তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

অনন্ত সাহেবের ‘ঈদ আনন্দ’ উপহার

অনন্ত সাহেবের ‘ঈদ আনন্দ’ উপহার
[ভালুকা ডট কম : ২৫ মে]
সারাদিনের কাজ শেষে অনন্ত যখন বাসায় ফিরলো ততক্ষণে ম্যানেজার আদিল বস্তা গোছানোর কাজে ব্যাস্ত। অন্তু ঘরে ঢুকেই খেয়াল করলো উকিল সাহেবের কাছ থেকে খামগুলো এসেছে। একপলক দেখে ও চলে গেল বাথরুমে। প্রতিবার বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে গোসল করা, সাবান পানিতে কাপড় ভেজানো, মোবাইল ও অন্যান্য জিনিসগুলো স্যানিটাইজ করা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে সে খাম গুলোতে নাম লিখছে আর ভাবছে, ঠিক সময়ের মধ্যে কাজগুলো করতে হবে।

এমন সময় আদিল এসে বললো “স্যার আগামীকাল তো ঈদের নামাজ মসজিদে পড়তে হবে”। আদিল দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তাই আওয়াজ একটু বেশি ছিল।“ঠিক আছে আদিল, তোমাকে যে তালিকা দিয়েছিলাম তার সবগুলো করা গেছে তো” ? “জ্বি স্যার সব কাজ ঠিক মতোই হচ্ছে। কিন্তু স্যার এবার একদিনে, তাও আবার সকালের মধ্যে সব পৌঁছাতে পারবো কি না। প্রতিবার তো অন্য সিস্টেম থাকে”। “সমস্যা হবে না, যেভাবে প্ল্যান করা আছে তুমি তা ফলো করবে। মন্টু, রুমি আর বাবু কে তোমার সাথে যেতে বলছি। তোমরা ভোরে বের হবে, পিক-আপের ড্রাইভারদের হেল্প নিবে। মনে রেখ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে”। আদিল কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সে তার স্যারকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল কী অদ্ভুত! লোকটির কথা বলায় জাদু আছে।“শোন তোমরা প্রত্যেকে কাজ ভাগ করে নিবে, তালিকা ধরে বিতরণ করবে। প্রতিটি ঘরের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করবে। কোন ঘরে কী লাগবে তার তালিকা অনুযায়ী সব গোছানো আছে নিশ্চয়”।“জ্বি স্যার, আমি চেষ্টা করেছি”।

আদিল আবার বৈঠক ঘরে এসে বসলো। এ বাড়ির সবকিছুই খুব স্নিগ্ধ। চারপাশের সব কাঠামো ছিমছাম, জ্যামিতিক মাপে করা, ভুল নেই কোথাও। দিক বুঝে সবুজের সমারোহ আছে। বুনোফুল থেকে শুরু করে সাহেবী জাতের ফুল, ফল ও কাঠ গাছ পর্যন্ত আছে। ফুলের সুবাস আর ফলের মৌ মৌ গন্ধ আসছে নাকে। সবকিছুই খুব ছন্দময় বিশৃঙ্খলা নেই কোথাও।
অনন্ত সাহেবকে এই এলাকার সবাই খুব ভালবাসে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ এক সময় খুব অভাবে ছিলো। তবে মানুষের পরিশ্রম করার মতো উদ্যম ছিল। সামর্থ্যবানেরা শহর কেন্দ্রিক বা প্রবাসে চলে যেতো। অনন্ত সাহেব দৈব ঘটনায় এখানে আসার পর মানুষকে মানব সম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে শুরু করেন। তাঁর জাদুকরী ব্যাক্তিত্ব আর কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষের অভাব দূর করতে সহায়তা করলেন। এভাবেই মানুষকে জয় করলেন। এই এলাকায় তাঁর পৈতৃক কোন এক সূত্র আছে বলে জনশ্রুতি আছে।

গল্পের মতো এ বিষয়টি নিয়ে কেউ ঘাটায় না। কারণ সবাই তাঁর দ্বারা উপকৃত। এ এলাকায় এখন সবাই মোটামুটি সচ্ছলতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে। অনন্ত সাহেবের বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে। বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তা পরিচালনা করেন। প্রচুর পরিশ্রমী অনন্ত সাহেব সবদিক সামলাতে পারেন। কিন্তু লোকটি কেন যেন এখানেই থাকতে পছন্দ করেন। পরিবার বলতে কেউ নেই,  তিনি একাই আর আমরা যারা উনার পাশে থেকে কাজ করি। দুটি বৃদ্ধাশ্রম আর দুটি এতিমখানার প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা। গত তিন চার বছর যাবত ফেব্রুয়ারি- মার্চের দিকে সিঙ্গাপুর যেতেন, এ সময়ে কাউকে কিছু জানাতেন না। ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাইতেন। তাই কেউ বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কৌতুহল দেখাতেন না। এসব ভাবতে ভাবতেই আদিলের কাজ এগুচ্ছে।

ঠিক ভোর সাড়ে চারটায় অনন্ত এসে আদিলকে বেশ কিছু খাকি খাম দিয়ে বললো, “উপরে লেখা নাম অনুযায়ী খামগুলো পৌঁছে দিও। খুব কনফিডেনসিয়াল কিছু আছে তাই যত্ন করে নিও। আর এ খামগুলো কেবল আগামীকাল খুলতে বলো। এখন কাজে বেরিয়ে যাও, কাজ শেষে যার যার বাড়ি যাবে। আজ এদিকে আর আসার দরকার নেই। আগামীকাল ভোরে আসবে”।  
হটাৎ নরম গলায় বললো, “আদিল শোন বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানা গুলো আপন করে দেখবে, ওদের খোঁজ খবর রাখবে”। প্রতি ঈদের মতো এবারো অনন্ত সাহেবের “ ঈদ আনন্দ” নামক উপহারের বস্তাগুলো আদিল ও তার সহকারীরা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিল। প্রতিবারের তুলনায় এবারের বস্তাগুলো অনেক ভারী।   

হঠাৎ আদিল খেয়াল করলো খামগুলো বেশ বড় সাইজের, ভিতরে ডকুমেন্টস জাতীয় কিছু হবে হয়তো। অবাক হলো একটি খামের উপর নিজের নাম দেখে।  অফিসের অনেকের নামও আছে। “যা হোক পরে দেখা যাবে, আগে এগুলোর ব্যবস্থা করা যাক”।সব কিছু ঠিকঠাক শেষ করে আদিল বাসায় ফিরলো। এবারের ঈদ আয়োজনে ভিন্নতা থাকায় সবাই যার যার ঘরেই ব্যাস্ত হয়ে গেল।

অনন্ত আজ আর বাইরে বের হলো না। প্রতিবার ঈদের বিকেলটা ও বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানায়  কাটায়। বিভিন্নরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আনন্দ মেলা হয় সেখানে। খেলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা থাকে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান থাকে। প্রতিযোগিতায় জয়ের আশায় বৃদ্ধ মানুষগুলো ও কিছুক্ষণের জন্য দুরন্তপনায় মেতে উঠে। “জীনটা মনে হয় এমনি, কোন আশা থাকলে, আনন্দ থাকলে প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে, জেগে ওঠে কর্মশক্তি আর উদ্দীপনা”। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন দিনের আলো নিভে গেছে। অনন্ত’র শরীরটাও বেশ অবস হয়ে আসছে। শেষ বিকেলে অনন্ত এসে বসেছিল ওর পছন্দের বারান্দায়, যেখান থেকে পাশের বনটাকে কাছ থেকে দেখা যায়।    

রাতের গভীরতা বাড়ছে, ঈদের আনন্দ বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে, বুনোফুলেরা মিশ্র গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দু একটা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ ভেসে আসছে, ঝিঝি পোকারা দলবেঁধে গান করছে। চারপাশের অন্ধকার নিকশ কালো হয়ে ঝাপটিয়ে ধরছে। মাথার ভিতরে ঝিম ঝিম করছে, অনুভূতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।

লেখক,বার্তা প্রেরক   
জাহাঙ্গীর আলম তরফদার
প্রভাষক, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
সরকারি এম এম আলী কলেজ, টাঙ্গাইল।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

জীবন যাত্রা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই