তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

কবি জসীম উদ্দীনের অমর কাব্যগাঁথা 'নকশী কাঁথার মাঠ'

কবি জসীম উদ্দীনের অমর কাব্যগাঁথা 'নকশী কাঁথার মাঠ'
[ভালুকা ডট কম : ০৭ ডিসেম্বর]
বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য আখ্যানকাব্য 'নকশী কাঁথার মাঠ'। বাংলা ভাষায় রচিত, এর লেখক পল্লীকবি জসীম উদ্দীন। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত, জসীম উদ্দীনের এক অমর সৃষ্টি। নকশি কাঁথার মাঠ অবলম্বনে বাংলা ভাষায় সিনেমা, নাটক, গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হয়। কাব্যগ্রন্থটি E. M Milford ইংরেজিতে অনুবাদ করেন যার নাম "The field of embroidered quilt।" ইংরেজিতে অনূদিত এই লেখাটিও  বিশ্বনন্দিত। নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যটি রূপাই ও সাজু নামক দুই গ্রামীণ তরুণ-তরুণীর অবিনশ্বর প্রেমের করুণ কাহিনী! এরা দুজনই ছিল দুই বাস্তব চরিত্রের অধিকারী।

নকশী কাঁথার মাঠের নায়ক রূপাই গাঁয়ের ছেলে, কৃষ্ণকায়, কাঁধ পর্যন্ত তার চুল। সে ভালো ঘর বাঁধতে, লড়কি ও সড়কি চালাতে জানে। বাঁশের বাঁশিতে সুর দিতে ও ভালো গান গাইতে পারে। রূপাইয়ের সঙ্গে পাশের গ্রামের মেয়ে সাজুর ভালোবাসা হয়। রূপাইর মা রাবেয়া ও সাজুর মা আলেয়া ছিল ছোটবেলার সই। রূপাই ও সাজুদের গ্রামে একবার খুব খড়া দেখা দেয়। মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টি নামানোর গান গেয়ে মাগন তুলতে গিয়ে রূপাইর সাথে সাজুর প্রথম পরিচয় হয়। ভালবাসা, আর তারপর হয় বিয়ে। তারা সুখের সংসার পাতে। একদা গভীর রাতে চাঁদ ওঠে, আঙিনায় মাদুর পেতে সাজু রূপাইয়ের কোলে শুয়ে রয়। একসময় রূপাইর বাঁশির বাজানো থেমে যায়। কারণ, যাকে শোনানোর জন্য রূপাই এতদিন বাঁশি বাজিয়েছে, সেই মানুষটি এখন তারই ঘরে। সেদিন রাতের পূর্ণিমার আলোতে সাজুর রূপ দেখে দারুণ মুগ্ধ হয় রূপাই, কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে কী যেন এক সংশয় জেগে ওঠে। সে ভাবে, এত সুখ আমার সইবে তো! এক অজানা আশঙ্কায় তার অন্তরের বেদনাশ্রু সাজুর কোমল মুখের ওপর পড়ে! সাজুর ঘুম ভেঙে যায়।

স্বামীর অশ্রুধারা দেখে সাজু বলে, তুমি কাঁদছ কেন? রূপাই বলে, এক অজানা আশঙ্কায় কাঁদছি। এমন সময় হঠাৎ খবর আসে, বনগাঁয়ের লোকেরা রূপাইদের গাজনা-চরের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রূপাই সদলবলে ছুটে যায় লড়কি-সড়কি হাতে বনগাঁওদের প্রতিরোধ করতে। সেখানে হয় তুমুল ঝগড়া। বেশ কয়েকজন মানুষ মারা যায়! এর ফলে রূপাই ফেরারি হয়। সাজু রোজ মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে থাকে রূপাইয়ের পথপানে চেয়ে। একটা পাতা ঝরে পড়লেও বিরহিণী সাজু আলো নিয়ে ছুটে যায়, কোথায় তার প্রাণপ্রিয় রূপাই? দিন চলে যায়, গভীর রাতে রূপাই এসে দাঁড়ায় সাজুর সামনে। সাজু দেখে, রূপাইয়ের সারা গায়ে মাটি মাখা, রক্তের দাগ। সাজু তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তোমাকে আর যেতে দেবো না।’ রূপাই বলেছে, ‘আমার না যেয়ে উপায় নেই, যেতেই হবে। কেননা, আমি যদি ধরা পড়ি তাহলে আমার ফাঁসি হবে।’

ইহলোকে রূপাইয়ের সঙ্গে সাজুর এই ছিল শেষ দেখা। সাজু আর কী করবে, সেই প্রথম দেখা ও বৃষ্টির জন্য মাগন তোলার সময় দৃষ্টি বিনিময় থেকে শুরু করে তাদের জীবনের সব কথাকে এমনকি যে রাতে রূপাই জন্মের মতো চলে গেল, এসব অতীত স্মৃতি কাঁথার ওপর ফুটিয়ে তুলতে লাগলো সুঁই-সুতা দিয়ে। যেদিন সেই নকশী কাঁথা সেলাই শেষ হয়ে গেল, সাজু তার মায়ের কাছে দিয়ে বললো, ‘মা, আমার মরণের পরে যেখানে কবর দেওয়া হবে, সেই কবরের ওপর যেন এই নকশী কাঁথাটি বিছিয়ে দেওয়া হয়। যদি কোনোদিন রূপাই এসে আমার খোঁজ করে, তাকে বলো, তোমার আশায় সাজু ওই কবরের নিচে আছে।’

বহুদিন পরে গাঁয়ের কৃষকেরা গভীর রাতে বেদনার্ত এক বাঁশির সুর শুনতে পায়। ভোরে সবাই এসে দেখে, সাজুর কবরের পাশে এক ভিনদেশি লোক মরে পড়ে আছে। এরই মাধ্যমে শেষ হয় গ্রামবাংলার এক তরুণ তরুণীর বিবাহিত জীবনের অমর প্রেমকাহিনী।

এই কাব্যগ্রন্থের রূপাই চরিত্রটি জসীমউদ্দীন রূপায়ণ করেছিলেন বাস্তবের একজন ব্যক্তিকে উপজীব্য করে, যার প্রকৃত নাম রূপা। রূপার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসী গ্রামে৷ ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন নকশী কাঁথার মাঠ অমর কাব্যগ্রন্থের নায়ক রূপাই। রূপাইয়ের বিপরীতে সাজু নামক যে নারী চরিত্র ছিল, তিনিও বাস্তবের এক ব্যক্তিত্ব, নাম ছিল ললীতা। রূপা ললীতাকে অসম্ভব ভালবাসতেন। ললীতা ছিলেন রূপার প্রতিবেশী একই উপজেলার গ্রাম মশাখালী'র বাসিন্দা। ললীতা ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে মারা যান।

বার্তা প্রেরক
মো: রফিকুল ইসলাম, বি.এ,
প্রধান শিক্ষক, মাস্টার একাডেমী
ভালুকা, ময়মনসিংহ।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

সাহিত্য পাতা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই