তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

কমিউনিটি ক্লিনিগুলোতে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারি

নওগাঁয় কমিউনিটি ক্লিনিগুলোতে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারি
[ভালুকা ডট কম : ২৫ ডিসেম্বর]
নওগাঁয় ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে মহিলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) মাধ্যমে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের দিকে উৎসাহ করছেন। এজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের আওতায় ছয় মাসের কমিউনিটি স্কিল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট (সিএসবিএ) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে শুরু হয়েছে প্রসূতিদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যদিয়ে সিএইচসিপিরা প্রসূতিদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো দ্রুত সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন সিএইচসিপিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ৯৯টি ইউনিয়নে ৩০২ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩৩ টি। ২০১৭ সালের মহিলা সিএইচসিপিদের প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ছয় মাসের সিএসবিএ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১২জন মহিলা সিএইচসিপি প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। স্বাভাবিক প্রসবে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রসূতিদের মাসে ৩ থেকে ৪ বার কাউন্সিলিং করা হয়। যাতে প্রসূতিরা সিজারিয়ানের দিকে আগ্রহী না হয়ে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবে আগ্রহী হয় এবং সে মোতাবেক তাদের মনোবল তৈরী করতে পারে।

নওগাঁ জেলার মধ্যে সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের ‘নামানুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে’ গত ১২/১০/১৯ তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রথম স্বাভাবিক প্রসবের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে দুই মাসে ৮জন প্রসূতির স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন। এরমধ্যে চার ছেলে ও চার মেয়ে শিশু। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার, নরমাল স্যালাইন পর্যাপ্ত, অ্যান্টিবায়োটিক ও উদ্বিপক ইনজেকশন প্রয়োজন। এতোকিছুর স্বল্পতার মধ্য দিয়েও সেখানে স্বাভাবিক প্রসব করানো হচ্ছে। প্রসূতিদের আগ্রহ থাকার কারণে স্বাভাবিক প্রসব করানো সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষরা।

সদর উপজেলার নুরপুর গ্রামের প্রসূতি আরশি বানু বলেন, পেটে বাচ্চা আসার পর থেকে নিয়মিত ‘নামানুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিক’ থেকে সেবা নিতাম। দায়িত্বে থাকা কামরুল ভাই স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের বিষয় নিয়ে উপদেশমুলক বিভিন্ন কথা বলতেন এবং সাহস জুগিয়েছেন। তার কথামতো চলার চেষ্টা করেছি। গত দুইমাস আগে স্বাভাবিক ভাবেমেয়ে বাচ্চা জন্ম দিতে পেরেছি। প্রথম বাচ্চা, একটু ভয় লেগেছিল। সিজার করলে অনেক টাকা খরচ হতো এবং সুস্থ হতে সময় লাগতো। স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের তিনদিন পর থেকে নিজেই সাংসারিক কাজগুলো করতে পারছি।

আরেক প্রসূতি শারমিন বলেন,  গ্রামের তিনজন প্রসূতি ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা প্রসব হয়েছে। এজন্য আমিও আগ্রহী হয়েছি স্বাভাবিক প্রসবের জন্য। সিজারের পর অনেক সময় গেলেও সুস্থ হওয়া যায় না। গত নভেম্বর ৭ তারিখে স্বাভাবিক ভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিতে পেরেছি।

নামানুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি কামরুল হাসান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্যার স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আমাকে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন। স্বাভাবিক প্রসবের বিষয় নিয়ে আমার এলাকার প্রসূতিদের সাপ্তাহিক কাউন্সিলিং করে আসছিলাম। এতে করে বেশ সাড়াও পেয়েছিলাম। প্রসূতিরাও আগ্রহী ছিলেন। যার কারণে আমার ক্লিনিকে প্রতিবন্ধকতার মধ্যদিয়েও স্বাভাবিক প্রসব করাতে সক্ষম হয়েছি। আর এ কাজে সহযোগীতা করেছেন- আমার দুই সহকর্মী নুর নাহার ও শারমিন সুলতানা।

তিনি বলেন, বাচ্চা প্রসবের পর প্রসূতিকে ক্লিনিকে ১২ ঘন্টা থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ওষধ না থাকায় নিজ পকেট থেকে টাকা খরচ করে সেবা দিতে হয়। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত উপকরণ সরবরাহের দাবী করেন তিনি।

সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের ভবানীগাথি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নুর নাহার বলেন, ২০১৭ সালে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য সিএসবিএ এর উপর ৬মাসের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য গর্ভবতীদের উদ্বৃদ্ধ করতে তাদের সাথে সপ্তাহে একবার কাউন্সিলিং করা হয়।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক প্রসবে অনেক ঝুঁকি আছে। আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। ব্যথা উঠার পর প্রসূতি ও অভিভাবকরা বিরক্তবোধ মনে করেন। নরমাল ডেলিভারী অনেক সময় সাপেক্ষে, এই সময়টা আমাদের দিতে হবে। নামানুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসূতিরা বাচ্চা প্রসবের জন্য আগ্রহী হয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আমি নিজে ৬টা ‘নরমাল ডেলিভারী’ করিয়েছি। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রসূতিদের প্রসবের জন্য ক্লিনিকমুখী করতে। তবে এক সময় সিজার বন্ধ হয়ে যাবে আশা করা যায়।

নওগাঁ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাভাবিক প্রসব নিশ্চিত করতে উদ্যোগ করা হয়েছে। ওষধের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য যা যা প্রয়োজন বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সদর উপজেলার ১২ জন মহিলা সিএইচসিপিকে স্বাভাবিক প্রসবের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়ে আমরা শুরু করেছি। এছাড়া অন্যান্য কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য সিএইচসিপিদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তারা একটু ভয় পাচ্ছে।  আবার অনেকেই এ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই