তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় আঁখের আবাদ করে লাখপতি বেকার যুবক

ভালুকায় আঁখের আবাদ করে লাখপতি বেকার যুবক এমরান
[ভালুকা ডট কম : ২১ নভেম্বর]
ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী গ্রামে আঁখের আবাদ করে লাখপতি হয়েছেন আঃ বাছেদের পুত্র বেকার যুবক এমরান হোসেন। তার মত শত শত কৃষক আঁখের আবাদ করে নিজেদের ভগ্যের চাকা ঘুড়িয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করছেন।

উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের নয়নপুর, চাঁনপুর, সোনাখালী, গোবুদিয়া, টালাব, মল্লিকবাড়ী সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে এ বছর ব্যাপক আকারে আঁখের আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে মল্লিকবাড়ী ও সোনাখালী গ্রামে আঁখের জন্য খোলামাঠ চোখে পরেনা। চারিদিকে শুধুই আঁখ আর আঁখ। স্থানীয় ভাবে আর কদিন পরেই শুরু হবে স্যালু চালিত কলে আঁখ মাড়াই। রস জাল করে তৈরী হবে চাকা ও পাটালী গুড়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ জনক হওয়ায় চাষীরা আঁখ চাষে বেশী আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে তারা জানান।

১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সরজমিন মল্লিকবাড়ী গ্রামে গেলে কৃষক এমরান জানান তিনি পিতার একমাত্র ছেলে হয়েও অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারনে লেখাপড়ায় এগুতে না পেরে বেকার জীবন কাটাচ্ছিলেন। গ্রামে কৃষিতে অনেকেই উন্নতি করছিলো দেখে সেও কৃষি কাজ করার মনস্থির করে। কিন্ত নিজের জমি না থাকায় তিন লাখ টাকা ফেরৎ পাওয়ার শর্তে দুই বছরের জন্য এক একর জমি বর্গা নিয়ে আঁখের আবাদ শুরু করেন। জমি তৈরীর পর ফাল্গুন চৈত্র মাসে আঁখের চারা রোপন হয়ে থাকে আর ৮/৯ মাসের ব্যবধানে ফলন সম্পুর্ণ হলে কার্তিক অগ্রহায়ন মাস হতে হতে মাড়াই ও বাজারজাত শুরু হয়। সম্পুর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে জমি চাষ, চারা ক্রয় ও রোপন, পানি সেচ, সার কীটনাশক বাবদ এক একর জমিতে নতুন জাতের অমৃত আঁখ বিক্রয়োপযোগী করতে তার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এক একর জমির আঁখ খেতেই তিনি পাইকারের নিকট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন এতে তার লাভ এসেছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাইকাররা নিজ খরচে আঁখ কেটে নিয়ে যাবেন।

তিনি জানান নিজস্ব  নলকূপ না থাকায় ১০০ টাকা ঘন্টা হিসেবে ক্ষেতে পানি সেচ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন যেহেতু অন্যান্য ফসলের চেয়ে আঁখ চাষ অধিক লাভ জনক সেজন্য এ এলাকায় সরকারী ভাবে নলকূপের ব্যবস্থা করে সেচযন্ত্র স্থাপন করলে সেচ সমস্যা দুর হবে। এ ছারা মৌসুমের শুরতে প্রান্তিক চাষীদের কে চারা, সার, কীটনাশকের উপর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারী প্রনোদনার সুষ্ঠ বন্টন ব্যবস্থা করলে আঁখের আবাদ আরও ব্যাপকতা পাবে বলে চাষীদের অভিমত। আঁখ চাষে বিভিন্ন প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়। পাতার ভিতর এক জাতীয় পোকার আক্রমন হয় এতে উপর থেকে আঁখের রসালো অংশ পঁচে লাল হতে শুরু করে। আবার বন্য কাঠ বিড়ালী স্থানীয় ভাষায় যাকে কডই বলা হয় এরা এগাছ ও গাছ লাফিয়ে চলে। কাঠ বিড়ালী আঁখের মাঝ খানের অংশ কামড়ে নষ্ট করে রস খেয়ে ফেলে।

এ অঞ্চলে অমৃত, মেশ্রীমালা, ঈশ্বরদী জাত, সুন্দরী ও ইন্দোনেশিয়া জাতের আঁখের আবাদ বেশী হয়। এর মধ্যে মেশ্রীমালা ও অমৃতজাত আঁখ পাইকাররা কিনে ঢাকার রস বিক্রেতাদের নিকট অধিক লাভে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া স্থানীয় ভাবে স্যালু চালিত মাড়াইকলে রস ভাঙ্গিয়ে তা থেকে পাটালী গুড় তৈরী হয় যা দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করে কৃষকরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করে থাকেন।

এক সময় ভালুকা ও ফুলবাড়ীয়ায় আঁেখর রস জাল করে লাল চিনি নামে পরিচিত ধুলা চিনি তৈরী হতো যা গ্রাম এলাকার মানুষের নিত্য প্রয়োজনে ক্ষীর পায়েশ পিঠা পুলিতে ব্যবহৃত হতো। লালচিনি দিয়ে বড় বড় বাতাসা, মুড়লি, জিলাপি ইত্যাদি গ্রামের মানুষের প্রিয় খাবার তৈরী হতো। গ্রামের বাড়ীতে নতুন জামাই কিংবা আত্মীয় কুটুম আসলে বউঝিরা লালচিনির ক্ষীর রান্না করে পরিবেশন করা যেন চিরাচরিত নিয়ম ছিলো। দুটো বাতাসার জন্য বাজার হতে ফিরে আসা বাবার পথ চেয়ে বসে থাকতেন বাড়ীতে ছোট ছোট শিশুরা। চুনের আলপনা একে মাটির হাঁড়ি ভরে লাল চিনি ও বাতাসা মিষ্টি হিসেবে পালকিতে করে বর যাত্রীরা কনের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। ছেলে মেয়েরা আড়ায় শুকানো পাট থেকে এক হাতা পাট চুরি করে লুকিয়ে রাখতো ফেরিওয়ালার কাছ থেকে চিনা বাদাম, মুড়লি, লালচিনির বাতাসা, আংগুইল্লা, জিলাপি কিনে পাট ধোয়ার ঘাটপাড়ে বসে মজা করে খাওয়ার জন্য।

লালচিনি তৈরী কমে গেলেও এখননও আঁখের রসে পাটালী গুড়ের বড় বড় চাকা তৈরী করে বাজারজাত হচ্ছে। এ এলাকার দরিদ্র পরিবার যাদের বাড়ীঘর মাটির দেয়াল আর ছনের ছাউনি ছিলো আঁখ চাষ করে কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন তারা ইটের দেয়াল বেষ্টিত টিনের ঘরে বসবাস করছেন। তাদের সংসারে এখন ফিরে এসেছে আনন্দের উচ্ছলতা।#  



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই