তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় বাড়ছে কিনডি রোগীর সংখ্যা

নওগাঁয় বাড়ছে কিনডি রোগীর সংখ্যা: প্রয়োজনীয় তুলনায় যন্ত্রপাতি ও জনবল কম
[ভালুকা ডট কম : ১৫ মার্চ]
নওগাঁ আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টারে প্রতি বছর বেড়েই চলছে বাড়ছে কিনডি রোগী।  সেবার মান ভাল হওয়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও এ হাসপাতালে আসছেন কিনডি রোগীরা। নিজ জেলায় এবং বাড়ির পাশে ভাল সেবা পাওয়ায় একদিকে যেমন খরচ সাশ্রয় হচ্ছে, অপরদিকে ভোগান্তীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে রোগীরা। তবে প্রয়োজনীয় তুলনায় যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অপরদিকে ‘হেপাটাইটিস বি পজেটিভ মেশিন’ না থাকায় রোগীদের অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে। কিনডির চিকিৎসায় পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল দেয়ার দাবী জানিয়েছেন রোগী ও সচেতনরা।

নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের আগষ্টে মরহুম জননেতা আব্দুল জলিল নওগাঁরবাসীর সুবিধার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সৌজনে দুই শয্যা বিশিষ্ট ‘আব্দুল জলিল হেমো ডায়ালাইসিস সেন্টার’ চালু করেন। এরপর ২০১৩ সালে আরো তিনটি মেশিন বাড়িয়ে মোট পাঁচটি মেশিনে দিয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ডায়ালাইসিস চালুর পর থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৮ হাজার ৪২১জন রোগী সেবা নিয়েছেন। একজন রোগী ডায়ালাইসিসের জন্য প্রথমে ২ হাজার ৯শ টাকা খরচ হয়। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ১ হাজার ৯শ টাকা করে খরচ হয়। চারটি ধাপ শেষ হলে আবার নতুন করে ২ হাজার ৯শ টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস শুরু করতে হয়।

ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এক শিফটে পাঁচটি মেশিনের সাহায্যে সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে মেশিনের সংখ্যা কম হওয়ায় ডায়ালাইসিস সেন্টারে তালিকাভুক্ত রোগীদের সিরিয়াল অনুসারে ডেকে সেবা দেয়া হয়। এখানে কিনডি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই হাসপতালে কর্মরত ডাক্তার এবং সেবিকারা চিকিৎসা দিচ্ছেন। গত ৮ বছরে হাসপাতালে কিনডি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি যন্ত্রপাতি। জেলার ১১টি উপজেলা ছাড়াও বগুড়া, জয়পুরহাট জেলা থেকেও কিনডি রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে রোগীর চাপ, অপরদিকে পর্যন্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় রোগীদের ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে।

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য শরীরে দু’টি কিডনির ভূমিকা অপরিসীম। যদি এটি নষ্ট হয়ে যায় পুনরায় শরীরে স্থানান্তর করা সম্ভব না হলে মৃত্যু অবধারিত। তারপরও মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপন লড়াই করে চলছেন নিজ দেশ ছেড়ে বাহিরের দেশে চিকিৎসা। অনেকে আবার জীবনের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দেন। কেউ বেঁচে থাকেন। আবার কেউ মৃত্যু সাথে লড়াই করে হেরে যান।

নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার বাসিন্দা গৃহবধু সোহানী কাদের সানজু বলেন, গত চার বছর আগে ঘাড়ে প্রচুর ব্যাথা হতো। পেশার মাপার পর হাই পেশার দেখা যায়। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন চেকাপের পর দেখা যায় দুটো কিনডি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রথমে বগুড়াতে ডায়ালাইসিস করা হয়। এরপর গত সাড়ে তিন বছর থেকে সদর হাসপাতালে সপ্তাহে দুইবার চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাড়ির পাশে যেমন ভাল সেবা পাচ্ছেন, অপরদিকে ভোগান্তীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।

শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা বয়জ্যেষ্ঠ গোলাম রাব্বানী বলেন, তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। গত তিনমাস আগে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাওয়ার পর সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিনডিতে রোগ ধরা পড়ে। বাড়ি থেকে বার বার বলা হচ্ছিল ডায়ালাইসিস নিতে হবে। আমি নিতে চাই ছিলাম। শেষে বাধ্য হয়ে ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে।

বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের সূচরিতা দেবনাথ বলেন, গত দুই বছর আগে কোমরে ব্যাথা অনুভব করেন। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে গ্যাসের ও ব্যাথার ট্যাবলেট খেতে থাকেন। কিন্তু কোন উপশম না হওয়ায় শরীর ও পা ফুলতে থাকে। এরপর ভারতে গিয়ে ধরা পড়ে কিনডির সমস্যা। সেখানে ৩২ দিন চিকিৎসা শেষে ফিরে আসি। এতে খরচ হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। এরপর সপ্তাহে দুইবার নওগাঁ আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। বাড়ির পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে নওগাঁ শহরে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি। চিকিৎসা শেষে সহজেই বাড়ি ফিরে যেতে পারছি।

গৃহবধু সোহানী কাদের সানজ’রু স্বামী রায়হান শামীম বলেন, রোগীকে ভাল খাবার দিতে হয়। ডায়ালাইসিসের পাশাপাশি ঔষধপত্র কিনতে হয়। এক কথায় এ রোগীদের প্রচুর টাকা খরচ হয়। একটা পরিবারে যখন এ রোগ চলে আসে যা সম্পূর্ন দূভার্গ। যা সবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়না। তখন মনে হয় রোগীটা মারা গেলেই ভাল হতো। অভিজ্ঞ চিকিৎসক, জনবল এবং পর্যন্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় আমরা যথেষ্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা করছি।

ডায়ালাইসিস সেন্টারে দেখভালকারী হায়াত মাহুমদ বলেন, আমরা এক শিফটে ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পাঁচটি মেশিনে দুইজন সেবিকা দিয়ে সেবা দিয়ে থাকি। সেবার মান ভাল হওয়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও রোগীরা আসেন। দিন দিন এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মেশিনের সংখ্যা কম হওয়ায় তালিকাভুক্ত রোগীদের সিরিয়াল অনুসারে ডেকে সেবা দেয়া হয়।

নওগাঁ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনির আলী আকন্দ বলেন, এ জেলা ছাড়াও বাহিরের জেলা থেকে কিনডি রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। যে পরিমান রোগী আছে তার তুলনায় মেশিনের সংখ্যা কম। ডায়ালাইসিস সেন্টারে কোন কিনডি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের দিয়ে কিনডি রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘হেপাটাইটিস বি পজেটিভ’ মেশিনের জরুরী প্রয়োজন। এ মেশিন থাকলে রোগীদের সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই