তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুর হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা এখন বেহাল

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণার এক বছর অতিক্রম
গৌরীপুর হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা এখন বেহাল
[ভালুকা ডট কম : ১৮ জানুয়ারী]
গ্রামে গরিব কৃষক ও মধ্যবিত্ত মানুষ থাকে, তাদের সেবা দিতে হবে। আমি আপনাদের যন্ত্রপাতি দিব, ভবন দিব আপনাদের দু’হাত দিয়ে মমতা দিয়ে শুধু সেবা দিবেন। তাদেরকে যেন কখনও উপেক্ষা করা না হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবন নির্মিত হয়েছে। যে ডাক্তার-যন্ত্রপাতি দরকার তার ব্যবস্থা করে দিব,ইনশাল্লাহ।

যেন এখানে সুন্দরভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা চলে। সুন্দর বিল্ডিং থাকলেই হবে না, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২০১৬সালের ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চার লাখ মানুষের প্রাণের দাবি ৫০ শয্যার হাসপাতালের ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। সেই দিন মঞ্চে উপস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জিডিকে তাৎক্ষনিক অ্যাম্বুলেন্স চালক দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ এক বছর অতিক্রম করলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি আরো ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে এ হাসপাতালে নতুন অ্যাম্বুলেন্স ও চালকও দেয়া হবে। দীর্ঘদিনের চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষ স্বপ্ন পূরণে ভাগ্যবদলের দূত হিসাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আগমনকে বরণ করেছিলো। ২০১২সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০শয্যার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর  কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি। সেই ভবনের উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি ৫০শয্যার কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা।

রোববার (১৫ জানুয়ারি/১৭) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু বিভাগে ডাক্তারের বদলে চিকিৎসা দিচ্ছেন দুইজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। টিকেট কাউন্টারে শূন্য থেকে পাঁচ মাসের শিশু গেলেই পাঠানো হচ্ছে ১২নং কক্ষে। টিকেট প্রদানকারী হার্বার সহকারী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ১২নং ওয়ার্ডে ডাক্তার আছে। নার্সের কথা বলতেই তিনি বলেন, তারা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশুদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ওই কক্ষে চিকিৎসা প্রদানকারী সিনিয়র স্টাফ নার্স শরিফা খাতুন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রোকেয়া আক্তার আগত রোগীদের টিকেট দেখছেন আর হরহামেশা লিখছেন ওষুধ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দু’জনে ৩৩জন রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেন।

জনবল সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালের ভিতরে আন্ত্যন্তরীন পরীক্ষা কেন্দ্র। ৫০শয্যা হাসপাতালের সাইন বোর্ড থাকলেও এ হাসপাতালের জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা চালু হয়নি। ১০টি ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে ডাক্তার দীর্ঘদিন যাবতই অনুপস্থিত থাকচ্ছেন। এসব ডাক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সংকটের কারণে সপ্তাহে দু’একদিন চিকিৎসা দিয়েই পাচ্ছেন পুরো মাসের বেতন।

এ হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের অভিভাবকখ্যাত ‘আবাসিক মেডিকেল অফিসার’ পদটি ১৪বছর ধরে শূন্য। ৮বছর যাবত এক্স-মেশিন নষ্ট। চালক সংকটে আড়াই বছর ধরে গ্যারেজে থাকা অ্যাম্বুলেন্সও মারা যাচ্ছে। যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটে প্যাথলজি প্রায় অচল। জেনারেটরটি একদিনও জ্বলেনি। বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে অবস্থা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ২৩বছর যাবত জুনিয়র কনসালটেন্স (এ্যানেসথেশিয়া) ডাক্তারের পদটি পূরণ হয়নি। সার্জারী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্স ৮বছর, নার্সিং সুপারভাইজার ও ৩জন মেডিকেল অফিসার ১বছর, পরিসংখ্যানবিদ ৬বছর যাবত শূন্য। শূন্য রয়েছে গুদাম রক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর, ফার্মাস্টি, এমটি (ল্যাব), অ্যাম্বুলেন্স চালক, স্বাস্থ্য সহকারী, নিরাপত্তা গার্ড, ঝাড়–দারসহ ২৯টি পদ।

এ হাসপাতালের মালি কলিম উদ্দিন ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে, সহকারী ডেন্টার সার্জন ডাঃ আরমিনা আক্তার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে, এসএসিএমও মোঃ আবুল হোসেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার কেদারপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে, ফার্মাসিস্ট মোঃ মজিবুর রহমান পরানগঞ্জ হাসপাতালে, এএইচআই রওশন আরা বানু শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা হাসপাতালে আর অপরজন সুফিয়া খাতুন মুক্তাগাছা হাসপাতালে, জুনিয়ার মেকানিক মোঃ সাইফুল ইসলাম প্রেষণে কাজ করেন ফুলপুর হাসপাতালে। অন্যত্র সেবা দিয়েও এই ৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতি মাসে প্রায় ২লক্ষ টাকা বেতন গৌরীপুরে উত্তোলন করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওইদিন আরো বলেন, যার বাড়ি যেখানে সেখানেই পোস্টিং দেয়া হয়েছে তাই গ্রামেগঞ্জে ডাক্তার আছে। গ্রামের মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গ্রামে ডাক্তার রাখার ব্যবস্থা করার জন্য সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। তবে এ নির্দেশও কার্যকর হয়নি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আগমনকালীন সময়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ গোলাম রহমান ভূইয়া ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ কাউছার নিগার মায়া বঞ্চিত মানুষের ভরসা ছিলেন। তারাও প্রমোশনে অন্যত্র চলে গেছেন। দন্তবিভাগের দরজা খোলা হলেও আজও মেডিকেল অফিসার যোগদান করেননি।

৫০শয্যা হাসপাতালের শুধুমাত্র ২০টি বেড এসেছে। জনবল ও যন্ত্রপাতি কিছুই আসেনি উল্লেখ করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এনামুল কবীর বলেন, শিশুদের পোষ্টিসহ নানা বিষয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্সরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে। সবগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত সেবাদান হচ্ছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই