তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরের আতাইকুলা গণহত্যা দিবস

রাণীনগরের আতাইকুলা গণহত্যা দিবস
[ভালুকা ডট কম : ২৪ এপ্রিল]
২৫ এপ্রিল রাণীনগর আতাইকুলা গণহত্যা দিবস। এই দিনটি নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রাম বাসির কাছে এক স্মরণীয় দিন। মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা এদিন। ২৫এপ্রিল রাণীনগরে যেমন শোকের ছায়া নেমে আসে তেমনি এই দিনটিকে নিয়ে এলাকাবাসি গর্ব বোধ করেন।

এদিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামে গণহত্যা চালায়। নিরস্ত্র-নিরপরাধ মুক্তিকামি গ্রামবাসীর উপর চালিয়ে ছিল হত্যা, নারী নির্যাতন, লুটপাত, অগ্নিসংযোগের মত বর্বর হামলা। এদেশীয় স্থাণীয় রাজাকার আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে ওই গ্রামের যুগেশ্বর পালের বাড়ির বৈঠক খানার সামনের আঙ্গিনায়  যগেশ্বর ও তার পুত্র, ভাতিজা সহ ৫২ জন গ্রাম বাসীকে “জয় বাংলা বলতা হ্যায়, নৌকা মে ভোট দিতা হ্যায়” এই স্লোগান দিতে দিতে পাক-সেনারা মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। সে এক বীভৎস করুণ বেদনাদায়ক দৃশ্য মনে করে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামবাসি আজও আতংকে কেঁপে উঠে।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ০৭ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে  রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরে মিরাট ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। গ্রামবাসির অপরাধ ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধকে সমর্থন করে অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে এদেশকে রক্ষা করার জন্য। ১৯৭১ সালে ২৫ এপ্রিল হানাদার খানসেনা ২’শতাধিক পাক-বাহিনীর নরপশুর একটি দল ওই দিন সকাল অনুমান ৯টার দিকে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের পূর্বদিকে কুজাইল বাজারে অবস্থান নিয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মত পাকিস্তানের পতাকা হাতে নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ধীরে ধীরে নদী পার হয়ে আতাইকুলা গ্রাম ঘিরে ফেলে। অবস্থা বাগতিক দেখে ওই গ্রামের কিছু লোক বাড়ি-ঘর ফেলে রেখে নারী-পুরুষ যুবক-যুবতীরা যে যার মনে পালানোর চেষ্ঠা করলেও পাক-হানাদার বাহিনীর স্থাণীয় রাজাকার আলবদররা তাদেরকে বাঁধা দেয়। হতভাগ্য পালপাড়া গ্রামবাসি বুঝতে পারলো পরিবারের সবাইকে আজ মরতে হবে। ঘটে ছিলও তাই। পালপাড়া গ্রামের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যগেশ্বর পালের বৈঠকখানার আঙ্গিনায় জরো করে।

এরপর শুরু হয় পাক-সেনাদের বর্বরতা নির্যাতন। সারাদিন ধরে চলে ঘরে ঘরে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষন অগ্নিসংযোগসহ মর্মস্পর্শী নির্যাতন। সারা দিনের নিমর্ম অত্যাচারে গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে আসে। নরপশুদের হাতে বন্দী নর-নারী শিশুরা পাথর হয়ে যায়। যার যা কিছূ টাকা-কড়ি, সোনা-দানা সহ সব কিছু তুলে দিলেও শেষ পর্যন্ত তাদের মন গলাতে পারেনি গ্রামবাসি। দিনের শেষ বিকেলে বৈঠকখানার আঙ্গিনায় বন্দীদের ওপর চালালো উপর্যুপরি মেশিনগানের ব্রাশফায়ার। গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিলো নিরীহ গ্রামবাসিদের। ঘটনাস্থলে শহীদ হন শ্রী গবিন্দ্রনাথ চরন পাল (৩৫), জগেনন্দ্রনাথ (৪০), শুরেশ্বর পাল (৪১),তার পুত্র প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার পাল(২৫), শুনিল কুমার পালসহ  শেষ হয়ে গেল ৫২টি তাজা প্রান।

ঘটনাক্রমে ওইদিন গুরত্বর আহত অবস্থায় প্রানে রক্ষাপায়, শ্রী সুনীল চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল, দেশ স্বাধীনের অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের খোঁজ-খবরসহ এখানকার গণকবরের উন্নয়নের কেউ ভূমিকা রাখেনি। তাদের দাবি শেষ মূহূতে হলেও শহীদদের স্বীকৃতি, গণকবরটি সংরক্ষন ও বীরঙ্গনাদের তালিকা করে রাস্টীয় সম্মানী প্রদানের দাবি জানান।

শহীদ পরিবারের সদস্য গৌতম পাল জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচী গ্রহণ না করলেও আমরা পারিবারিক ভাবেই সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদের স্মৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, গীতাপাঠ ও প্রসাদ বিতরণ হবে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাড: ইসমাইল হোসেন জানান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে একই ভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই