তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

জন্মের আগে দাখিল আর জন্মের পরেই আলিম পাশ

জন্মের এক বছর আগে দাখিল আর জন্মের এক বছর পরেই আলিম পাশ
[ভালুকা ডট কম : ০৯ সেপ্টেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগরে নিজ শিক্ষকের সনদপত্র টেম্পারিং (মিশ্রিতকরণ) করে জন্মের একবছর আগেই দাখিল পাশ ও জন্মের এক বছর পরেই আলিম পাশের সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সনদপত্র জালিয়াতি করে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাজ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে কাজী বেলাল হোসাইন।

কাজী বেলাল অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতি করা সার্টিফিকেট দাখিল করে আইন মন্ত্রনালয় থেকে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজীর) লাইসেন্স বাগিয়ে নেয়। তখন থেকে অদ্যবদী আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এ নিয়ে রাণীনগর থানায় একটি মামলা হওয়ার পর (মামলা নং-০৬, তাং ২২-০২-২০০৫, ধারা-৪৬৬/৪৬৭/৪৭১/৪২০/৩৪ দঃবিঃ) চার্জসিট দাখিল হয়। কিন্তু সেই মামলার কর্মকান্ড পরবর্তিতে আর আলোর মুখ দেখেনি। অর্থের বিনিময়ে সবই এখন কাজী বেলালের হাতের মুঠোয়। জাল জালিয়াতির মধ্যে দিয়ে জীবনের উত্থান শুরু হয় নামধারী কাজী বেলাল হোসেনের।

বিভিন্ন অভিযোগ থেকে জানা যায়, জেলার রাণীনগর উপজেলার ৫নং বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ছেলে মোঃ বেলাল হোসেন। রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসা থেকে পাশের সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১লা জানুয়ারী ১৯৮৪সাল। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও ২০০৩ সালে কিভাবে কাজীর লাইসেন্স পায় বেলাল হোসেন তা নিয়ে সচেতন মহলে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে যায়।

তথ্যনুসন্ধানে দেখা যায়, আল-আমিন মাদ্রাসার রেকর্ডপত্র অনুসারে বেলাল হোসেনের জন্ম তারিখ ১লা জানুয়ারি ১৯৮৪। কিন্তু জন্মের আগেই ১৯৮৩সালে দাখিল ও  জন্মের এক বছর পর ১৯৮৫ সালে আলিম পাশ করার সদনপত্র দাখিল করে কাজীর লাইসেন্স বাগিয়ে নেয়। উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দীনের ছেলে রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক বেলাল উদ্দীন বগুড়ার কাহালু উপজেলার মাগুড়া এম.ইউ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৩সালে দাখিল ও ১৯৮৫ সালে আলিম পাশ (ক্রমিক নম্বর-১৪৬৬৪, রেজি নম্বর-১২৩২৬, শিক্ষাবর্ষ-১৯৮৩-১৯৮৪) করে রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। আর এই শিক্ষকেরই দাখিল ও আলিম পাশের সার্টিফিকেট সুকৌশলে সংগ্রহ করে টেম্পারিং (ঘষামাজা বা মিশ্রিতকরণ) করে প্রকৃত নামের উপর মোঃ বেলাল হোসাইন, পিতা মোঃ নাজিম উদ্দিন নাম বসিয়ে সে সময় রাণীনগর উপজেলার ৫নং বড়াগাছা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগ লাভ করে। তখন থেকেই একাধিক সুবিধাভুগী মহলের ছত্র-ছায়ায় নিজের খেয়াল-খুশি মতো নিয়ম বর্হিভ’ত ও অবৈধ ভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

অপরদিকে, অন্যের সার্টিফিকেট টেম্পারিং নিজের ও পিতার নাম বসিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স নেওয়ার ঘটনায় রাণীনগর থানায় একটি মামলাও হয়। রাণীনগর থানার তৎকালিন ওসি সৈয়দ মোহসিনুল হক স্বাক্ষরিত ১২সেপ্টেম্বর২০০৫ সালে প্রতিবেদন চেয়ে আইন মন্ত্রনালয়ের সচিবের নিকট বেলালের দাখিলকৃত (দাখিল ও আলিম পরীক্ষার) সনদসহ প্রতিবেদন চেয়ে পত্র দেন। পরবর্তীতে সেই মামলায় চার্জসিট প্রদান করা হয়।

আবার একই ঘটনায় আইন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিয়া উদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-বিচার-৭/২এন-৬৯/২০০২-৫৭২ ,তাং ১৪-১১-২০০৭ইং) পত্রে তৎকালিন নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ জহির উদ্দীনকে কে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সে মোতাবেক মোঃ বেলাল হোসাইনকে ২ডিসেম্বর ২০০৭তারিখে মূল সার্টিফিকেটসহ স্ব-শরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় কিন্তু একই ঘটনায় নিয়মিত ফৌজদারী মামলার প্যাদানি ও অন্যদিকে আইন মন্ত্রনালয়ের তদন্তের তোপে টিকতে না পেরে ও নিজে বাঁচতে মূল সার্টিফিকেট নিয়ে হাজির না হয়ে কৌশলে একইদিন পদত্যাগপত্র দিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজী) পদ থেকে অব্যাহতি নেয়। কিন্তু ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এসব ঘটনা গোপন করে পরবর্তীতে আবার নিয়োগ নিলেও উচ্চ আদালতের আদেশে সেই নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু সে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালীদের ছত্র-ছাঁয়ায় কাজী বেলাল হোসাইন অবৈধ ভাবে কাজীগিরি করে আসছে পুরো নওগাঁ জেলাজুড়ে।

আল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক ও প্রকৃত সার্টিফিকেট ধারী বেলাল উদ্দিন বলেন বেলাল পড়াশোনায় খুবই দুর্বল ছিলো। সে দাখিল পরীক্ষায় ফেল করে। এরপর সে কোথায় পড়ালেখা করেছে তা আমার জানা নেই। পরবর্তি সময়ে জানতে পারি যে সে কোন মাধ্যম দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমার সনদপত্রগুলো সংগ্রহ করে। এই বিষয়টি আমি সেই সময়ের মাদ্রাসা সুপারসহ একাধিক ব্যক্তিকে বিষয়টি জানালে তারা সেই বিষয়ে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা আমার জানা নেই। কারণ ২০০৫সালে আমি স্বেচ্ছায় চাকরী ছেড়ে দিয়ে চলে আসি। তাই পরবর্তি বিষয়গুলো আমার জানা নেই।

আল আমিন দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হারুনুর রশিদ বলেন ২০০০সালের দিকে আমি এই মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। বেলাল হোসেন ২০০০সালে আমার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে। এরপর সে কোথায় লেখাপড়া করেছে তা আমার জানা নেই। তবে সে কোন এক মাধ্যম দিয়ে বেলাল উদ্দিনের সার্টিফিকেটগুলো নিয়েছিলো তা আমি লোকমুখে শুনেছিলাম। কাজী বেলাল হোসেন বলেন আমার সকল সনদপত্র সঠিক আছে। সকল সনদপত্রসহ কাগজপত্রাদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া আছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই