তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

চিকুনগুনিয়া জ্বরে আতঙ্ক নয়

চিকুনগুনিয়া জ্বরে আতঙ্ক নয়
[ভালুকা ডট কম : ২২ জুন]
চিকনগুনিয়া একটি মশা বাহিত ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। রোগটি পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ তাঞ্জানিয়াতে সনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মায়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে এবং পরবর্তীতে ২০১১ সালে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় চিকুনগুনিয়া রোগ দেখা যায়। ইদানীং রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে এ রোগটি দেখা যাচ্ছে। শরীরের গিঁট arthralgia হয়ে বাঁকা হয়ে যায় তাই রোগটিকে চিকুনগুনিয়া নামে ডাকা হয়।

উপসর্গ ও লক্ষণ:
চিকনগুনিয়ায় ডেঙ্গু ও জিকার মতোই হঠাৎ তীব্র জ্বর ও গিঁটে ব্যথা মাংসপেশীতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমিবমি ভাব, সর্দিকাশি, চোখ জ্বালাপোড়া, অবসাদ ও শরীরে লালচে দানা দেখা যায়। তীব্র গিঁট ব্যথায় রোগী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। চিকুনগুনিয়া জ্বর তিন চার দিন থাকে। গিঁট ব্যথা কয়েকদিন থেকে দীর্ঘায়িত হয়ে কয়েক সপ্তাহ বা মাস হতে পারে। বেশীর ভাগ রোগী সম্পুর্ণ ভাল হয়ে যায়। কিন্তু কিছু সংখ্যক রোগীর গিঁট ব্যথা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কোন জটিলতা এযাবৎ লক্ষ্য করা যায়নি। সাধারণত চিকুনগুনিয়াতে কোন মানুষ মারা যায়না। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রে বৃদ্ধাবস্থায় এ রোগ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অনেকসময়  উপসর্গ এতটাই মৃদু যে রোগটি ধরা পড়েনা অথবা ডেঙ্গু বা জিকা ভাইরাস জ্বর বলে মনে করা হয়।

চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়ায়:
Chikungunya ভাইরাসটি আক্রান্ত  মানুষ থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে স্ত্রী মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। সবচেয়ে বেশী A. aegypti এবং A. albopictus প্রজাতির মশা দায়ী। এ দুটি মশা ডেঙ্গু জ্বরও ছড়ায়। মশাগুলি দিনের বেলায় কামড়ায়। তবে ভোরে ও সন্ধ্যায় বেশী কামড়ায়। উভয় প্রজাতি ঘরের বাইরে অবস্থানকালে কামড়ায়। কিন্তু A. aegypti ঘরের ভিতরেও কামড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তদানেও অন্য মানুষের শরীরে এ রোগ ছড়াতে পারে। মশার কামড়ের দুই থেকে বার দিনের মধ্যে রোগীর উপসর্গ দেখা দেয়। তবে চার থেকে আট দিনের মধ্যে বেশীর ভাগ রোগীদের উপসর্গ প্রকাশ পায়।

রোগ নিরূপণ :
উপসর্গ শুরুর পর serological (ELISA) এবং virological (RT-PCR) পরীক্ষা করা হয়। অনেকসময় অন্যান্য জ্বর যেমন ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গু জ্বর থেকে চিকুনগুনিয়া জ্বর আলাদা করতে রক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন।

চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা:
চিকনগুনিয়ার সুনির্দিষ্ট কোন ওষুধ (এন্টিভাইরাল) নেই। এমনিতেই সেরে যায় এ রোগ। উপসর্গ ও লক্ষনভেদে চিকিৎসা দেওয়া হয়। জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হয়। এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ পরিহার করতে হবে। সেইসাথে রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিয় ও তরল খাবার দিতে হয়। এখন পর্যন্ত Chikungunya জ্বরের কোন vaccine বা টিকা আবিষ্কার  হয়নি। এ রোগ কারও একবার হলে জীবনে আর কখনো হয়না।

প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণ:
চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো মশার কামড় থেকে দূরে থাকা। শরীরের বেশির ভাগ অংশ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। গায়ে ফুল হাতা জামা, ফুল প্যান্ট ও জুতা-মোজা পরিধান করা। জানালায় নেট ব্যবহার, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা, রোগী ও সুস্থ মানুষ আলাদা মশারি ব্যবহার করা। এডিস মশার আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র হলো প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট ছোট ছোট পানি জমে থাকা পাত্র বা জলাধার যেমন মাটির পাত্র, কলসি, বালতি, ড্রাম, ফুলের টব, গাড়ীর টায়ার, বাক্স, ডাবের খোসা ইত্যাদি। প্রাদুর্ভাবের সময় মশা ও অপরিণত লার্ভা ধ্বংস করতে এসব জলাধারের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। সুত্র: World Health Organization



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই