তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে স্কুল ভবন পরিত্যাক্ত দেখিয়ে বিক্রি

রাণীনগরে স্কুল ভবন পরিত্যাক্ত দেখিয়ে মাত্র ১৯ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি
[ভালুকা ডট কম : ১৪ আগস্ট]
নওগাঁর রাণীনগরে কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন প্রকাশ্য নিলামের নামে গোপনে মাত্র ১৯ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অথচ ওই স্কুলের ৫৫ বছরের ভবন পরিত্যাক্ত বা নিলাম করা হয়নি। গত ২৩ বছর আগে এলজিইডি থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এই স্কুল ভবন।

এত অল্প সময়ে ভবনটি কি ভাবে পরিত্যাক্ত দেখিয়ে এত অল্প টাকায় নিলামে বিক্রি করলো তা নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশা-পাশি স্কুলের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তিনটি মেহগনি গাছও নিলাম বা টেন্ডার ছাড়াই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে ওই স্কুলের প্রভাবশালী সভাপতি। এ নিয়ে গ্রামবাসি আন্দোলন করলেও প্রভাবশালী সভাপতির ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।

স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা, উপজেলার কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয়। এরপর সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৭২ সালে অফিস ঘরসহ ৪টি কক্ষ বিশিষ্ট পাকাঘর উপরে টিনশেড নির্মিত হয়ে প্রায় ৫০ বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নে নওগাঁ এলজিইডির বাস্তবায়নে তিনটি ক্লাসরুম এবং একটি অফিস রুমসহ চার রুম বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে নির্মাণ ব্যয় হয় ৫ লক্ষাধিক টাকা। এপর্যন্ত ওই ভবনে সুষ্ঠুভাবে পাঠদান অব্যাহত থাকলেও গত ২০১৭ সালে স্কুলের সভাপতি স্থানীয় প্রভাবশালী মেম্বার সাহেব আলী ও রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলীকে উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ভাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেন।

কিন্তু এর আগের নির্মিত টিনশেডের পাকা ঘর কোন পরিত্যক্ত বা ঝুকিপূর্ন ঘোষনা করেনি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর প্রতিষ্ঠালগ্নে নির্মিত পুরাতন ভবনগুলোতে পুনরায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের একটি মেহগনি, একটি আম ও একটি কৃষ্ণচুরার গাছসহ ওই স্কুল ভবন পরিত্যাক্ত দেখিয়ে গত ১৯ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি প্রকাশ্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারী করে প্রচারের জন্য স্কুলে পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু ভবন ও গাছগুলো বিক্রির ঘোষনা প্রচার না করে গত ২৬ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী তার নিজস্ব মাত্র পাঁচ জন ডাককারীর নিয়ে উপস্থিত হন। ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী ১৯ হাজার টাকায় তার নিজ নামে ভবনটি ক্রয় করেন। অথচ ওই বিদ্যালয়ের প্রায় ৫৫ বছরের টিনসেড পাকা ঘর এখনও কোন পরিত্যক্ত ঘোষনা বা নিলাম করা হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ স্কুলের সভাপতি সাহেব আলী এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অফিসের সাথে যোগসাজস করে কাউকে না জানিয়ে তিনি নামমাত্র টাকায় এই ভবনটি নিজে ক্রয় করেছেন। ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনটি কিভাবে এতো অল্প টাকায় বিক্রি হলো এবং আগের টিন সেডের অতি পুরাতন স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনা বা নিলাম না করে ২৩ বছর আগের করা নতুন ভবন গোপনে তড়িঘড়ি করে নিলামে সভাপতি নিজ নামে নেয়া তা নিয়ে সচেতন মহলের মনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এছাড়া ওই স্কুলের ৩ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মহগনি কৃষ্ণচুড়া ও আম গাছ জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই স্কুলের সাব ঠিকাদার ৫৭ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ওই স্কুলের একটি মরা রেইন্ট্রি গাছ কোন নিলাম করা হয়নি। যে কোন মুহুর্তে ওই গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঘটতে পারে বলে জানান এলাকাবাসীরা।

গত বৃহস্পতিবার গাছগুলো কাটতে গেলে স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির নিকট পূনরায় নিলাম ডাকের দাবি জানান। স্কুলের সভাপতি বিষয়টি সমাধান এর নাম করে রাতারাতি গ্রামের আরো কয়েকজন প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে গ্রামবাসির আন্দোলন ধামাচাপা দিতে অভিনব কৌশলে কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত প্রায় লক্ষাধিক টাকা মুল্যের মরা রেইনটি গাছ গ্রামবাসিকে স্বল্প মুল্যে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন সমাধান না করেই গত শনিবার গাছগুলো তরিঘরি করে কেটে নেয়। কিন্তু এখনও স্কুল ভবন ভাঙ্গতে পারেনি। গ্রামের অনান্য প্রভাবশালীরা সভাপতিকে সমর্থন করায় মুখ খুলতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এ ঘটনায় গ্রামবাসি নামমাত্র নিলামের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পূর্বের নিলাম বাতিল করে নতুন ভাবে নিলামের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।

সভাপতি সাহেব আলী বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে নিয়ম অনুসারেই নিলাম ডাকে কিনে নিয়েছি। বাকি বিষয়গুলো সরকার দেখবে।নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই ভবন পরিত্যাক্ত করে তা নিলামে তোলা হয়েছে। আর সকল নিয়ম-কানুন মেনেই নিলাম করা হয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

শিক্ষাঙ্গন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই