বিস্তারিত বিষয়
নওগাঁয় আর চোখে পড়ে না ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা
নওগাঁয় আর চোখে পড়ে না ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা
[ভালুকা ডট কম : ০৯ ফেব্রুয়ারী]
এক সময়ে নওগাঁর আত্রাইয়ের নদীগুলোতে সারি সারি পাল তোলা নৌকা চোখে পড়লেও সময়ের বিবর্তণ, জৌলুস হারানো নদ-নদীর করুণ অবস্থা আর যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে এই পাল তোলা নৌকা। আবহমান গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা। হাতে গোনা দু’একটা পালের নাও বাদামী নাও চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না আর ধরে না।
নওগাঁ জেলার ছোট যমুনা নদীবেষ্টিত আত্রাই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নৌকা, ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন নৌকার সম্পর্ক। দশ থেকে পনেরো বছর আগেও দেশের পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সারি সারি নৌকা। এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। স্বচ্ছ পানির কলতান আর পালে লাগা বাতাসের পত পত শব্দ অনুভূতি জুগিয়েছে প্রাণে। পালতোলা নৌকায় নদী ভ্রমণে যতটা না তৃপ্ত হতো মন তার চেয়ে দূর পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরীর পাড় থেকে সারি সারি নৌকার ছন্দবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল উড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মনপ্রাণ আনন্দে নেচে উঠেছে।
আত্রাইয়ের বুক চিরে বয়ে চলা যমুনা নদীর পাড়ে দল বেঁধে মানুষ পালতোলা নৌকার সে দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ায়ি আসতো। আর মাঝনদী থেকে ভেসে আসা দরাজকণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মনে তৃপ্ত এনে দিতো। নদীকে ঘিরে এক সময় পালতোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। এপাড় থেকে ওপাড়ের যাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত নৌকা। তবে কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা এখন অতীত। এখন নদীতে যেটুকু সময় পানি থাকে বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নৌকা চলাচল করে। পালতোলা নৌকার দেখা মিলে না। এক সময় সাম্পন, যাত্রীবাহী গয়না, একমালাই নৌকা, কোষা নৌকা, ছিপনাও, ডিঙিনৌকা, পেটকাটা নাও, বোঁচা নাও সহ বিভিন্ন ধরণের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল।
যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকা। কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল এবং দাঁড়-বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। মাঝেমধ্যে দু’একটা পালের নাও এখনো নদ-নদীতে দেখা যায়। পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন তাঁদের অমূল্য সৃষ্টি কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি। প্রখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছেন উঁচু মানের শিল্পকর্ম। শুধু দেশী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী বা রসিকজনই নন বরং বিদেশী অনেক পর্যটকের মনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পালের নাও।
বিভিন্ন আকার ও ধরণের নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াত ও পরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর এ সব নৌকা চালানোর জন্য পালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। হাজারীপাল, বিড়ালীপাল, বাদুরপাল ইত্যাদি পালের ব্যবহার ছিল নৌকাগুলোতে। পালের নৌকার পাশাপাশি মাঝিদেরও বেশ কদর ছিল একসময়। প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের হিসেব রাখতে হতো জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের। কথিত আছে, বিজ্ঞ মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর। রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার উপর। তাই আগেভাগেই শিখে নিতে হতো কোন তারার অবস্থান কোন দিকে।
এ বিষয়ে শিরোনাম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক এমরান মাহমুদ প্রত্যয় বলেন,নৌকাই ছিলো আদি বাহন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন নৌকা বা ট্রলারেরও আবেদন রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।
আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে যান্ত্রিক যানবাহনের ভারে হয়তো হারিয়েই যাবে আমাদের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পালের নাও। হাতে গোনা দু’একটা চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না ধরে না। আগে ঘাটে সারি সারি পালতোলা নৌকা বাঁধা থাকতো। এখন সেই ঘাট দখল করে নিয়েছে শ্যালো ইঞ্জিলচালিত নৌকা। এসব নৌকার ভট ভট বিকট শব্দে নদীর শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। কালের আবর্তে এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা ভুলে যাবে,পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও ইত্যাদি ছড়া। বিচিত্র রঙের পালের বাহারিতে ঝলমল করবে না, এ দেশের নদ-নদী, খাল-বিল।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
জীবন যাত্রা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- নওগাঁয় আশার দিনব্যাপী ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প [ প্রকাশকাল : ১৮ মার্চ ২০২৪ ০১.৩৪ অপরাহ্ন]
- কালিয়াকৈরে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার আত্মহত্যা [ প্রকাশকাল : ১৬ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- ইছামতি নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার [ প্রকাশকাল : ১৩ মার্চ ২০২৪ ০২.১০ অপরাহ্ন]
- কুমিল্লায় ট্রাক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো ৩ [ প্রকাশকাল : ১২ মার্চ ২০২৪ ০৪.৩১ অপরাহ্ন]
- নওগাঁর মাতাজীহাটে বসতবাড়ী ভাংচুর [ প্রকাশকাল : ১১ মার্চ ২০২৪ ০৫.১০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ [ প্রকাশকাল : ০৩ মার্চ ২০২৪ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় হোটেলের জরিমানা লাখ টাকা [ প্রকাশকাল : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৪.০৫ অপরাহ্ন]
- মনপুরায় ভিজিএফ কার্ডের চাল জব্দ [ প্রকাশকাল : ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৩.১০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে দ্বন্দ্বে মাথার চুল হারালো রোজিনা [ প্রকাশকাল : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.৩০ অপরাহ্ন]
- মনপুরায় অবৈধ জাল পুড়িয়ে ধ্বংস [ প্রকাশকাল : ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- বেনাপোল ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অব্যাহত [ প্রকাশকাল : ২৯ জানুয়ারী ২০২৪ ১১.৪৭ পুর্বাহ্ন]
- নওগাঁয় পুনাকের শীতবস্ত্র বিতরণ [ প্রকাশকাল : ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় তাপমাত্রার পারদ ৮ডিগ্রির ঘরে [ প্রকাশকাল : ২২ জানুয়ারী ২০২৪ ০৬.০০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ [ প্রকাশকাল : ২১ জানুয়ারী ২০২৪ ০১.২০ অপরাহ্ন]
- মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে যশোরের মানুষ কাবু [ প্রকাশকাল : ২০ জানুয়ারী ২০২৪ ০৯.০৫ পুর্বাহ্ন]