বিস্তারিত বিষয়
মহাদেবপুরে কার্ড কৃষকের ব্যবসা মধ্যস্বত্বভোগীদের
মহাদেবপুরে কার্ড কৃষকের ব্যবসা মধ্যস্বত্বভোগীদের,পকেট ভারী হচ্ছে কর্মকর্তাদের
[ভালুকা ডট কম : ০৮ জানুয়ারী]
নওগাঁর মহাদেবপুরে চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি গুদামে ধান ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। এতে ধান উৎপাদনকারী প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের কৃষকদের জন্য দেয়া প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ও খাদ্য গুদামের কর্তারা। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মহৎ উদ্যোগ।
মহাদেবপুর খাদ্য গুদামে গিয়ে ভিন্ন পরিচয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাতের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য পাওয়া গেছে। আবার কয়েকজন মধ্যস্বত্বভোগীর সাথে কৃষি কার্ড বিক্রি ও গুদামে ধান বিক্রির ব্যাপারে কথা বলে কৃষকদের তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, নানা জটিলতা আর ভোগান্তির কারণে সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। সাধারণ কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে কর্তাদের কাছে অনেকভাবে নাজেহাল হতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাদের কৃষি কার্ড মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে ধানে ময়েশ্চার বেশি, চিটা আছে বলে ফেরত পাঠানো হয়। অথচ সিন্ডিকেট সদস্যরা বাজার থেকে কম দামে মোটা ধান কিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গুদামে সরবরাহ করছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে দুই হাজার ৯শত ১০ মেট্টিক টন। উদ্বোধন করা হয়েছে গত ২০ নভেম্বর। চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত সাত ডিসেম্বর উপজেলার তালিকাভুক্ত ২০ হাজার কৃষকদের মধ্যে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে ২ হাজার ৯শত ১০জন কৃষক নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত প্রতিজন কৃষকের কাছ থেকে এক মেট্টিক টন করে ধান ক্রয় করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ধান ক্রয়ে মহাদেবপুর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় ২০-২৫ জন মধ্যস্বত্বভোগী ও কয়েকজন প্রভাবশালীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা লটারিতে নির্বাচিত কৃষকদের কৌশলে ম্যানেজ করে তাদের কৃষি কার্ড সংগ্রহ করছে। কম মূল্যে ধান কিনে ওই কৃষি কার্ড ব্যবহার করে সরকারি খাদ্য গুদামে প্রতি মণ ১হাজার ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছে। কার্ড প্রদানকারী সহজসরল কৃষকদের ওই সিন্ডিকেট শান্তনা স্বরুপ দিচ্ছে মাত্র ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। কৃষকের কার্ড ব্যবহার করা হলেও ধান দিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে প্রমাণ করার জন্য খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৌশলে তার মোবাইল ফোনে কৃষি কার্ডসহ কৃষকের ছবি তুলে রাখছেন। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতি মেট্টিক টন ধান গুদামে বিক্রি করতে কর্মকর্তাকে ২-৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। এদিকে কর্মকর্তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যবহার করছেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। এতে একদিকে যেমন মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে পকেট ভারী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মহাদেবপুর খাদ্য গুদামের একজন মধ্যস্বত্বভোগী বলেন, এবার ১৩টি কৃষি কার্ড কৃষকদের কাছ থেকে কিনে মহাদেবপুর খাদ্য গুদামে ১৩মেট্টিক টন ধান বিক্রি করেছি। লাভ হয়েছে মোট ২২ হাজার টাকা। প্রতি মেট্টিক টন ধান গুদামে বিক্রির জন্য মহাদেবপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালামকে ঘুষ দিতে হয়েছে ৩হাজার টাকা। সে জন্য এ মৌসুমে লাভ একটু কম হয়েছে।
উপজেলার তাতারপুর গ্রামের কৃষক নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, লটারিতে আমার নাম উঠেছে। গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে নানা অজুহাতে কর্মকর্তরা ফিরিয়ে দেয়। তাই সুলতানপুর পালপাড়া গ্রামের রতনের কাছে আমার কৃষি কার্ড দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। উপজেলার সফাপুর গ্রামের কৃষক অনুকুল বলেন, এক হাজার ৪০ টাকা দরে কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কেনা হচ্ছে। অফিসের লোকজন ও দালালের মাধ্যম ছাড়া কৃষকের পক্ষে ধান বিক্রি করা সম্ভব না।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করার অভিযোগ অস্বীকার করে মহাদেবপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, আমার কোনো সিন্ডিকেট নেই। লটারিতে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শওকত জামিল বলেন, কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদামে ধান ক্রয় করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো কৃষক অভিযোগ করলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ধান ক্রয়ে কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। যদি কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায় তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- যশোরে চলছে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক [ প্রকাশকাল : ০১ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক্টর [ প্রকাশকাল : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- শার্শায় বালু উত্তলনে পরিবেশ হুমকির মুখে [ প্রকাশকাল : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.৩৫ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরের আবাদপুকুর হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা [ প্রকাশকাল : ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০.৩০ পুর্বাহ্ন]
- জনবল সংকটে তজুমদ্দিনে বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা [ প্রকাশকাল : ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে আবাসিক মাস্টারপাড়া [ প্রকাশকাল : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রায়গঞ্জ পৌরসভায় নির্মিত ড্রেন বেড়েছে দুর্ভোগ [ প্রকাশকাল : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- তজুমদ্দিনে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ [ প্রকাশকাল : ২২ আগস্ট ২০২৩ ০২.২৫ অপরাহ্ন]
- ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ এমটিএফই [ প্রকাশকাল : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম [ প্রকাশকাল : ১২ আগস্ট ২০২৩ ০২.০০ পুর্বাহ্ন]
- তজুমদ্দিন হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক ও করোনার টিকা [ প্রকাশকাল : ২৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নান্দাইলে অবৈধ কারখানায় হুমকিতে জনজীবন [ প্রকাশকাল : ০৭ জুলাই ২০২৩ ১১.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে শিক্ষক যখন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা [ প্রকাশকাল : ০৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০৫ অপরাহ্ন]
- অস্তিত্ব সংকটে রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা বন্দর [ প্রকাশকাল : ০৩ জুলাই ২০২৩ ০১.১০ অপরাহ্ন]
- উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করেনি রাণীনগরের হাট [ প্রকাশকাল : ৩১ মে ২০২৩ ০১.১৩ অপরাহ্ন]