পেট্রোল বোমা থেকে রক্ষার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন তরুণ বিজ্ঞানী  ইয়ামিন
[ভালুকা ডট কম : ২০ ফেব্রুয়ারী]
সমসাময়িক বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) তরুণ বিজ্ঞানী  ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন এবার পেট্রোল বোমার আগুন থেকে গাড়ির যাত্রীদের রক্ষার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। ফলে পেট্রোল বোমার আগুনে আর কোন যাত্রীকে দ্বগ্ধ হয়ে পঙ্গু বা আকালে মৃত্যুবরণ করতে হবে না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বারি’র চত্বরে সাংবাদিকদের সামনে ইয়ামিন তার উদ্ভাবিত ওই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক ও প্রয়োগ পদ্ধতি তুলে ধরে এসব কথা বলেন। পরে তিনি ব্রি’র চত্বরে খোলা মাঠে জানালার একটি ফ্রেমের পেছেনে বিশেষ পর্দা টানিয়ে নিজে পেট্রোল বোমা ছুড়ে তা পরীক্ষা করে দেখান।

এসময় বারি’র মহাপরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম মন্ডল, পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. রওশন আলী, মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান, ড. মিয়ার উদ্দিন প্রমূখ।

ইয়ামিন আরো বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতিদিনই পেট্রোল বোমার আগুনে ঝলসে প্রাণ হারাচ্ছে অথবা পঙ্গু হচ্ছে সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে গণপরিবহনের সাধারন যাত্রিরা। পেট্রোল বোমার আগুন থেকে জীবন ও পরিবহন সুরক্ষিত রাখার কোন সহজ এবং কম মূল্যের লাগসই প্রযুক্তি দেশে বর্তমানে নেই। এ চিন্তা  থেকেই সাধারনের জীবন রক্ষার্থে মানবতার স্বার্থে একাট সহজ কার্যকরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেট্রোল বোমার আঘাত ও আগুন সফল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে আগুন যানবাহনের ভিতর ছড়াতে পারবে না। ফলে যাত্রীরা পেট্রোল বোমার ক্ষতি থেকে সহজেই রক্ষা পাবে। এ প্রযুক্তি একটি বড় বাসে ব্যবহারের জন্য খরচ হবে মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা ।

পদ্ধতিঃ গাড়ির জানালায় ব্যবহারের কাঁচকে স্বচ্ছ স্কচ টেপ দিয়ে লেমিনেশনকরনঃ
যানবাহনের জানালার কাঁচের দু’পাশই ৩ ইঞ্চি চওড়া স্বচ্ছ স্কচটেপ দিয়ে লেমিনেশন করে নিতে হবে যা পেট্রোল বোমার নিক্ষেপ করলে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ভিতরে ছিটকে পরা এবং পেট্রোল ও আগুন ছড়িয়ে পরা রোধ করবে। এখানে নিক্ষিপ্ত পেট্রোল বোমার ক্ষতি ৭০শতাংশ রোধ করা সম্ভব।

জানালার ভেতর দিকে বিশেষ পর্দার ব্যবহারঃ বিশেষ পর্দা তৈরি করণঃ
হার্ড ওয়ারের দোকানে কাঠে বার্নিশ করার জন্য যে পাতলা জালি কাপড় পাওয়া যায় তার উপরে চক পাউডার সাথে স্টেশনারীর দোকান থেকে কেনা আঠা বা গাম (স্বচ্ছ) ও পানি মিশিয়ে তৈরি করা কাই দিয়ে প্রলেপ দিতে হবে। পরে রোদে শুকিয়ে ওই কাইয়ের প্রলেপযুক্ত কাপড় পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। (কাইয়ের মিশ্রণটি তৈরির জন্য হল- ১ কেজি চক পাউডারের সাথে ১ লিটার পানি ও ২৫০ প্রাম আঠা বা গাম প্রয়োজন হবে। আর পরিমান বেশি প্রয়োজন হলে ওই অনুপাত ঠিক রেখে মিশ্রনটি তৈরি করে নেয়া যাবে।

বিশেষ পর্দাটি অতি উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার কারনে নিক্ষিপ্ত পেট্রোল বোমার পেট্রোল বা অকটেন দ্রুত  শুষে নেবে ও  তেল কম ছড়িয়ে পরবে। বোমার কিছু অংশ বাসের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলেও তা পর্দাটি আগুন জ্বলতে ও তেল ছিটকে যেতে বাঁধা দেবে। চক পাউডার (কার্বনেট) আগুনে তাপে কিছু জ্বলে সাময়িক কার্বন- মনো-অক্সাইড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে আগুনের দাহ্য ক্ষমতা কমিয়ে ও আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলে। এ বিশেষ পর্দাটি দাহ্য নয় এবং  অন্যকে জ্বলতেও বাঁধার সৃষ্টি করে। এ দুটি পদ্ধতি এক সাথে মালিক গণ যানবাহনে ব্যবহার করলে যাত্রিদের জীবন এবং যানবাহন পেট্রোল বোমার আগুন থেকে রক্ষ করা যাবে।

গাড়ির মালিক, চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরা গেলে অনায়াসে, কম খরচে গাড়ির যাত্রীদের প্রেট্রোল বোমার হাত থেকে অকাল মৃত্যু  ও দ্বগ্ধতার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

এর আগে তিনি সমুদ্র বা নদীতে অনাকাঙ্খিত তেল শোষনের প্রযুক্তি, পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজ, নৌকা বা অন্যকোন বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের প্রযুক্তি, মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়ের প্রযুক্তি, এক টাকায় ফরমালিন পরীক্ষার প্রযুক্তি ও শাক-সব্জি,ফল-মূল টাটকা রাখার মাটির ফ্রিজ উদ্ভাবন করেছিলেন।

মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, বারির এ তরুণ বিজ্ঞানীর উদ্ভাবনী শক্তি অনেক বেশি। যখনই কোন সমস্যা দেখা দেয়, তখনই তিনি সমসাময়িক ওই সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করেন এবং একটা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ফেলেন। সেটা কৃষি ক্ষেত্রেই  হোক আর কৃষি বহির্ভূত বিষয় হউক। আমি আশা করি আগামীতে তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। ফলে দেশ  ও জাতি আরো উপকৃত হবে।    

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।