তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরের গরীবের ডাক্তার আব্দুল মান্নান আর নেই

গৌরীপুরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান গরীবের ডাক্তার আব্দুল মান্নান আর নেই
[ভালুকা ডট কম : ২৮ অক্টোবর]
এলাকায় গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজসেবক ডাঃ আব্দুল মান্নান (৯২) আর নেই। তিনি শনিবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায়  গৌরীপুর পৌর শহরে নয়াপাড়া এলাকায় নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

মরহুমের জানাযার নামাজ আজ রোববার (২৮ অক্টোবর) বাদ আসর গৌরীপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। ডাঃ আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন। মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে জানাযার নামাজ শেষে তাকে নয়াপাড়াস্থ নিজ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে ডাঃ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার শুভাকাঙ্খীগণ ছবি আপলোড করে শোক প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য,আব্দুল মান্নান একাধারে ছিলেন একজন জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তবে বিনামুল্যে ও স্বল্প ফি’তে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কারনে এলাকায় তিনি গরীবের ডাক্তার হিসিবে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দানের মানসে ১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ শহরের লিটন মেডিক্যাল স্কুল থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় ৪বছর মেয়াদি (এলএমএফ) কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭৫ সালে রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ডাক্তার হয়ে তিনি ১৯৭৬ সালে গৌরীপুরে স্ত্রী ফিরোজার ওরফে ‘মায়া’ নামে গৌরীপুর পৌর শহরে মধ্যবাজার এলাকায় একটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। প্রায় একযুগ ওই ক্লিনিকে স্থানীয় গরীব রোগীদের বিনামুল্যে ও স্বল্প ফি’তে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। পরবর্তীতে ২০০১ সনে মায়া ক্লিনিক ছেড়ে নয়াপাড়া এলাকায় তার নিজ বাসায় বসে রোগী দেখতে শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজ বাসায় চেম্বারে বসে দিন-রাত মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে গেছেন।

ডাঃ আব্দুল মান্নান ১৯৩৬ সনে গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বীরপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুম শেখ আব্দুল করিম ও মাতা নেকজান বিবি। ১৯৫৯ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলের জনক হন তিনি। ইতিমধ্যে তার ৫ মেয়ের মাঝে দু’মেয়ে মারা যান। একসময় তিনি ব্যাবসার সাথে জড়িত হয়ে পৌর শহরের বাহাদুরপুর এলাকায় স্ত্রী ফিরোজার নামে একটি ইটভাটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তিতে এখানেই প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রী ফিরোজা নামে বাহাদুরপুর ফিরোজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও তিনি গৌরীপুর সরকারি কলেজ, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।

আব্দুল মান্নান জনসেবা করার লক্ষ্যে গৌরীপুর পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনপ্রিয়তার কারনে পৌরবাসী ১৯৭৭ সালে তাকে গৌরীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। ১৯৭৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮২ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গৌরীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তমুল প্রতিদ্বন্দিতা করে সাবেক স্বাস্থ্য উপ-মন্ত্রী মরহুম নুরুল আমিন খান পাঠানের নিকট হেরে যান। এরপর বাকশালে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ আসনে বাকশালের কাস্তে মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। এসময় সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নজরুল ইসলাম সরকার। পরবর্তিতে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে গৌরীপুর পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ ইং সনে  বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত এমপি প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন।

আব্দুল মান্নান সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ ইং সনে ‘বীরাঙ্গনা সখিনা সিলভার প্যান অ্যাওয়ার্ড’ পদক পান। তিনি ২০১৬ ইং সনে ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা বিভ্রাট ও প্রতিকার’ এই নামে একটি গ্রন্থ লেখেন।  গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি উল্লেখ করেন- মা নেকজান বিবি ও বাবা শেখ আব্দুল করিমের আদেশ ও আশীর্বাদ নিয়ে অত্র এলাকায় সারা জীবন চিকিৎসাসহ সমাজের নানা পেশার মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছি। দীর্ঘ জীবনের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তাতে স্বল্প পরিসরে মানুষের কল্যাণে পুস্তক লেখার অনুপ্রেরণা পাই। আমার জানামতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক ভূলভ্রান্তি পাওয়া যায়। আমার দৃঢ বিশ্বাস এই পুস্তকটি ভূলভ্রান্তির হাত থেকে সমাধান পাওয়ার জন্য অনেকাংশে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

শোক সংবাদ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই