তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় মৌসুমী ফল ফসলের কারিগড় পাহাড়ী

ভালুকায় মৌসুমী ফল ফসলের কারিগড় কাসেম পাহাড়ীর সফলতা
[ভালুকা ডট কম : ২৫ জুন]
ভালুকা উপজেলার সাতেঙ্গা গ্রামে বঙ্গবন্ধু পাহাড়ী বাগান বিলাস এন্ড এগ্রোসীড কোম্পানীর মালিক আবুল কাসেম পাহড়িীর নানা প্রযুক্তির কৃষি নৈপুন্যতায় মৌসুমী ফল ফসল আর নানা শাক সবজির আবাদে ব্যাপক সফলতা এসেছে। ২৪ জুন বুধবার সরজমিন গেলে দেখাযায় প্রবেশ দ্বার হতে বাড়ী পর্যন্ত দুই সারিতে ছোপায় ছোপায় লাল রঙ্গন ফুল ফুটে রয়েছে আগন্তককে স্বাগত জানাতে। ডানে বামে সামনে আম, কমলা, মাল্টা সহ নানা ফল ফলাদির গাছ। ছোট্র লেকে ফুটে আছে লাল শাপলা আর মাঝে মাঝে রক্ত জবা আর মৌ চন্ডাল ফুল। লেবু, পেয়ারা, চেরি করমচায় ঝুকে আছে মাটির উপরে ছোট বড় ডাল। এক ঝাক হাঁসের বাচ্চা উঠান ময় দৌড়াচ্ছে দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়।

কথা হয় কাসেম পাহাড়ীর সাথে। তিনি জানান গত কয়েক মাসে মৌসুমী ফল ও শাকসবজি বিক্রি করে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। দেশে বৈশ্বিক মহামারির কারনে তাজা শাক সবজি ও লেবুর ব্যাপক চাহিদার সময় তিনি ভাল দাম পেয়েছেন। লেবু ১০ হাজার টাকা,আতাফল ৩ হাজার, মিষ্টি কুমড়া ৮ হাজার, চাল কুমড়া ১২ হাজার, লাল শাক ৪ হাজার,চাল কুমড়ার শাক ১০ হাজার, লটকন ৫ হাজার, মিষ্টি বড়ই ১২ হাজার,হাঁস মুরগী ১০ হাজার, কাঁচা পেপে ২০ হাজার, সবরি কলা ২০ হাজার, পেয়ারা ১০হাজার ও মাছ ২০ হাজার টাকা। এ ছারা বর্তমানে দেশী আম, আম রোপালী, কাঠাল, জামবুরা, করমচা, বারমাসি লেবু, চায়না কমলা, কদবেল, চেরিফল, চালকুমড়া, পেয়ারা সহ বেশ কিছু ফসল কিছুদিনের মধ্যেই বিক্রয়োপযোগী হবে। বাগানের উপার্জিত মুনাফা হতে সংসার খরচ চালিয়ে এ বছর বাড়ী ঘরের সংস্কার কাজ করেছেন। দুই মেয়ের লেখাপড়া সহ নানা প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন তার কৃষি বাগান হতে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। গত বছর গাজীপুর খামার বাড়ী হতে কৃষি কর্মকর্তাগণ তার বাগান পরিদর্শন করে গেছেন।

তিনি জানান কোটি কোটি কৃষকের প্রাণের নেতা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ধারণ করে তিনি দুই একর জমিতে ১৯৯৩ সনে এই কৃষি বাগানটি করেছেন সম্পুর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে। শুরুতে দেড় লাখ টাকা খরচ করে একটি স্যালু মেশিন স্থাপন করেছেন জমিতে সেচ কার্যক্রম চালানোর জন্য। একপাশে ১৫ ফিট প্রস্থে ৭/৮ ফিট গভীর করে প্রায় দেড় দুইশত ফিট লম্বা একটি খালের মত তৈরী করে তাতে দেশী শিং মাগুর, টাকি,কার্পু, সরপুটি মাছের চাষ করেছেন। প্রথমে তিনি চন্দন কাঠের বাগান করেন। লাভ জনক না হওয়ায় পরবর্তীতে আকাশ মনির বাগান করে প্রায় ৫ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেন। ২০১৭ সালে কলার বাগান করে প্রথমে দেড় লাখ টাকার কলা বিক্রি করেন। পরে ওই বাগান হতে ৮০ হাজার টাকার কলা বিক্রি করেন।

“কৃষকের এক শতাংশ জমিও যেন পতিত না থাকে” মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাষনটি শোনার পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন বাড়ীর জমিটুকু বাদ দিয়ে সমস্ত জমিতেই তিনি চাষাবাদ করবেন। এর পর হতে যে জমি সবুজ ঘাসে ভরা সম্পুর্ণ গোচারণ ভূমি ও চলাচলের রাস্তা ছিলো দিন রাত পরিশ্রম করে কোদাল কুপিয়ে সেখানে তিনি ফল ও ফসলের আবাদ শুরু করেন।

কিছু জমিতে বছরের খোরাকি হিসেবে ধানের আবাদ করেন। আবার কিছু জমিতে মৌসুমী ফসল মিষ্টি লাউ, শীতলাউ, সীম, শশা, গাজর, টমেটো, ধনিয়া, খীরা ইত্যাদি চাষ শুরু করেন। ফলের মধ্যে বারো মাসি জাতের বিভিন্ন ফল সহ মৌসুমী ফল যেমন কাঠাল, আম,জাম, জামরুল, টক ও মিষ্টিকুল, কদবেল, গোলাপজাম, করমচা, জাম্বুরা, তেতুল, আতাফল, বিভিন্ন জাতের পেপে, দেশী,রঙ্গীন ও কাজু পেয়ারা, সজনা বিভিন্ন জাতের লেবু তিনি আবাদ করেন। এ ছারা বাড়ীতে রয়েছে দেশী হাঁস মুরগী ।  নিজে খেয়ে আত্মীয় সজনদের বিলিয়ে বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করে থাকেন। সংসার খরচ ও উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বছর শেষে ৪০/৫০ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে।

স্ত্রী আছিয়া খাতুন রিনা গৃহস্থালীর পাশাপাশি তাকে কৃষি কাজে সাহায্য করেন। বড়মেয়ে লুৎফুনন্নাহারের বিয়ে হয়েছে, মেঝো মেয়ে তাছমিয়া ফোরকান (১৩) সাতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে আফনান হাদিছা (১০) ষষ্ঠশ্রেণীতে লেখাপড়া করেন। ফল ফসল ছাড়াও বিভিন্ন ফুলের গাছে ভরা তার ছোট কৃষি বাগানটি নজর কারার মত। বাগানটিতে সারা বছর তিনি নিজের পরিশ্রমের দ্বারা ফল ও ফসল উৎপাদন করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। তবে মুলধনের অভাবে কৃষি খামারটি ব্যাপক পরিসরে বিস্তার লাভ করতে পারছেননা।

ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের এ গ্রামটি বিল বিলান্তি ও ছোট বড় উঁচু টেক টিলা বেষ্টিত আধা পাহাড়ী  অঞ্চল হিসেবে অপার সৌন্দর্যের দৃষ্টি নন্দন দৃশ্যপটে ভরপুর। আবুল কাসেম পাহাড়ী মনে করেন ইচ্ছে ও বুদ্ধি খাটিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করতে পারলে অল্প জমিতে কৃষিতে যে কোন লোক অনায়াসে বেকারত্ব দুর করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। তবে এ জন্য চাষাবাদ সংক্রান্ত উপযুক্ত জ্ঞান, কলা কৌশল ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ফেলে রাখা পতিত জমি গুলি কৃষি আবাদের অন্তর্ভূক্ত করে প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি পাড়া, গ্রাম তথা দেশকে খাদ্যে সয়ং সম্পুর্ণ করে অর্থ নৈতিক সমৃদ্ধি অর্জণ সম্ভব।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই