তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম

রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ,বন্ধ হয়ে আছে কাজ
[ভালুকা ডট কম : ৩১ ডিসেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলগুলো নতুন বছর ও মুজিব শত বর্ষে যুক্ত হতে পারছে না নতুন রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ সড়কের সঙ্গে। নওগাঁর জনগুরুত্বপূর্ন একটি সড়ক এটি। চলতি বছরের শুরুতেই টেন্ডারের মাধ্যমে রাস্তা প্রশস্তকরন ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আর অবহেলার কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগের। ২২কিমির মধ্যে যে ৭কিমি রাস্তায় বালি ও ইটের খোয়া দেওয়া হয়েছে তাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর থেকে কালীগঞ্জ সড়কটি মোট ২২কিলোমিটার। একনেকে রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ রাস্তাটি প্রশস্তকরন ও সংস্কারের জন্য প্রায় ১শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর চলতি বছরের শুরুর দিকে দরপত্রের মাধ্যমে ৩টি সেতু, ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। কাজের শুরুতেই অগ্রগতি ভালো থাকলেও বর্তমানে কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ২২কিমি সড়ক ও ২৩টি কালভার্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৪কোটি টাকা আর ৩টি সেতুর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪১কোটি টাকা। ৩টি সেতুর একটিরও অবকাঠামো ও পার্শ্ব রাস্তার কাজ এখনো শেষ হয় নাই। অপরদিকে ২৩টি কালভার্টের মধ্যে ৮-১০টি কালভার্টের কাজ কোনমতে শেষ হয়েছে। ওয়াহিদ কন্সট্যাকশন ও স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পেয়েছে। কাজের শুরু থেকেই নানা কারণে কাজ বন্ধ হয়েছে বহুবার।

মোট ২২কিলোমিটারের মধ্যে খাঁনপুকুর থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত মাত্র ৭কিলোমিটার রাস্তার পাকা তুলে সবেমাত্র ইট ও বালি বিছানো হয়েছে। আর ৭কিলোমিটারের কোথাও কোথাও পুরনো পাথরই দেওয়া হয়েছে। পুরো রাস্তাটি প্রশস্তকরন করে মোট ১৮ফুট করার কথা থাকলেও রাস্তার কিছু অংশের প্রশস্তকরন করা হলেও অবশিষ্ট রাস্তার কোথাও এখনোও হাত দেওয়া হয় নাই। অপরদিকে হাতে গোনা কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও বাকিগুলো নির্মাণের কোন প্রস্তুতি নেই।

স্থানীয়রা জানায় দীর্ঘদিন সড়কটিতে কোন সংস্কার না করায় বর্তমানে তা চলাচলের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পুরো সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দক। চলাচল করতে যানবাহনের যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। কোন রোগী এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলে আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান উপজেলা খাদ্যগুদামে কিংবা অন্যান্য স্থানে নিয়ে যেতে পারছে না। এছাড়াও সড়ক ব্যবস্থা খারাপ বলে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই চলাচল করতে চরম দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।

আবাদপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বলেন আমরা ভেবেছিলাম নতুন বছর ও মুজিব শতবর্ষে উপজেলার পূর্বাঞ্চলটি উন্নয়নের নতুন মহাসড়কে যোগ দেবে। কিন্তু সড়কের কাজের যে অবস্থা তাতে আরো কয়েকমাস চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে এই অঞ্চলের মানুষকে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১দিন কাজ করলে আর ৩মাস কোন খবর থাকে না। আমরা জানি না কোন কারণে এই সড়কটির কাজে এমন ধীরগতি। এছাড়াও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের হাট আবাদপুকুরে চলাচল করার জন্য এটিই একমাত্র প্রধান সড়ক হওয়ায় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের লোক পড়েছে চরম বিপদে। এছাড়াও সড়কের যে অংশটুকুর কাজ শুরু করা হয়েছে তাতেও চরম অনিয়ম আর দুর্নীতি করা হচ্ছে। এই জনপদের লাখ লাখ মানুষকে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র ও প্রকল্পের সহকারি প্রকৌশলী মো: হুমায়ন কবীর বলেন বিভিন্ন কারণে এই সড়কের কাজ বহুবার বন্ধ রাখা হয়েছিলো। আবার পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজের সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমরা অল্প অল্প করে কাজ সম্পন্ন করবো। কারণ এক সময়ে পুরো সড়কটি উল্টে দিলে দুর্ভোগ আরো বেশি হবে। আর যেটুকুর কাজ করা হয়েছে তাতে কোন অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করা হয়নি। দরপত্রে যে ভাবে আছে আমরা তার বেশিও করবো না কমও করবো না।

নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদুল হক বলেন দীর্ঘদিন যাবত এই সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সেতু ও কালভার্টের কাজের অগ্রগতি ভালো হলেও সড়ক সংস্কার কাজে ঠিকাদারের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে অগ্রগতি একবারেই নেই। আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হবার কথা থাকলেও তা সম্ভব নয়। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল কাজ শেষ করার জন্য নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম বলেন কিছু কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদারদের জন্যই সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নির্মাণ কাজ পিছিয়ে পড়ছে। তেমনি ভাবে এই রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কের কাজেও একই অবস্থা। সড়কের এই অবস্থার জন্য জনগন আমাকে ও আমার পরিবারকে গালমন্দ করছে। খারাপ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে প্রতিনিয়তই চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহন চলাচলে। প্রভাবশালী ঠিকাদারের গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলার কারণেই আজ সড়কটির বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন কতিপয় মহলকে ম্যানেজ করে একই ঠিকাদাররা একাধিক মেগা প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব নিয়ে সেগুলোর কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে অন্য কাজে খরচ করে এবং বিদেশে পাচার করে। আর এই সব উন্নয়ন মূলক কাজ করতে এসে বছরের পর বছর সময় পার করছেন। আর ঠিকাদারের এই সব অপকর্মের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশের নিরীহ জনগনকে। অত্যন্ত প্রভাবশালী এই সব ঠিকাদারদের কাজগুলো মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং দল ও টার্সফোর্স গঠন করে তাদের কাজ কঠোর ভাবে মনিটরিং করা দরকার। সময়মতো উন্নয়নমূলক কাজ শেষ করতে না পারলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে প্রতিবছর উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা সরকারের শত শত কোটি টাকার কিছু অংশ দৃশ্যমান উন্নয়নে পরিণত হবে।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই