তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ ছাদে নিচে ১১হাজার ছাত্রছাত্রী পাঠদান

গৌরীপুরে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ ছাদে নিচে ১১হাজার ছাত্রছাত্রী পাঠদান
[ভালুকা ডট কম : ২৮ মে]
ধুরুধুরু বুক কাঁপে, কখন ভেঙ্গে পড়ে! ছাদের পলেস্তার উঠে পড়েছে। ভিমে ফাটল। দেয়ালের পলেস্তার উঠে গেছে, খসে পড়চ্ছে ইট। এমনি দৃশ্য চোখে পড়লো বোকাইনগর ইউনিয়নের গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রায় ৩শ ছাত্রছাত্রী নিয়ে আকাশে বিদ্যুৎ চমকালেই চমকে উঠেন প্রধান শিক্ষক শলৎমনি। দ্বিতল ভবনের দাবি জানান ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি মো. হাফিজ উদ্দিনেরও। এই ইউনিয়নের গড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরো নাজুক। বর্ষায় বসার ঠাঁই নেই, রোদেও বসতে পারেনা শিক্ষার্থীরা।

দেশের আলোচিত সেই কান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজও ভবন নির্মিত হয়নি। মাত্র ৫বছরেই নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগই ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে। রামগোপালপুর ইউনিয়নের এ বিদ্যালয়টিতে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫০হাজার টাকা। এ যেন হাতির খোরাকের স্থলে পিঁপিলিকার খাদ্য। বিদ্যালয়ে সাড়ে ৪শ ছাত্রছাত্রী খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। একই অবস্থায় পৌর শহরের মুকুল নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ভূমিকম্পের কারণে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাঠদানের ঠাঁই মিলেছে এখন গাছতলা। গৌরীপুর ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ছুঁষে পানি পড়ে। পলেস্তার উঠে গেছে। খুঁটিও নড়বড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে উপজেলা শিক্ষা বিভাগ জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরার্জীণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৩টি। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ১১ হাজার ছাত্রছাত্রী চরম নিরাপত্তাহীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। সাভারের রানাপ্লাজায় ভবন ধসের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মাঝে বহুতল ভবন নিয়ে এ আতঙ্ক চরম আকার ধারণ করেছে। প্রধান শিক্ষক ক্লাস করাতে চাইলেও অভিভাবকদের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

সুরযবালা পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজত হোসেন জানান, দ্বিতীয় ভবনের ছাদে ফাটল ও ভিমের রড বেড়িয়ে আসায় অভিভাবকদের আপত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ১৯৯৫সনে নূতন ভবনটি নির্মাণের পর থেকে ছাদ ছুঁষে পানি পড়ে। মাত্র ৫বছরেই ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগের তদন্ত শেষে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় কোন অবস্থাতেই ক্লাস না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪শ ১৮জন। প্রতিবছর সমাপনি পরীক্ষা অংশ নিয়ে শতভাগ পাস ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ রয়েছে সাধারণ বৃত্তি ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি। তবে ওরা ক্লাস করে নীল আকাশের নিচে!

দরজা-জানালা নেই। মরিচাধরা টিনের ছিদ্র দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। বসার আসবাবপত্র নেই। কষ্টে আনন্দের শিক্ষা কার্যক্রম নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। আকাশে মেঘ জমলেই বন্ধ হয়ে যায় কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। চারপাশে বেড়াও নেই। এ বিদ্যালয়টির নাম গড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে কি! সরজমিনে এমন দৃশ্যে বিস্মৃত সবাই। বিদ্যালয় গৃহের চারপাশের বেড়া নেই। মুরগী মাটি আঁচড়িয়ে তৈরী করেছে গর্ত। বসার কোন বেঞ্চ নেই। শিক্ষকদের বসার অফিস নেই।

শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে ছাত্রছাত্রী। বিদ্যালয়ে মাটিতে বসে ক্লাস, এ যেন ধুলাবালির সঙ্গে বসবাস। মাথায় বহন করে আনতে হয় বস্তা (ছট)। ছট নেই তাই শিক্ষার্থীরা সিমেন্ট, সার বা ধানচালের পরিত্যক্ত বস্তায় বসেই পড়তে হয়। বিদ্যালয়টির করুনদশার কথা উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলী খান পাঠান জানান, প্রায় এক বছর ধরেই ভবন হবে-হচ্ছে শোনা যাচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা বিভাগের জরাজীর্ণ তালিকায় রয়েছে তেলিহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাটেরকোনা, বর্ধনপাড়া, সোনাকান্দি, লংকাখোলা, শালীহর, সরযুবালা, ডেকুরা, নতুনবাজার, মনাটি, কান্দুলিয়া, গুজিখাঁ, বোরহান উদ্দিন, পেচাংগিয়া, প্রমোদবালা, চাঁনপুর, সাবদুল সরকার, মুক্তিযোদ্ধা, সুতিরপার, পরিত্যক্ত ভবনের তালিকায় রামগোপালপুর, সাতপাই, মুকুল নিকেতন, সুরযবালা ও কান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, মেরামত যোগ্য তিনটি ক্যাটাগরিতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে গড়পাড়া, কান্দুলিয়া, ইউসুফাবাদ বোরহান উদ্দিন, হিম্মতনগর, ঝাউগাই আলিম উদ্দিন, ডাউকী, বেকারকান্দা, নিজমাওহা, আহসানপুর, কলাবাগান মুক্তিযোদ্ধা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মাওহা, বর্ধনপাড়া, ধুরুয়া, তাঁতকুড়া, পুম্বাইল, বায়ড়াউড়া, বিষমপুর, রামচন্দ্রনগর, গোবিন্দনগর, উজান কাশিয়ারচর, নওয়াপাড়া, ঝরাজীর্ণ মেরামতযোগ্য মাওহার ২নং ভবন, মরিচালী, পশ্চিম ভালুকা, তাঁতকুড়া ২নং ভবন, দারিয়াপুর, ভাটিপাড়া, বোকাইনগর, গাভীশিমুল, চকপাড়া, ডেকুরা, রামচন্দ্রনগর ২নং ভবন, গোবিন্দনগর ২নং ভবন, আহসানপুর ১নং ও ৩নং ভবন। ৫ নভেম্বর/১৫ একপত্রে পৌর শহরের মুকুল নিকেতন পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ব্যবহার নিরাপদ নয়, সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ক্লাস না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হক। ভুমিকম্পে দেয়ালে ফাটল ও ভিম ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ক্লাসে প্রায়শঃ ছাত্রছাত্রীদের মাথায় পলেস্তার খসে পড়ছে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুক্লা রানী সরকার জানান, গাছতলায় পাটের ছটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। শিশু শ্রেণিতে ১৫জন, ১ম শ্রেণিতে ১৮জন, ২য় শ্রেণিতে ২৪জন, ৩য় শ্রেণিতে ৩৫জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২৪জন ও ৫ম শ্রেণিতে ১৫জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে।

উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের পেচাঙ্গিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণিতে ২৮জন, ১ম ২য় শ্রেণিতে ৪১জন, ৩য় শ্রেণিতে ৩৫জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২০জন ও ৫ম শ্রেণিতে ১৪জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নির্মিত বিদ্যালয়ের ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ। ভিমে ফাটল ধরেছে। পলেস্তার ধসে পড়চ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে পাঠদানে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ জানান, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কয়েকদফা পত্র দেয়া হয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই