তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

কম ঘুষে বেশি ঘোরাঘুরি,বেশিতে কাজ তাড়াতাড়ি

নওগাঁয় ভূমি অফিসে কম ঘুষে বেশি ঘোরাঘুরি,বেশিতে কাজ তাড়াতাড়ি
[ভালুকা ডট কম : ১২ জানুয়ারী]
নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূমি অফিস ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদে বছরের পর বছর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। দীর্ঘদিন ধরে একই অফিসে দায়িত্ব পালন করায় তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় চক্রটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।

কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং দালালদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ওই সিন্ডিকেটের কাছে সেবাপ্রার্থীরা রীতিমতো অসহায়। ফলে নামজারিসহ গুরুত্বর্পূণ কাজগুলো করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কোন রাখঢাক ছাড়াই চলে ঘুষের লেনদেন। দালাল ছাড়া এখানে তেমন কোন কাজই হয় না। নড়ে না ফাইল। ঘুষের পরিমান কম হলে সেবাপ্রার্থীদের বেশি ঘোরাঘুরি করতে হয়, পরিমান বেশি হলে কাজ হয় তাড়াতাড়ি! রাজনৈতিক পরিচয় দিলে কাজ অল্প দিনেই হয়। তবে মিষ্টি খাওয়ার নামে ঘুষ দিতে হবেই। এসব যেন দেখার কেউ নেই।

কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বদলি হয়ে অন্যত্র গেলেও দালালরা রয়ে যায় নিজ রাজ্যে। কোন কোন কর্মকর্তা দালালদের বিষয়ে প্রথম দিকে লম্ফঝম্ফ করলেও কিছুদিনের মধ্যে রহস্যজনক কারণে সব থেমে যায়। ভূমি অফিসের এমন কোন কাজ নেই যা দালালদের জন্য অসম্ভব। দালাল না ধরে সরাসরি অফিসে গেলে সাধারণ মানুষদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ কারণে কাজ উদ্ধারের স্বার্থে সাধারণ মানুষ দালালদের হাত ধরে ভূমি অফিসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজলো ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ভিন্ন পরিচয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে দালালদের উৎপাতের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য পাওয়া গেছে। আবার কয়েকজন দালালদের সঙ্গে ভূমি সংক্রান্ত নানান জটিলতার সমস্যা সমাধানের জন্য কথা বলে ভুক্তভোগীদের তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নাম প্রস্তাব-সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, মিস কেস ও খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভূমি অফিসে ঘুষের কারবার। জমির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘুষ লেনদেন কার্যক্রম। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য তালিকা সম্বলিত বেনার-ফেস্টুন ও কাগজ সরবরাহের নির্ধারিত সময়ের উল্লেখ শুধু লোক দেখানো। সরকার নির্ধারিত মূল্যের ৪০-৫০ গুণ বেশি টাকা আর মাসের পর মাস পেছনে ঘুরে ভুক্তভোগীরা কাজ আদায় করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৫০-৬০জনের একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয়। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারির কাছে সেবাপ্রত্যাশীরা সহযোগিতা চাইলে তারা দালালদের কাছে পাঠিয়ে দেন। দালালদের সঙ্গে চুক্তি না করে ভূমি অফিসের সেবা পাওয়া দুষ্কর। কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দালালদের ব্যবহার করছেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। এতে একদিকে যেমন দালালরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে টাকার পাহাড় গড়ছেন ভূমি অফিসের কর্তারা। ভূমি অফিসের কর্তাদের সহযোগীতায় দালালরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে এবং কোন প্রকার নীয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, উপজেলা সদরের বাসীন্দা আমিনুর রহমান ১৮-২০ লাখ টাকা মূল্যের সাড়ে তিন শতক জমি খারিজের জন্য গত বছর আবেদন করেন। দালাল না ধরায় ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আজ হবে কাল হবে বলে ঘোরাতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে মহাদেবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় এক দালাল ধরার পরামর্শ দিলে তিনি ওই দালালের সাথে যোগাযোগ করেন।

৫০ হাজার টাকা দাবি করলে ৩০ হাজার টাকায় দালালের সাথে দফারফা হয়। উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলে জমির সব কাগজপত্র ঠিক আছে জানতে পেরে আমিনুর রহমান ভূমি কর্মকর্তার পছন্দের দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন জমি খারিজ হয়ে গেছে। ডিসিআর চাইলে ভূমি অফিস থেকে তাকে বলা হয় আপনার ডিসিআর কেউ নিয়ে গেছে। বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা খাতুনকে জানালে তিনি এর কোন সমাধান না করে উল্টো তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং তাকে ভূমি অফিসে যেতে নিষেধ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, হয়রানি আর ভোগান্তি কি তা ভূমি অফিসে না এলে বোঝা যায় না। ভূমি অফিসের দেয়ালও যেন ঘুষ খায়। অফিস নিয়মে প্রত্যেক ধাপে ঘুষ দিয়েই ফাইল এসিল্যান্ডের টেবিল পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। এতে সহযোগিতা করে অফিসের কর্মচারি-দালাল সিন্ডিকেট। এ অফিসের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয় সকলেরই জানা তারপরও কোন প্রতিকার নেই।

ভুক্তভোগী আমিনুর রহমান বলেন, মহাদেবপুর ভূমি অফিস যেন দালালদের অভয়ারণ্য। খারিজ আবেদন করলে বানোয়াট ভুল ধরে ফাইল আটকে দিয়ে আবেদনকারীকে দালাল ধরতে বাধ্য করা হয়। দালাল না ধরলে কোন কাজই হয় না। ভূমি কর্মকর্তার পছন্দের দালালকে টাকা না দেয়ায় আমি আমার জমির ডিসিআর পাইনি। আমরা যদি এসিল্যান্ডের কাছে ভূমি অফিসের কোন সমস্যার সমাধান না পাই তাহলে কার কাছে যাবো।

দালাল ধরার পরামর্শ দেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে মহাদেবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি কখনো কাউকে দালাল ধরার পরামর্শ দেয়নি।সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা খাতুন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমান দালালদের দৌরাত্ম কমেছে। প্রত্যেকটা শুনারির সময় সেবাপ্রার্থীদের জিজ্ঞেস করা হয় কোথাও টাকা-পয়সা দিতে হয়েছে কিনা এবং ভোগান্তির সম্মুখিন হতে হচ্ছে কিনা। এ বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ নেই। যদি কেউ কোন বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মিজানুর রহমান বলেন, আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই