তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

করোনায় কর্মহীন হস্তশিল্পীরা চরম দুর্ভোগে

চলনবিলে তিন জেলায় তিনলাখ শিল্পী ও শ্রমিক অনাহারে অর্ধাহারে ঘোষণা থাকলেও পায়নি কোন প্রণোদনা
করোনায় কর্মহীন হস্তশিল্পীরা চরম দুর্ভোগে
[ভালুকা ডট কম : ১০ জুলাই]
চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার মোট ৮টি উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক হস্তশিল্পী পরিবার রয়েছে চরম দুর্ভোগে। করোনার কারণে কর্মহীন হওয়ায় এসব হস্তশিল্পী পরিবারের অন্ততঃ তিন লাখ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় তিন মাস কোন কাজ না থাকায় সামান্য সঞ্চয়ও শেষ। ‘ফেয়ারপ্রাইজের’ ১০ টাকা কেজি দরের চাল কেনার সঙ্গতিও নেই এদের অধিকাংশ পরিবারের। ঘোষণা থাকলেও এরা এখনো পায়নি কোন প্রণোদনা। কর্মহীন এসকল পরিবারের প্রধানরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

সরেজমিনে এসব ভুক্তভোগী কামার, কুমার, কাঠমিস্ত্রি, তাঁতী, শাঁখারী, বাঁশ-বেত, নক্সীকাঁথা, পাটের ছিকে, চটের ব্যাগ, কাগজের ঠোংগা ও শীতলপাটি শিল্পীসহ বিভিন্ন ট্রেডের কারিগর ও কুটির শিল্পের হস্তশিল্পী ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে তাদের এই কষ্টের কথা জানা গেছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করর্পোরেশনের (বিসিক) সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও হস্তশিল্পীদের দুর্ভোগে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে বিসিক কর্মকর্তারা এইসব হস্তশিল্পী ও শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে খাদ্য সহায়তা দেয়ার দাবি করলে তারা কোন ধরনের সহায়তা পাননি বলে জানান।

রায়গঞ্জ উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের শীতলপাটির কারিগর কীর্তন দে বলেন, আমাদের শীতল পাটির কদর থাকলেও আমাদের কোন কদর নেই। তিন মাস কোন কাজ নেই, অর্ডার নেই কী ভাবে এখন আমরা বাঁচি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-‘কাঠের পোকা যেমন কাঠ খেয়ে বেঁচে থাকে, আমরাও তেমনি বেঁচে আছি’। শীতলপাটি তৈরির কাজ করেন ঐ গ্রাম ও পাশ্ববর্তী দরবস্ত গ্রামের মোট দেড় শ’ পরিবারের অন্তত: সাড়ে পাঁচশ’ জন শিল্পী ও কারিগর।

উপজেলার ধানগড়া পালপাড়ায় মাটির প্রতিমা তৈরির দক্ষ কারিগর রঞ্জিত পাল বলেন- মাটির কাজ করতে করতে জীবনটাই মাটি করে ফেলেছি। দিনরাত খেটে সংসারে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোন মতে এতদিন খেয়ে পড়ে বেঁচে ছিলাম। এখন আর বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই। এছাড়াও তাড়াশ  ও রায়গঞ্জের বিপুল সংখ্যক আদিবাসী নারী পুরুষ বাঁশ, বেত, সূতলি, বিন্নার ফুল, তালপাতা আর খেজুর পাতা দিয়ে নিপুনভাবে তৈরি করেন বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী। আর মালাকারা তৈরি করেন ‘ফুলশোলা’ বা ‘ভাতশোলা’র বিয়ের মুকুট, মালা ও পূজার সাজ। এখন করো ঘরেই নেই বেঁচে থাকার মত সঞ্চয়।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নজিপুর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী লিটনপাল, বাসুদেব পাল, কালিনগর শিকারপাড়া গ্রামের বাঁশ-বেত শিল্পী আবুল সরদার, পরিমল দাস, সিংড়া উপজেলার বাঁশ-বেত শিল্পী জব্বার আলী, রুহুল প্রামানিক, পাবনার চাটমোহরের মৃৎশিল্পী অরবিন্দ কুন্ডু, গীতাপাল, গোষ্ঠ, স্বপন, নিশাত পাল, সুবোধ পাল, বাঁশ-বেত শিল্পী নারায়ন দাস, মায়া দাস, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চরকুশাবাড়ি গ্রামের নকসী কাঁথা শিল্পী নাসরিন, ফাতেমা ও শিল্পী খাতুন উল্লাপাড়া উপজেলার মৃৎশিল্পী রতন পাল, বাঁশ-বেত শিল্পী নজরুল ইসলাম জানান-আমরা সারা বছর বিভিন্ন নিত্য ব্যবহার্য জিনিষ তৈরি করে হাট-বাজার ও মেলায় বিক্রি করে থাকি। এতে কোনমতে ডালভাত খেয়ে আমাদের জীবন চলতো। করোনার কারণে সব মেলা বন্ধ। হাট-বাজারে বেচাকেনা নেই, কোন কাজের বায়নাও নেই। যা কিছু সঞ্চয় ছিল; ঘরে বসে খেয়ে তাও শেষ। সকলের খাবার, দুধের শিশুদের দুধ ও বাড়ির বয়স্কব্যক্তির ওষুধ কিনতে পারছি না। কেউ এখন ধারকর্জও দিচ্ছে না। এখন আমরা কীভাবে বাঁচবো। অনুরূপ সমস্যার কথা জানালেন- রায়গঞ্জের তাঁত শিল্পাঞ্চল কুটারগাঁতী, হামিনদামিন ও লক্ষ্মীকোলা গ্রামের সহস্রাধিক তাঁত শিল্পী ও শ্রমিকেরা। অসহায় কর্মহীন নিরন্ন ভূক্তভোগী হস্তশিল্পীরা সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই