তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি তেল চুরির অভিযোগ

রাণীনগরের বদলী হওয়া কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি তেল চুরির অভিযোগ,ব্যবহার করতেন প্রাইভেট কার
[ভালুকা ডট কম : ০৬ সেপ্টেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগরের বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী তিতুমির রহমান নিজের প্রাইভেট গাড়ীর খরচ মেটাতে সরকারী গাড়ীর তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। আর তেল বিক্রির সেই অর্থ ব্যয় করতেন নিজের প্রাইভেট কারের পেছনে। আর কিনেছেন একাধিক প্রাইভেট কার।

সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চল ভিত্তিক কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ১৯৯২ সালে রাণীনগর জোন হিসেবে অত্র উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের তদারকির জন্য সরকারী ভাবে একটি জিপ গাড়ি রাজ-ক ৫৯২১ বরাদ্দ দেয়া হয়। গত প্রায় ৪বছর আগে জিপ চালক আবু সাইদ চুক্তিভিত্তিতে রাণীনগর জোনে যোগদান করেন। যোগদানের কিছু দিন পরই রাণীনগর জোনের সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ ১৪-৪০৭৪) ক্রয় করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় তেল চুরির মহোৎসব। তিতুমির ও চালক আবু সাইদ প্রতি মাসে ওই গাড়ির তেল, মবিল, গিয়ার অয়েল ও ব্রেক অয়েল ক্রয়ের স্লিপ পার্শ্ববর্তী শাহী পেট্টোল পাম্প থেকে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, অফিসের প্রয়োজনে গাড়ি না চললেও গত ১৮ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত জ্বালানী খরচ বাবদ ৯৬ হাজার ৯শ ১৭ টাকা ও মেরামত বাবদ ৩৩ হাজার ১শ টাকার ভাউচার করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেল ১ হাজার ৯৩ লিটার, মবিল ৩০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ১৬ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং ৩৬ হাজার ৬শ ৫১কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করে সরকারী অর্থ লোপাট করা হয়েছে। আবার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ফেব্রেুয়ারী মাস পর্যন্ত একটি ভাউচারের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে জ্বালানী খরচ বাবদ ১লক্ষ ২৭হাজার ৭শ ৪২টাকা, মেরামত বাবদ ৩৬হাজার ১শ টাকা। জ্বালানী খরচের পরিমান ডিজেল ১হাজার ৪শ ৪২ লিটার, মবিল ৪০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ২১ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং (ফেব্রেুয়ারী মাস পর্যন্ত) ৩৮ হাজার ১শ ৬৯ কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। কৌশলে তৈরি করা ওই সব ভাউচার প্রতিবেদনে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০হাজার টাকা গাড়ির খরচ দেখানো হয়।

অথচ সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয়রা বলছেন, সদ্য বিদায়ী বিএমডির সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান প্রাইভেট কার কেনার পর থেকে সরকারি জিপ গাড়ি বাহিরে বের করতে দেখিনি। তিতুমীর রহমান তার নিজের গাড়িতেই চলাচল করতেন। তার বিরুদ্ধে শুধু সরকারি তেল চুরিই নয় বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, টেন্ডার ছাড়াই রাস্তার গাছ বিক্রিসহ কয়েক ডজন অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএমডির রাণীনগর জোনের একাধিক কর্মচারিরা জানান, অফিসের গাড়ি আর ব্যবহার করা হয় না। এই সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান চালক আবু সাঈদের মাধ্যমে নিজের মত ভাউচার বানিয়ে তেলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বরেন্দ্র’র জিপ গাড়ি গেটের বাহিরে বের না হলেও ওই গাড়ির তেল, মাবিল, গিয়ার অয়েল, মেরামতসহ বিভিন্ন খরচের ভ’য়া বিল ভাউচার চালক আবু সাঈদের মাধ্যমে তৈরি করতো আর সহকারী প্রকৌশলী তিতুমির রহমান সেটা কে অনুমোদন দিতেন। আর সরকারী জিপ গাড়ীর নামে টাকা তুলে নিজের প্রাইভেট কারের খরচ মেটাতেন। এই বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি কৌশলে বদলী নিয়ে চলে গেছেন বগুড়া প্রধান অফিসে। সেখানে তিনি বর্তমানে বহাল তবিয়তে চাকরী করছেন।

রাণীনগর বরেন্দ্র অফিসের গেট সংলগ্ন দোকানদার মোতাহার ও এনামুল বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বিএমডির সরকারি জিপ গাড়ি আমাদের চোখে পড়ে না। তিতুমীর স্যার এখান থেকে বদলী হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নতুন প্রাইভেট গাড়ি করেই যাওয়া আসা করতেন। শুনেছি গাড়িটি অনেক পুরনো হওয়ার কারণেই ৩/৪ বছর ধরে নাকি অফিসের গ্যারেজে পড়ে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার শাহী পেট্টোল পাম্পের এক কর্মচারি বলেন, বরেন্দ্র’র ওই ড্রাইভার প্রায় ৩/৪ বছর ধরে লিটার প্রতি ১১টাকা দরে তেল ও মবিলের স্লিপ নিয়ে যেতো আমাদের কাছ থেকে।শাহী পেট্রোল পাম্পের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার শাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার এখান থেকে তারা তেল মবিল ক্রয় করে। ক্রয়ের পর ড্রাইভার তেল কি করে আমি তা জানি না।চালক আবু সাইদ বলেন আমি স্যারের চুক্তিভিত্তিক চালক ছিলাম। স্যার আমাকে যা করতে বলতেন আমি তাই করতাম। কারণ আমি তার অধিনস্থ কর্মচারী ছিলাম। এই বিষয়ে বিস্তারিত তিতুমির স্যারই ভালো বলতে পারবেন।

সম্প্রতি বদলী হওয়া রাণীনগর বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী তিতুমির রহমান মোবাইল ফোনের কল রিসিভ না করায় এই বিষয়ে তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বগুড়া রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসনাত মো: কুদরত-ই-এলাহী বলেন বদলী হয়ে আসা তিতুমির রহমানকে এখনো কোন উপজেলায় বদলী করা হয় নাই। তিনি বর্তমানে বগুড়া সদরে আছেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই