তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় সওজের জমি ভাড়া দিয়ে লাখ,লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নেতারা

ভালুকায় সওজের জমি ভাড়া দিয়ে লাখ,লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নেতারা
[ভালুকা ডট কম : ০৪ মার্চ]
ভালুকার শিল্পখ্যাত এলাকা সিডস্টোর বাজারের জমি প্রভাবশালীরা পাকা বিল্ডিং করে দখলে নিয়েছে। বাজারের জমি অবৈধভাবে দখল করে নেয়ায় টুয়া বাজার বসে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা-সড়কের উপরে। এতে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা, ফলে মহা সড়কে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে।

সড়কও জনপথের জমি দখল করে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও বিএনপির নেতা কর্মীরা ক্ষদ্র ব্যবসায়িদের কাছে অগ্রিম জামানত টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাছ বাজারের সেডটি দখল করে ব্যবসায়ি সমিতির অফিস  করা হয়েছে,অপরদিকে বন বিভাগের শত কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল ও মার্কেট নির্মাণ করে বিক্রি ও ভাড়া খাটানোর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সুত্রে জানাযায়,হবিরবাড়ি মৌজার ৯ ও ১৮৫নং দাগে সিডস্টোর বাজারটি ৪একর বনের জমিতে ১৯৯৬ সালে সরকারী ইজারার আওতায় আনা হয়। ১৯৮৩ ও ১৯৯২সালে সরকারী অর্থায়নে পৃথক দুটি সি,আই সেড নির্মাণ করা হয়। ২০১২সালে ওয়ার্ল্ড ভিশনের অর্থায়নে একটি গণ শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। এ বাজারটি প্রতি বছর ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা সরকারীভাবে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে এ বাজারের ১শতাংশ জমিও দখল মুক্ত নয়, পুরো বাজারই অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে স্থানীয় তালুকদার পরিবার ও প্রভাবশালীরা। মাছের বাজারের জন্য নির্মিত সি,আই সেড দখল করে অফিস বানিয়েছে সিডস্টোর বাজার ক্ষদ্র ব্যবসায়ী সমিতি।

স্থানীয় তালুকদার পরিবার ও কিছু প্রভাবশালী লোকজন প্রভাব খাটিয়ে বাজারের জায়গায় পাকা ঘর বানিয়ে বানিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। পাকা ঘর নির্মাণ শেষে অবশিষ্ট খালি জমিতে টিনের ছাপরা বানিয়ে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে আকতার তালুকদার ওই  জমিতে টিনের ছাপরা নির্মাণ করলে ব্যবসায়ি সমিতির পক্ষ থেকে বাজারের জমি দখলের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বাজারের জায়গায় চায়ের দোকানদার সুখেন, কামার অর্জুন ও শ্যামল জানান. তারা প্রতিমাসেই মোবারক তালুকদারকে যথাক্রমে ৯শত,৭শত ও ৫শত টাকা ভাড়া দিচ্ছি। রুটি ব্যবসায়ি নজর আলী জানান,তিনি আকতার তালুকাদারকে প্রতি মাসে ৪শত টাকা করে ভাড়া দেন। এ ছাড়াও ইতিপূর্বে শাহাব উদ্দিন তালুকাদার তার আত্নীয় স্বজনরা বাজারের জায়গায় দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকায় সরকারী জমি বিক্রি করে দেয়। অপর এক সুত্র জানায় অবৈধ দখলদাররা এ পর্যন্ত ২৫/৩০টি দোকান বিক্রি করে দিয়েছে। রফিক তালুকদার ওই জায়গায় ইটের দেয়াল করে জুতার দোকান দিয়ে ব্যবসায় করছেন।

রফিক তালুকদার অভিযোগ করেন,বাজার সমিতির সহ-সভাপতি মুঞ্জুরুল হক ও সদস্য আনছারুল হক আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে আমরা টাকা না দেয়ায় তাঁরা ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। আমরা না হয় বাজারের জমিতে ঘর করে ব্যবসা করছি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকারী টাকায় নির্মিত মাছের বাজারের সেড দখল করে বাজার সমিতির লোকজন অফিস বানিয়েছে।

মাছের বাজারের জন্য নির্মিত সি,আই সেডটি সিডস্টোর বাজার ব্যবসায়ি সমিতির অফিস হিসাবে ব্যবহার করেছে। মাছ বাজার চলে গিয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধিন মার্কেটে। এখন ভাড়ায় গরুর বাজার বসে বাজারের দক্ষিণে মহা সড়কের পাশে।

সিডস্টোর বাজারের জায়গায় দখল করে নেয়ার পর টুয়া বাজারের ক্ষদ্র ব্যবসায়ি ও চাষীদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে ফোরলেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কের একাংশে উপর প্রতিদিনই বসছে। সিডস্টোর বাজারটি যদিও সপ্তাহের শুক্র ও সোমবারের বসার কথা। এলাকাটিতে শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় বর্তমানে এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বসবাস করে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও কাঁচা বাজার কেনাকাটার জন্য শ্রমিকরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাজারটিতে ভিড় জমায়। ফলে প্রতিদিন বিকালে থেকে রাত পর্যন্ত ক্ষদ্র ব্যবসায়ি ও কৃষকরা তাদের পণ্য নিয়ে মহা সড়কের উপরে বসায় প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ২জন নিহত হয়েছেন আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। কাঠালের মওসুমে রাস্তার পাশে কাঠালের আড়ৎ বসায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে ঘন্টা পর ঘন্টা রাস্তা বন্ধ থাকে। এ সময় যাত্রীদের অসম্ভব দুর্ভোগ পাহাতে হয়। মহা সড়কটি চালু হয়ে গেলে ব্যবসায়ি ও চাষীদের পণ্য নিয়ে বাজারে বসার আর জায়গায় থাকবে না। বাজারের জায়গায় তালুকদার পরিবার সহ অন্যান্য দোকানদারগণ স্থানীয় স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায় করছে। তাদেরকে বলার মতো কেউ নেই।

ছাত্রলীগ ও বিএনপির নেতারা মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথের জায়গায় দখল করে যে যার মতো অংশ ভাগ করে প্রায় ৮/১০লাখ টাকা ভাড়া তোলে খাচ্ছে বলে বাজার ব্যবসায়িরা অভিযোগ করেন। ব্যবসায়িরা আরও অভিযোগ করেন, সওজের দখল করা জায়গায় প্রায় ২৫০টি দোকান হবে। এ দোকান থেকে ১হাজার থেকে ৮হাজার টাকা করে নেতারা ভাড়া আদায় করে তোলে খাচ্ছেন। মোটা অংকের টাকা জামানত নিয়ে ভাড়া দিয়েছে।

সড়ক ও জনপথের জমিতে পান সুপারি ব্যবসয়ি সবুজ বলেন,হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনকে আমি,আমিরুল ও মালেক সহ ন্যুনতম ১হাজার সর্বোচ্চ ২হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাড়া দেই। কাঁচামাল ব্যবসায়ি আল আমীন ও চা দোকান দার  ইসমাঈল বলেন,অগ্রিম ৩৫হাজার টাকা দিয়ে শিমুলের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। যথাক্রমে ৬ ও ৪ হাজার টাকা করে প্রতিমাসে ভাড়া দেই। হবিরবাড়ি ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি আজিজুল ফারুক মুক্তা, বিএনপি নেতা ফালু, সাকিল ঢালী, রমজান ডিলার,সিরাজ,সুলতান ও সোহরাব হোসেন সহ দু’দলের মিলিয়ে ১২/১৫জনের একটি স্যান্ডিকেড সওজের জমি ভাড়া দিয়ে আড়াই শতাধিক দোকান থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৮লাখ টাকার অধিক ভাড়া আদায় করছে।

ফালুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন,আমি কোন দোকান ভাড়া তোলে খাইনা। আমি ১২/১৩বছর পূর্বে রাস্তার পাশের নিচু জমি ভরাট করে কাঠালের আড়ৎ দিয়ে ছিলাম।

তালুকাদার পরিবারের পক্ষ থেকে শাহাব উদ্দিন তালুকাদারের সাথে কথা বলেল তিনি জানান, আমার পিতা শামছুদ্দিন তালুকদার  আর,ও,আর মুলে হবিরবাড়ি মৌজার ৯নং দাগে ৩০একর ৫৩শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। ১৯৭৬সালে আমার পিতা ২একর ৮শতাংশ জমির ক্ষতি পুরণ দাবি করে  সরকারের পক্ষ থেকে যে টাকা বরাদ্দ হয় সেই টাকা আমার পিতা উত্তোলন করেননি। পরবর্তীতে ওই দাগের অন্য অংশ থেকে আমরা আমাদের জমি বুঝে নেই। এ বাজারে আমাদের কোন জমি নেই। বর্তমানে এ বাজারে যে জমি রয়েছে সেটি খাস ও বনের।
হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির আলমগীর হোসেন ভাড়ার টাকার কথা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন।

আজিজুল ফারুক মুক্তা বলেন, সওজ আমাদের ৭জনের কাছ থেকে ১৯শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করেছে। আমরা এখনো পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও অধিগ্রহনের টাকা পাইনি। কাজেই আমরা আমাদের ঘর থেকে ভাড়া নিচ্ছি।

হবিরবাড়ি রেঞ্জ অফিসার জামিল আহম্মেদ খান সিডস্টোর বাজার প্রায় পুরোটাই বনের দাবি করে বলেন, যারা বনের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে রেখেছে তা উচ্ছেদের প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথের ভারপ্রাপ্ত উপ-বিভাগী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বলেন,বর্তমানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কের ফোরলেন কাজ চলায় সড়ক ও জনপথ কারিগড়ি বিভাগের দেখা শুনার দায়িত্ব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল আহসান তালুকদার বলেন,আমি একটি অভিযোগ পেয়েছে। সেটি সহকারী কমিশনার(ভূমি)কে তদন্ত করার জন্য দেয়া হয়েছে। সেখানে উপজেলা প্রশাসনের কোন জমি না থাকায় আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। যদি সড়ক-জনপথ ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অবৈধ উচ্ছেদের আবেদন করলে সেটি খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা করা হবে।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই