওয়া একটি টেলিভিশন নেত্রকোণা থেকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ডিসেম্বর) লবন কোঠা গ্রামে,যে বাড়িতে নৃশংস ভাবে খুন হয়ে ছিল সেই বাড়ির ও তার শ্বাশুরির বাড়ির ঘরে তালা লাগানো রয়েছে।ওই বাড়ির সহ আশপাশ এলাকা নীরব নিস্তব্ধ  এবং এলাকাবাসির মাঝে গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে এলাকাটি প্রায় রয়েছে পূরুষ শূন্য। ওই বাড়ির আশে পাশে লোকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে কেউ এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মুখ খোলতে রাজি হয়নি।

শেফালি আক্তার পারুলের মা আলতান নেছা জানান, রফিক ঢাকায় দক্ষিণখান এলাকায় গাড়িতে সহায়তাকারী হিসাবে কাজ করতো। পরে সে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরি নেয়। সেই ইনসুরেন্স কোম্পানিতে আমার মেয়েও চাকরি করতো। সেই সুবাদে আমার মেয়ের সাথে রফিকের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে আনুমানিক ৬/৭বছর পূর্বে বিয়ে হয়। রফিকের আচার ব্যবহারে মুগ্ধ  হয়ে আমি আমার ঢাকা দক্ষিণখানের জমি বিক্রি করে লবণ কোঠায় জমি ক্রয় করে জামাইকে (বাচ্চু) বাড়ি করে দিয়ে ছিলাম। তাদের বাড়ির পাশে আমিও একটি বাড়ি করি।

নিহত বাচ্চুর ভাবি হামিদ খাতুন জানান,বাচ্চু আগে ঢাকায় দক্ষিণখান এলাকায় প্রথমে মনিরা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের ঘরে বাপ্পী নামে এক সন্তান জন্ম হওয়ার পর তাদের মাঝে ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে ওই এলাকায়  মৃত তারাজ উদ্দিনের মেয়েকে শাফালি আক্তার পারুলকে প্রেম করে বিয়ে করে। এবং তাদের সংসার খুব ভালই চলছিল। তাদের মাঝে কোন ঝগড়া বিবাদ হতো না। নিহত শেফালী আক্তারেরও আগে দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয়।ওই ঘরে একটি মেয়ে সন্তান হওয়ার পর ওই সন্তান মারাযায়।

নক্ষত্র ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র সতীর্থ শিপন বলেন,জীনিয়া আমার সাথে ইংলিশ মিডিয়ামে নার্সারীতে পড়তো,তার রোল নম্বর ছিল এক। ১৬ডিসেম্বর আমাদের স্কুলে অনুষ্ঠান ছিল। জীনিয়া খুন হওয়ায় তার জন্য আমার খুব খারাপ লাগতেছে।

স্কুলের শিক্ষক আশিকুর রহমান শিপন বলেন,জীনিয়ার খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল এবং তার পরিবারের লোকজনের জন্য শিক্ষক,শিক্ষার্থ ও অভিভাবকগণও চোখের পানি ফেলছে। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি এ স্কুলের পক্ষ থেকে।

বাচ্চুর পিতা ওয়াইজ উদ্দিন বলেন,কয়েক মাসে পূর্বে আমার ছেলেকে সিডস্টোর বাজারে জমি সংক্রান্ত ও রাজনৈতিক কারণে আতা ঢালী,হানিফ,ফালু ড্রাইভার মারপিট করে। এ ঘটনায় ভালুকা থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে ছিল।আমার ছেলে বাচ্চু,ছেলের বৌ ও দুই নাতনীকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। খুনিরা খুন করে ঘর থেকে টিভি ও স্বর্ণালংকার,মোবাইল ফোন, মূল্যবান কাপড় চোপও ভর্তি একটি ট্রাংক লুট করে  নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় নিহতে পিতা ওয়াইজ উদ্দিন বাদী হয়ে আজ্ঞাত ৪জনকে আসামী করে ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মামলা নং ২৪ তারিখ ১৬.১২.২০১৪ইং। মামলাটি ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে বলে ভালুকা মডেল থানা ওসি গোলাম সারোয়ার জানান।

নিহত বাচ্চুর পিতা ওয়াইজ উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করছেন, আমার ছেলেকে ইতিপূর্বেও সিডস্টোর বাজারের আতা ঢালী,সালাউদ্দিনে বডিগার্ড হানিফ,ফালু ড্রাইভার শমশেরের ছেলে খোকন বাচ্চুকে বেধরক মারপিট করে। এ ব্যাপারে মামলা করেছে আমাকে বাচ্চু বলে ছিল । পাড়াগাঁও মৌজার ২১শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত সালাউদ্দিন ও হানিফের সাথে বিবাধ চলে আসছিল।

ডিবির ওসি মাজেদুর রহমান জানান,এ হত্যাকান্ডটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে তনুই এ নারকীয় হত্যাকান্ডের মুলহুতা। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই পুরো ঘটনাটি উম্মুচন হবে।

হবিরবাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোর্শেদ আলম বলেন,এটা কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নয়। এ ঘটনায় এলাকার নিরীহ কোন ব্যক্তি যেন হয়রানী না হয়। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে  এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানাযায়,তনু ৪/৫বছর পূর্বে ভালুকা উপজেলা সিডস্টোর এলাকায় টিএম টেক্্রটাইল মিলে চাকরি করতো। সেই মিলের শ্রমিকদেরকে বাচ্চু তার নিজের বাস দিয়ে আনা নেয়া করতো। সেই সুবাদে বাচ্চুর সাথে তনুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তনু চাকরি ছেড়ে বাচ্চুর বাসের হেলপার হিসাবে চাকরি করতো। বাচ্চু তাকে খুব বিশ্বাস করলেও বাচ্চুর স্ত্রী তনুকে সহ্য করতে পারতো না। ঘটনার দিন রাতে প্রতিবেশিরা তনুকে বাচ্চুর বাড়িতে দেখলেও ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক রয়েছে। তনু সিডস্টোরে  চাকরি করার সময় যশোহর এলাকায় তার বাড়ি বলে পরিচয় দিত।

প্রসঙ্গ,গত ১৫ডিসেম্বর রাতে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু,তার স্ত্রী শেফালী আক্তার পারুককে পাশবিক নির্যাতন করে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে ও তার দুই শিশু কন্যা জিনিয়া এবং রিভাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২দিনে নিহত বাচ্চুর বাসের হেলপার  তনুর ভাইরা ভাই নেত্রকোনা জেলা পুর্বধলা থেকে রফিকুল ইসলাম,তার স্ত্রী জোসনা আক্তার,তনুর স্ত্রী হোসনা আক্তার,ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর বাজার থেকে শাফিজ উদ্দিন,আব্দুল বাতেন ও সোহেল সহ ৬জনকে আটক করে। ময়না তদন্ত শেষে বুধবার রাত ৯টায় নিহতদের লাশ উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে পৈত্রিক ভিটায় দাফন করা হয়।




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই