তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

প্রবীণের জীবন তবু তারুণ্যের বলিয়ানে আজও মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন

বিশ্ব প্রবীণ দিবস
প্রবীণের জীবন তবু তারুণ্যের বলিয়ানে আজও মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন
[ভালুকা ডট কম : ৩০ সেপ্টেম্বর]
‘ছিঃ ঘৃণা করে’! ডাক্তার মানেই সেবা; আজ কসাই-ব্যবসায়ী হচ্ছে কেন? তরুণ যাঁরা আজ ডাক্তার হচ্ছে। তাদের সেবার মনোভাব শূন্যতায় পৌঁছে যাচ্ছে। এমন তো আশা করি নাই! এভাবেই হতাশা ব্যক্ত করেন ডাঃ আব্দুল মান্নান। যিনি আজ শত বর্ষ ছুঁইছুঁই করছেন। নিভৃত পল্লীতে বিনামূল্যে ৫৭বছর যাবত চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। ইতিহাসের অসংখ্য ঘটনার আজ তিনি সাক্ষী।

ময়মনসিংহের গৌরৗপুর পৌর  শহরের নয়াপাড়ায় শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের ভিড় ঠেলে কক্ষে প্রবেশ করলেও, কথা বলার সাহস পাচ্ছি না। রোগী আর অসুস্থ্য মানুষের সেবায় নিয়োজিত। সকাল থেকে ৬৭জন রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন, বক্সে জমা পড়েছে মাত্র ৪৬০টাকা। কে কতো দিয়েছে, তা জানা নেই! বাসার সামনে টিনশেডে বসা আছেন ওষুধ কোম্পানীর কুড়িজনের মতো প্রতিনিধি। তাদের দেয়া উপঢৌকনও অসুস্থ্য মানুষদের দিয়ে দিচ্ছেন। নওয়াগাঁর ফয়েজ উদ্দিন (৫৪) আসতেই তিনি বলেন, আরে তোর বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। বুঝা গেল, স্মৃতির ভা-ারে পূর্ণ। সব যেন আয়নার মতো ভেসে উঠছে। বললেন ১৯৪৭ থেকে ২০১৬’র ইতিবৃত্ত। মানবসেবা দিলেও রাখেননি কোন পরিসংখ্যান। তবে অনুমেয় হয় প্রতিবছর ৩১০দিন করে ৫৭বছরে দৈনিক ৭৫জন হলে গড়ে ১৩লক্ষ ২৫হাজার ২৫০জনকে চিকিৎসা দেন। জীবনে সরকারি ছুটি আর উৎসবের দিনেও চিকিৎসা সেবা প্রদান বন্ধ করেননি। গৌরীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে গ্রন্থের লেখক রণজিৎ কর বলেন, তিনি শুধু বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র দেননি, অনেককে ওষুধ ক্রয়ের টাকাও দিয়েছেন। প্রকৃত অর্থেই একজন সমাজ হৈতষী। সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ গৌরীপুর যুগান্তর স্বজন সমাবেশ তাঁকে যুগান্তর স্বজন সম্মাননা, উপজেলা পরিষদ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও বীরঙ্গনা সখিনা সিলভার প্যান অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।

উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের শেখ আব্দুল করিম ও শেখ নেকজান বিবি’র পুত্র। শিক্ষার সনদে জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারি ১৯৩৬। আর.কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩সালে ম্যাট্টিক পাস করেন। ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৯৬০সাল থেকে এ চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। মায়ের আদেশ পালন করতেই তিনি জন্মভূমি ছেড়ে সরকারি চাকুরী বা দূরে চিকিৎসা সেবা দিতে যাননি। ১৯৫৯সালে শুরু করেন দাম্পত্যজীবন। ৫কন্যা ও ৩ পুত্রের জনক।

নতুন প্রজন্মের ডাক্তারদের জন্য লিখেছেন ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা বিভ্রাট ও প্রতিকার’ নামক একটি বই। আজ বয়সে তিনি প্রবীণ। মন, কর্ম ও মানুষের সেবার মানসিকতায় রয়েছে তারুণ্যের গতি। গৌরীপুর উপজেলা ঘোষণার পূর্বে তিনি ঈশ্বরগঞ্জ থানা পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন। ১৯৬৪সালে গৌরীপুর পৌরসভার কমিশনার ও ১৯৭৭সালে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর জড়িয়ে যান রাজনীতিতে ১৯৮৬সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এরপর বাকশাল’র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসাবে লাঙল প্রতিক নিয়ে মাঠে নামেন।
 
তারুণ্যদীপ্ত মনের এই প্রবীণ মানুষটি গৌরীপুর সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা, গৌরীপুরকে উপজেলায় উন্নিতকরণ, কৃষি ব্যাংকের শাখা, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, স্থাপনসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।

শনিবার (০১ অক্টোবর) বিশ্ব প্রবীণ দিবসের এই দিনে চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা না করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী-স্বাস্থ্যমন্ত্রী’র বলার পরেও গ্রামে-ইউনিয়নে সরকারের ভবন আছে, সেখানে ডাক্তার থাকছেন না। মানুষ সেবা পাচ্ছে না। এর প্রতিকার জরুরী। ডাক্তার হয়েই টাকা অর্জনে শহরে যাচ্ছে, এটা দুঃখজনক।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই