তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরে অসময়ে ফুটচ্ছে দুর্লভ নাগ লিঙ্গম

গৌরীপুরে অসময়ে ফুটচ্ছে দুর্লভ নাগ লিঙ্গম
[ভালুকা ডট কম : ২৬ এপ্রিল]
কান্ডে ফুটচ্ছে ফুল। ফুল উজ্জ্বল গোলাপী রঙের। সৌরভ ছড়াচ্ছে। পাপড়ি গোলাকার কু-লী পাকানো। ফুটন্ত ফুলের পরাগ কেশর দেখতে সাপের ফনার মতো। আর এ কারণেই গাছটির নাম নাগ লিঙ্গম। এটি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ। তবে ফল গোলাকার বলের ন্যায়। রঙ সফেদার। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রায় দেড়শ বছরের পুরো এ বৃক্ষ।

এটি আমাজান অঞ্চলের। শরৎ মৌসুমে সাধারণ ফুল আসে। তবে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ফুল যেন আগেই ফুটচ্ছে। অসময়ে হলেও গ্রীষ্মের তাপদাহে এ ফুলের সুগন্ধে চারপাশ মৌ-মৌ করছে। গৌরীপুর থানার নূতন ভবনের পাশেই এ বৃক্ষে অবস্থান। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে এ ফুলের স্পর্শ থেকে ছুটে আসছেন পর্যটক। পথচারীদেরও যেন আটকে এর ঘ্রাণ।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে-এ বৃক্ষের বয়স ২শ’র হাতছানি দিচ্ছে। কালীপুরের তৎকালীন জমিদার উপেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় দেড়শ বছর আগে অনেকগুলো রয়েল পামগাছের সাথে ভারত থেকে এই নাগ লিঙ্গম গাছের চারা আনেন। গাছটি জমিদারের বাসভবনে রোপন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, হাতির পেটের অসুখের প্রতিষেধক হিসেবে ওই গাছের কচি পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখত।

দেশের প্রতিকূল আবহাওয়া বাঁচিয়ে রাখার জন্য জমিদার আমাজান অঞ্চল থেকে এ গাছটি এনে রোপন করেন। এলাকাবাসী জানান, এ গাছের ফুল স্বয়ং নাগ-নাগিনী পাহারা দেয়। এ কুসংস্কারের কারণেই প্রতিবছর নাগ পঞ্চমিতে এ গাছের গোড়ায় পূজা অর্চনা করা হতো। নাগকে সন্তুষ্ট করতে জমিদার আমলে এ প্রথা চালু ছিলো। বর্তমান সাপের ভয়ে গাছের সন্নিকটে সহসায় কেউ যেতে চায় না।

দেশ ভাগের পর জমিদাররা ভারতে চলে গেলে পরিত্যক্ত এ বাড়িতে বর্তমানে গৌরীপুর থানার কার্যক্রম চলছে। গাছটি প্রতি বছর শরৎকালে ফুল ফুটিয়ে সৌরভ ছড়ায়। তবে এবছরও এখনও ফুটচ্ছে, ঝরচ্ছে, ছাড়চ্ছে ঘ্রাণ।

কান্ডে ফুল ফুটলেও শাখা-প্রশাখায় কোন ফুল ফোটে না। কয়েকবারই বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদনের চেষ্টাও করে এখন সফল হয়নি। ফলের ওজন প্রায় ২ কেজি। দেখতে সুন্দর হলেও ফলের স্বাদ খুবই তিক্ত। পশু-পাখিও এই ফল খায় না। বৃক্ষের পাতার রং গাঢ় সবুজ। বহুদূর থেকে ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। কিন্তু ফুলের সুবাস তীব্র নয়।

গৌরীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক আজহারুল হক বলেন, দূর্লভ নাগ লিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে। এর ফুলের কলি দিয়ে রস তৈরি করে খাওয়ালে প্রসূতির সন্তান প্রসব সহজ হয়। এর মাঝবয়সী পাতা দিয়ে তৈরি পেস্ট দাঁতের পাইরিয়া ও ক্ষয় রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর। এ গাছের বাকল দিয়ে বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এ গাছের কাঠ অত্যন্ত মজবুত। লালচে বাদামি রঙের এ কাঠ রেলের স্লিপারসহ ভারি কাজে লোহার পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।

তিনি আরো জানান, এত সব গুণ থাকা স্বত্বেও শুধু প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে এ দেশে নাগ লিঙ্গম গাছের বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচ- উঞ্চ অঞ্চলের গাছ বলে এ গাছের বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম এ দেশে হয় না। তবে গুটি কলাম করে গাছের বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি জানান। প্রায় ২৫ বছর আগে এক বৃক্ষ জরিপে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণ হিসেব করেছেন বাংলাদেশে ৫২টি নাগেশ্বর বৃক্ষ আছে। তবে বর্তমানে এর সংখ্যা কমে ১৬’তে দাঁড়িয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই