তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানার বিডিআর ট্রাজেডির ৮ম বার্ষিকী

২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানার বিডিআর ট্রাজেডির ৮ম বার্ষিকী
[ভালুকা ডট কম : ২২ ফেব্রুয়ারী]
২৫ ফেব্রুয়ারী ১৭ পিলখানা ট্রাজেডির ৮ম বার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিন ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-র্সাবভৌমত্ব রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদশকে একটি অর্কাযকর রাষ্ট্রে পরিনত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল।

ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের র্দীঘ প্রায় ২০০ বছররে ঐতিহাসিক বিডিআর চেতনাকে ধ্বংস করেছে। ১৯৭১‘র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ র্মাচ যে বাহিনী প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছেলি সেই বাহিনীকে করেেছ কলঙ্কিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এতজন সেনাকর্মকর্তাকে নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায়।

জাতি হিসেবে আমাদের দূর্ভাগ্য, র্দীঘ ৪৫বছরেও আমরা আমাদরে ঘর সামলাতে সক্ষম হই নাই। পারিনি শক্ত মাটিতে পা রেখে চলতে। কে আমাদের বন্ধু এবং কে আমাদের শত্রু তাও সঠকিভাবে নির্নয় করতে পারিনি। ইতিহাস বলে ১৭৫৭ সালরে ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে যুদ্ধের নামে যে প্রহসন সংগঠিত হয়, তার অদূরে হাজারো জনতা আগ্রহ ভরে দেখেছিল কি হচ্ছে। দেখতে দেখতে বাংলার স্বাধীনতার লাল র্সূয্য অস্তমিত হয়। র্দীঘ প্রায় ২০০ বছর লেগেছে সেই  সূর্য্য ছিনিয়ে আনতে। আবারো পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে আরেকটি রক্তক্ষয়ি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় লাল সবুজের পতাকা আর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। দুঃখজনক হলওে সত্য যে, রাষ্ট্রের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে, সেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-র্সাবভৌমত্ব আজ শুকুণীর কালো থাবায় ক্ষত-বিক্ষত।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহের যে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল তা যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর চরম আঘাত তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। ঐদিন বিডিআর সদর দফতরে সেনাকর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে যে বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পূরনে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে ২০-২৫ বছর লেগে যাবে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা সে কাজটি সূচারু ভাবে সম্পাদন করতে পেরেছিল তাদের আভ্যন্তরিন দালালদের সহযোগীতায় আর আমাদের জাতীয় ঐক্য না থাকার সূযোগে। এই হত্যাকান্ড তো বাংলাদেশের কারো লাভ হয়নি, তাহলে লাভ হয়েছে কাদের? লাভ হয়েছে তাদেরই যারা বাংলাদেশকে দেখতে চায় একটি অর্কাযকর, দুর্বল, ভঙ্গুর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে। সেনাকর্মকর্তাদের ওপর পরিচালিত এই গণহত্যায় নিঃসন্দেহে দুর্বল হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষার জনগনের আস্থার স্থল বিডিআর। বিডিআরের বীরত্ব ও সাহসীকতা সর্বজনবিদিত।

২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ নিরাপত্তা জোরদার করে তুলে আমদানি-রফতানিতে প্রতবিন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। এঘটনা থেকে প্রশ্ন উদ্বগে হওয়াটা স্বাভাবিক তাহলে কি ভারত জানত পরদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন ঘটনা ঘটছে ? স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশ কখনো মাথা সোজা করে দাড়াতে পারেনি। গুটি কয়েক ভারতীয় পাচাঁটা দালাল বাদে ভারতের অব্যাহত সীমান্ত-সাংস্কৃতকি-পানি-বাণিজ্য আগ্রাসণের কারণে দেশবাসী মনেই করে  ভারত কখনো আমাদের সৎ প্রতবিশীর পরিচয় দিতে পারেনি।

স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পনিত করার যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল ধাপে ধাপে সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন চলছে। ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় নির্মম হত্যাকান্ড সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ মাত্র। এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত্রের ধারাবাহিকতায়ই বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশ সেনাবহিনী ও বিডিআর দু‘টোকেই দর্বল করে দিতে সক্ষম হয়ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের এতগুলো কর্মকর্তাকে একসাথে হত্যা কোন কাকতালীয় ঘটনা কিংবার দুর্ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করার কোন সুযোগ নেই। ৬৩জন সামরকি কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মেধা ও সক্ষমতাকে বাঁধাগ্রস্থ করা হয়েছে। অপর দিকে যে বিডিআর স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ ৩৭বছর ধরে অতন্ত্র প্রহরীরুপে সীমান্তে বিদেশী আগ্রাসন সফল ভাবে প্রতহিত করেছে, সেই  প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব¡ মুছে দিয়েছে। ঐহিত্যবাহী বিডিআর এখন বিজিবি নাম ধারন করেছে। আর সীমান্তে জোরদার হয়েছে ভারতীয় বিএসএফের আগ্রাসন। এখন সীমান্তে প্রতিনিয়ত আমাদের নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করছে ভারতীয় বিএএসএফ। হত্যার পর ফেলানীর লাশ কাঁটা তাঁরে ঝুলিয়ে রেখে উল্লাশ করছে বিএএসএফ।

পিলখানার ঘটনা যে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবার জন্যই যে ঘটানো হয়েছিল তা আজ দিবালোকের মতই স্পষ্ট। এটি ছিল বাংলাদেশের র্সাবভৌমত্বের বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় ষড়যন্ত্র। এক ধলনের প্রতিশোধও বটে।

বিডিআর ট্রাজিডির ৮বছর হলেও এখন পর্যন্ত এর প্রকৃত রহস্য জাতি জানতে পারেনি। দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হলেও একটি তদন্ত কমিটির আংশিক প্রকাশ হলেও পুরোটা আজও জাতি জানে না। সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরিন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জাতি জানে না। দুঃখ ৮বছরে জাতীয়ভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারীকে শোক দিবস হিসাবে পালন করতে পারিনি আমরা। রাজনৈতিক দলগুলো এখনও এই বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। প্রকারান্তরে ২৫ ফেব্রুয়ারী নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলগুলোর ভুমিকার দেখলে মনে হয় ভারত অখুশি হতে পারে বলেই তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে চলেন।

২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানা ট্রাজেডির গতানুগতিক বিচারে কি প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে ? জাতির স্বার্থেই এই ঘটনার সাথে জিড়িতদের চহ্নিত করা উচিত। চিহ্নিত করে যদি অপরাধীদের বিচার করা সম্ভব না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আজকের নেতৃত্বে ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। জাতির এই কলঙ্কজনক অধ্যায়কে মুছে ফেলতে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এতগুলো চৌকশ কর্মকর্তাকে একদিনে হত্যা করা জাতির স্বাধীন অস্তিত্বের জন্য কত বড় আঘাত তা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। এই ঘটনা নিরব পলাশী হিসাবে যেন চিহ্নিত না হয়। জাতীয় ইতিহাসের এই পলাশীতে কারা নব্য মীরজাফর, কারা নব্য জগৎশেঠ-রাজবল্লব-ক্লাইভ তাদের চিহ্নিত করতে হবে। গত আট বছরেও সেটা চিহ্নিত করতে না পারাও কিন্তু প্রশ্নবদ্ধি ? এই রাষ্ট্রঘাতি চক্রান্ত্রের ভয়বহতা যদি আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পারি তাহলে জাতি আমাদের কিছুতেই ক্ষমা করবে না। ২৫ ফেব্রুয়ারী শুধুমাত্র একটি হত্যাকান্ড নয় এটি হলো বাংলাদেশের সার্বভৌত্বের উপর চরম আঘাত।

বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক পাতাই রক্তে রঞ্জিত। অনেক রক্ত আমরা দেখেছি, দেখেছি উম্মুক্ত প্রান্তরে শহরে রাজপথে কিংবার সেনাছাউনীতে আর কত উচ্ছৃঙ্খলতা, হানাহানি, কত রক্তক্ষরণ বাকী ? এর শেষ হবে কোথায় ? পিলখানার ট্রাজেডির কলঙ্ক কবে মুছবে ? আর কত নতজানু হতে হবে জাতি কে ? ক্ষমতায় যেতে কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকতে শাসকগোষ্ঠীর ভারতীয় প্রভুদের পদলেহনের দৃশ্য আর কত কাল দেখবে জাতি ? আমাদের শাসকগোষ্ঠি মাথা নত করতে করতে এখন মাটিতে মাথা ছুয়ে ফেলছে বলেই ২৫ ফেব্রুয়ারীকে দায়সারা ভাবে স্মরণ করতে চাইছি, কেন এই দিনটি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করতে পারছি না ?

আমরা যদি ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় যেতে আধিপত্যবাদী ও আগ্রাসী শক্তির কাছে নিজেদের বিবেক-বিবেচনা বন্ধক দেই, যদি আমরা পরাভূত হই সেই অপশক্তি ও অপশক্তির দালালদের কাছে আপস করে ফেলি, তাহলে আমি নিশ্চিত ২৫ ফেব্রুয়ারীর চাইতে ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। অপশক্তির লালনকারীরা ধারক ও বাহকরা আরও উৎসাহতি হয়ে তাদরে র্স্বাথ চরিতার্থে আরও ভয়ংকর ঘটনা ঘঁটবে এই কথা দ্বীধাহীনভাবে বলা যায়। আর যারা আপোষ করবেন তাদের স্থান হবে ইতিহাসের আস্তাকুরে। আপোষ করে হয়ত ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে কিংবা কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে কিন্তু ইতহাসে মীরজাফর হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকতে হবে।

আজ আমাদের ঐ আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজ প্রয়োজন, জরুরী প্রয়োজন, একান্ত প্রয়োজন আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য। দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্বে উঠে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার মোহমুক্ত হয়ে সবাই সবাইকে নিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত হওয়া, নিবেদিত হওয়া। মনে রাখতে হবে দেশ থাকলে সবাই থাকবেন। যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় তার ক্ষয় নাই, পরাজয় নাই। আজ প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানা ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা গ্রহন করে জাতীয় এজেন্ডা নির্ধারন করা। আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানা ট্রাজেডি স্মরণে জাতীয় শোক দবিস পালন করি। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই