তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করার দাবি

কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করার দাবি চিকিৎসক সংগঠনের
[ভালুকা ডট কম : ০৩ জুলাই]
দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করা এবং বিনা মূল্যে কোভিড- ১ এর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার সকল দায়িত্ব সরকারকে গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট।

করোনা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য বাজেটের প্রেক্ষাপটে জরুরী করণীয়  প্রসঙ্গে আজ (শুক্রবার) সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট একটি দশ-দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। একই সাথে স্বাস্থ্য সেবা খাতে বাজেট বৃদ্ধি, জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, চিকিৎসা গবেষণায় অধিক মনোনিবেশ এবং সার্বিকভাবে চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে পুনর্বিন্যাসেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে, সংগঠনের সভাপতি ডাক্তার কাজী রকিবুল ইসলাম বলেন, করোনার এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মৃত্যু ও সংক্রমণ কমিয়ে আনতে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির মতো সরকারের সকল প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক শক্তি একযোগে সমন্বিতভাবে কাজ করতে না পারলে আমাদের করুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

কোভিড-১৯ কে “জাতীয় দুর্যোগ” ঘোষণা দাবি সমর্থন জানিয়ে চিকিৎসকদের অপর একটি সংগঠন ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ- এর আহবায়ক প্রফেসর ডাক্তার রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সরকার জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে যা স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব নয় সরকার যদি জনগণের জীবন সুরক্ষায় এরকম কিছু করে তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত সুরাহা আসতে পারে।

ওদিকে, ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট তাদের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে করোনা নমুনা পরীক্ষা ফি সংক্রান্ত পরিপত্র বাতিল এবং সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালসমূহকে রিকুইজিশন করে কোভিড ও নন-কোভিড সব ধরনের রোগীকে সেবার ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছে।

চিকিৎসকদের এ সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশ ঘটেছে গত জুন মাসে। তবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম হওয়ায়, এমনকি উপসর্গযুক্ত অনেক ব্যক্তি নমুনা সংগ্রহের আওতায় না আসতে পারায় দেশে মোট রোগীর ও মৃত্যুর সংখ্যার হিসাবে গড়মিল থেকেই যাচ্ছে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে করোনা পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করায়, দরিদ্র জনগণ টেস্ট করাতে নিরুৎসাহিত হবে, যা করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা আড়াল করার একটি অপচেষ্টাও বটে। এখানে উল্লেখ্য যে পার্শ্ববর্তী সকল দেশেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে করোনা পরীক্ষা বিনামুল্যে করা হয়।

সংক্রমণের ধারা বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে ১ জন রোগী সনাক্ত করতে গিয়ে যদি ১০ থেকে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় তবে পরীক্ষা পর্যাপ্ত হয়েছে বলে ধরা যায়। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছনে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া সবার নিচে।

ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেছে, রোগ প্রতিরোধের শিথিলতার কারণে সম্ভাব্য যে সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হবে তার যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া আমাদের হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, দুর্বল ভৌত অবকাঠামো, মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, দক্ষ জনবলের অপ্রতুলতা, চিকিৎসক সহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীর স্বল্পতা ও আর্থিক সামর্থ দিয়ে যে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না; তা বিভিন্ন মহল থেকে বার বার বলা হয়েছিল।

আমরা সকরুণ দৃষ্টিতে, জীবন দিয়ে, মৃতের সংখ্যা গুণে তা' এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। এখন হাসপাতাল, বাসা সর্বত্র রোগীর আহাজারি; নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ আর নিবিড় পরিচর্যা বিছানার অভাবে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। ইতিমধ্যে আমরা হারিয়েছি ৭০জন চিকিৎসক সহ অনেক সেবিকা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে, সম্মুখ যোদ্ধাদের মৃত্যুর এ হার বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। হারিয়েছি দেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তি, পদস্থ কর্মকর্তা ও সাংবাদিক সহ  বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার আরও অনেককেই।

শিল্প বাঁচানোর নামে, শ্রমিকদের জীবিকার নামে কল-কারখানাবিশেষতঃ পোশাক শিল্প খোলা-বন্ধের খেলা, ঈদের সময় পরিবহন চালু করা না-করার সিদ্ধান্তহীনতা এবং দোকানপাট শপিংমল খোলায় মানুষের অবাধ যাতয়াতের (স্বাস্থ্যবিধি না মেনে) ফলে করোনার সামাজিক সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তার ঘটার যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল তার বাস্তবরূপ এখন দেখতে পাচ্ছি। এ বিষয়ে সরকার গঠিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সঠিকভাবে আমলে নেওয়া হয়নি, যদিও তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বলে প্রচারের চেষ্টা চলছে।

এ মহাদুর্যোগের সময়েও সরকার ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনেকেই মূল সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিবর্তে, আমলাতান্ত্রিক খেলার মাধ্যমে সংকটের দায়ভার চিকিৎসক সমাজ ও জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে আবারও চিকিৎসক ও জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। জাতির এই চরম সংকটকালীন সময়েও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী ও থাকা-খাওয়া, চিকিৎসার যনত্রপাতি এবং দরিদ্র জনগণের রিলিফ সামগ্রী ক্রয় ও বিতরণ নিয়ে থেমে নেই দুর্নীতি, চৌর্যবৃত্তি ও মিথ্যাচার। মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী ও সুরক্ষা সামগ্রীর স্বল্পতা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর অধিক মৃত্যু হারের অন্যতম কারণ বলে সকলেই মনে করেন, তাও আবার ক্রয় করা হয়েছে চড়া দামে। সরকারের উপর মহল থেকে প্রতিনিয়ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' এর বাণী শোনানো হলেও কার্যত তা' দৃশ্যমান নয়।

সম্প্রতি চীন থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন।পাশাপাশি এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসাও করেছেন। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমাদের জনস্বাস্থ্যবিদ ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মনে করেন এখনো আমাদের সংক্রমণের পূর্বাভাস মেনে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সুতরাং বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয় সর্বশেষ সু্যােগটিও হাতছাড়া করলে দেশবাসীকে চরম মূল্য দিতে হবে।

ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট মনে করে স্বাস্থ্যের সংগ্রাম চিকিৎসকদের একার বিষয় নয়, শুধু চিকিৎসকদের পক্ষে তা' অগ্রসর করা সম্ভব ও নয়। মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বিত 'সার্বিক স্বাস্থ্য আন্দোলন'গড়ে তোলা ছাড়া সামনে কোনো বিকল্প নেই।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই