তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় স্বেচ্ছায় ২০ বছর ট্রাফিকের কাজ

নওগাঁয় স্বেচ্ছায় ২০ বছর ট্রাফিকের কাজ করছেন আজাহার আলী
[ভালুকা ডট কম : ০৯ সেপ্টেম্বর]
পরনে ট্রাফিক পুলিশের রংচটা পুরনো পোশাক। মাথায় সেলাই করা ছেড়া ক্যাপ ও পায়ে ছেড়া জুতা। আর বগলে পল্লী বিদ্যুতের দুই হাত লম্বা মোটা তার। লিক লিকে গড়নের ৫৫ বছর বয়সি এ মানুষটির নাম আজাহার আলী মন্ডল। বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের লক্ষ্মিরামপুর গ্রামে।

জানা যায়, আজাহার আলী মন্ডলের টানা পোড়ন অভাবের সংসার। এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের আলাদা সংসারও আছে। জীবন জীবিকার তাগিদে এক সময় তিনি ঢাকায় রিক্সা চালাতেন। প্রায় ১৬ বছর রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এরপর এলাকায় চলে আসেন।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলা প্রবেশ মুখে ব্রীজের উপর একটি দুর্ঘটনায় মা-মেয়ে মারা যায়। এছাড়া রাস্তায় চলাচলে চোখের সামনে দেখেন অনেক দূর্ঘটা। তবে মা-মেয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি তার বিবেককে নাড়া দেয়। সেই থেকে আজাহার আলী ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করা চলেছে। প্রথমে জেলার মহাদেবপুর উপজেলাতে স্বেচ্ছায় আট বছর ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে আজ অবধি জেলার মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের চারমাথার মোড় ব্যস্ততম জায়গা ফেরিঘাটে প্রায় ১২ বছর থেকে দায়িত্ব পাল করছেন। স্বেচ্ছায় প্রায় ২০ বছর ধরে এ উপজেলায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

প্রথম প্রথম তাকে কেউ মানতে চাইত না। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে যখন যানজট বেড়ে যাচ্ছিল তখন সবাই তাকে মানতে শুরু করে। নিয়মমতো সবাই যানজটমুক্ত করে চলাচলের সুযোগ করে দেন। প্রতিদিন ফেরিঘাটে সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত নিরলস ভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আজাহার আলী। গুরুত্বপূর্ন এ স্থানটিতে দূর্ঘটনা কমে গেছে।

স্বেচ্ছাসেবী আজাহার আলী বলেন, ১৯৯৫ সালে আনছার ভিডিপি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়। সেখানে ট্রাফিকের কিছু কলাকৌশল শিখানো হয়েছিল। আর সে অভিজ্ঞতা থেকে ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। তবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করলেও মন্ত্রী স্যার (বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক), ইউএনও অফিস, থানা ও সার্কেল স্যার আর্থিক কিছু সহযোগীতা করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, অর্থ সংকটে চলি। গরীব মানুষ। পোশাক কিনতে পারিনা। মন্ত্রী স্যার পোশাক কেনার জন্য টাকা দিয়েছিল। সে টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনে খেয়েছি। এছাড়া অ্যাকশিরা রোগে ভূগছি। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হয়।

সিএনজি চালক ফজলুর এবং ভটভটি চেন মাস্টার জামিনুর রহমান বলেন, এ জায়গাটিতে বিশেষ করে সকাল ও বিকেলে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তাপারাপারে যে যার মতো করে যাওয়ার চেষ্টা করে। আজাহার আলী চাচা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করে সবাইকে শুশৃংঙ্খল ভাবে চলাচল করতে বলেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক হলেও আমরা সবাই তার কথা শুনি।

মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, আজাহার আলী একজন স্বেচ্ছাসেবক ট্রাফিক। সাদা মনের ওই মানুষটি বিনা পারিশ্রমিকে মান্দার ফেরিঘাট মোড়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারাদিন ডিউটি করেন। উপজেলায় যোগদানের পর তিনি আমার কাছে ছোট একটি আবদার নিয়ে আসেন। রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি ছাতা পাওয়া যেত কিনা! শুনামাত্র তার ইচ্ছা পূরণ করেছি। উপহার সামান্য হলেও তার স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের আগ্রহটা অনেকগুন বাড়িয়ে দিবে।

নওগাঁ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ফেরিঘাট একটি জনগুরুত্বপূর্ন ও ব্যস্ততম জায়গা। আজাহার আলী স্বেচ্ছায় নিরলস শ্রম দিয়ে ট্রাফিকের যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা নি:সন্দেহ ভাল উদ্যোগ। আমাদের জনগণের উপকারার্থে এবং সুফল আছে বলে আমি মনে করি। তার প্রতি প্রশাসনের একটা সুনজর আছে এবং থাকবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই