তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি হাল চাষ পদ্ধতি

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি হাল চাষ পদ্ধতি
[ভালুকা ডট কম : ১১ ডিসেম্বর]
এক সময়ে লাল-সবুজের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মাঠে চোখে পড়তো কাক ডাকা ভোরে কৃষকদের গরুর সঙ্গে লাঙ্গল ও জোয়াল কাঁধে নিয়ে জমি চাষ করার জন্য মাঠে যাওয়ার দৃশ্য। কিন্তু এখন আর এই দৃশ্য চোখে পড়ে না। কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিতে গরু দিয়ে হাল-চাষ করা।

আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই আর মাঠে গান গেয়ে গরু দিয়ে জমি চাষ করতে দেখা যায় না কৃষকদের।কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল-জোয়াল। চিরায়ত বাংলার রূপের সন্ধান করতে গেলে এই দুই কৃষি উপকরণের কথা যেমন অবশ্যই আসবে, তেমনি আসবে হালের গরুর কথাও।

আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করার প্রচলন এসেছে। এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলার উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কৃষক গরু পালন করতো হাল চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন। আবার অনেকে তিল, সরিষা, কলই, আলু চাষের জন্য ব্যবহার করতেন গরুর হাল চাষ। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। হালের গরু দিয়ে জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা। তাই অনেক চাষীরা বর্তমানে এই গরু দিয়ে হাল চাষের পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা।

করজ গ্রামের কৃষক মো: রাজ্জাক বলেন, গরু দিয়ে জমি চাষ করাই আমার পেশা। তবে আগের মতো আর কদর নেই এই গরু দিয়ে হাল চাষের। কৃষকরাও এখন ডিজিটাল হয়ে গেছেন। ছোটবেলায় হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু থাকত ২-৩ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ দিয়ে লোহার তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি।

তিনি আরো জানান, গরু দিয়ে হাল চাষের অনেক উপকারিতা। লাঙ্গলের ফলা মাটির অনেক গভীরে যেতো। তাই জমিতে কাঁদা অনেক ভালো হতো। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, যা জমিতে প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি করতো। এতে করে জমিতে কম পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতো। ফলন ভালো হতো। এখন জমি চাষ করার জন্য অনেক নতুন নতুন মেশিন এসেছে যা দিয়ে কৃষকরা কম সময়ে ও কম খরচে জমি চাষাবাদ করছেন। আমাদের তো টাকা নাই মেশিন কিনে জমি চাষ করার তাই কষ্ট হলেও এখনো গরু, লাঙ্গল, জোয়াল দিয়ে জমি হাল চাষ করে সংসার চালাই।

উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের আব্দুর রহিম, জয়নাল হোসেনসহ আরো অনেক কৃষকরা জানান, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির তুলনায় গরুর লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। এতে করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেতো ও ফসলের ফলন ভালো হতো। জমিতে কীটনাশকের প্রয়োজন তেমন একটা হতো না। আর বর্তমানে সকল ফসলই রাসায়নিক সারের বিনিময়ে উৎপাদন করা হচ্ছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই