তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী

গৌরীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি ফজলুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
[ভালুকা ডট কম : ১৪ মে]
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি ফজলুল হকের আজ (১৪মে) বৃহস্পতিবার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। মরহুম মৌলভী জলফু মিয়া ও মোছাঃ আনোয়ারা বেগমের ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ২য় সন্তান। ১৯৪৭ সালে ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন।

ছোটবেলা থেকেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে গৌরীপুরের আনাচে-কানাচে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে দাবী আদায়ে বিভিন্ন ধরণের প্রচারণা করেন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করলে পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে পুরো বাংলাদেশের মতো ফজলুল হকের নেতৃত্বে গৌরীপুরও গর্জে উঠে। আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ’৬৯ সালে গৌরীপুর কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। এরপরই গণঅভূত্থানের ডাকে গৌরীপুর সরকারি কলেজ ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিনই গৌরীপুরের রাজপথে শ্লোগান-মিছিলের অগ্রগণ্য ছিলেন তিনি। জানুয়ারী মাসে আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠলে তা সফল করার লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে ২৭ জানুয়ারী সরকারি কলেজ থেকে একটি মিছিল মধ্য বাজারে আসলে পাকিস্তানি সরকারের পেটুয়া পুলিশবাহিনী গুলি চালালে তারই সহপাটি আজিজুল হক হারুন গুলিতে নিহত হন, তারপরও তিনি আন্দোলনের পথ থেকে দমে যাননি। গণআন্দোলনকে চাঙ্গা করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গা পিকেটিং করেছেন, ছাত্র-জমায়েত করেছেন এবং আন্দোলনকে সফলও করেছেন। তিনিই তার পরের বছর থেকে সহপাটি হারুনের স্মরণে মধ্যবাজার একটি জায়গার নামকরণ করেন হারুন পার্ক এবং দিবসটি পালন করে আসছিলেন আমৃত্যু পর্যন্ত।

ভিপি ফজলু ’৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে গৌরীপুরের বিভিন্ন জায়গায় বাংলার স্বাধীকারের পক্ষে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ’৭০ এর নির্বাচনের সময় একবার কলতাপাড়া হয়ে বঙ্গবন্ধু নান্দাইলে আওয়ামীলীগের প্রচারণা যাওয়ার সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে গৌরীপুরে নিয়ে আসবেন এই জন্যই রাস্তায় শুয়ে অবরোধ করেন, কিন্তু সময় না থাকায় বঙ্গবন্ধু তাকে ধমক দিয়ে সরতে বললেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে আদর করে ফজলু (তুই) বলে ডাকতো। সত্তরের নির্বাচনে গৌরীপুরের এমসিএ হাতেম আলী মিয়াকে বিজয়ী করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। একাত্তরে তিনি দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য ২৭ বৎসর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ভারতের তোড়ায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ২৯ দিন অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ গ্রহন শেষে ১১ নং সাব সেক্টরের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর নির্দেশনার জন্য সদা সর্বদা এস,এল,আর নিয়ে প্রস্তুত থাকতেন। যুদ্ধে প্লাটনের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মৃত্যুর আগে তিনি একবার স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, “জেক্সগ্রাম থেকে জুন মাসে আমাকে এক কাজে নেলুয়াগিরি মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে যেতে হয়। ক্যাম্পে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা শিবু প্রসাদ খাওয়ার পর তার প্লেটে ডিম দিয়ে ভাত দিয়ে খেতে দেয় এবং সে বাহিরে পাহারায় বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই একটা এল,এম,জি’র গুলির শব্দ শুনা যায়। গুলিটি শিবুর গলায় বিদ্ধ হয় এবং মারা যায়। এরকম আরো অনেক লোমহর্ষক ঘটনা রয়েছে স্মৃতিতে।”

আরেকটি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, “যুদ্ধের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বিজয়পুর পাকবাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করি। এই যুদ্ধে দুর্গাপুরের সহযোদ্ধা সন্তোষ শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ রায়, ছোট ফজলু ও আমি গ্রেনেড প্রিন্টার লেগে আহত হই। আমরা বিভিন্ন দিক থেকে যুদ্ধ করে ৮ডিসেম্বর গৌরীপুর মুক্ত করি।”

স্বাধীনতা উত্তর সময়ে তিনি গৌরীপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের গৌরীপুর থানা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে গৌরীপুর থানা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং হারুন পার্ক সংলগ্ন শ্রমিক ইউনিয়নের জায়গা বরাদ্দ করে শক্তিশালী শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলেন। ১৯৮১ সালে গৌরীপুর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ দ্বিধাবিভক্ত হলে বাকশালে যোগ দিয়ে তিনি গৌরীপুর উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মৃত্যুর আগে কথা বলার সময় মুক্তিযুদ্ধের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, “আমার জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধরু খুনিদের ও যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে পেয়েছি।”

ভিপি ফজলুল হকের ছেলে রাজীবুল হক বলেন, ‘আমার বাবার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকট মোকাবেলা ও পবিত্র মাহে রমজানের জন্য কবর জিয়ারত ও ঘরোয়াভাবে পালন করা হবে। রাজীবুল হক বাবার জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন।’ এ উপলক্ষে পরিবার থেকে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

ভিপি ফজলুল হক একজন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, সদা হাস্যেজ্বল, রসিকজন হিসেবে ছোট-বড় সবার মাঝেই ছিলেন জনপ্রিয়। তিনি চিরদিন গৌরীপুরের মানুষের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন। #

*



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

শোক সংবাদ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই