তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুরে ঘুড়ি বিক্রেতা আনাম্মিয়া আর নেই

গৌরীপুরে ঘুড়ি বিক্রি করে লাখপতি হওয়ার কারিগর আনাম্মিয়া আর নেই
[ভালুকা ডট কম : ১১ অক্টোবর]
ঘুড়ি বিক্রি করে লাখপতি হওয়া সেই কারিগর আনাম্মিয়া আর নেই। চলে গেলেন লাখো ভক্তের মন কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী গ্রামের কান্দাপাড়া অধিবাসী আবুল কালাম আজাদ অরফে আনাম্মিয়া শনিবার (১০ অক্টোবর ) নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তার মৃত্যুতে সহনাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, আবুল কালাম আজাদ ওরফে ′আনাম্মিয়া’ এ সমাজের একজন দক্ষ কারিগরি ছিলেন। তিনি তার জীবনটাকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে সাঁজিয়েছিলেন। দরিদ্র থেকে আজ তিনি সচ্ছল জীবনের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন এই ঘুড়ি বিক্রি করে। আশেপাশের সকল বাজারগুলোতে এই আনাম্মিয়ার ঘুড়ি বিক্রি হতো। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আনাম্মিয়া ভাইয়ের ঘুড়িতে আলাদা একটা জাদু ছিলো। তার এই মৃত্যুতে সমাজের যে ক্ষতি হয়েছে তা সত্যিই অপূরণীয়। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি তিনি যেনো বেহেস্তবাসী হন।

জানাজায় ইউপি সদস্য জনাব আব্দুল হামিদ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, আমরা আজকে একজন দক্ষ ঘুরি কারিগরকে হারালাম। কেননা, তিনি যে এতো সুন্দর করে ঘুড়ি বানাতেন তা আর কেউ পারতোনা। সহনাটী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো জালামিন তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, আনাম্মিয়া ভাইয়ের মতো এমন ভালো লোক আমার চোখে খুব কম পড়ে। তিনি একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। জীবনে তিনি কাউকে এক টাকা ঠাকাননি। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই সেটা ভাবতেই খুব কষ্ট লাগে।

প্রতিবেশিরা জানান, তিনি মৃত্যুও দিন সকালে কোদাল নিয়ে বাড়ির সামনের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। পরে হঠাৎ করে বুকে ব্যথা অনুভুত হওয়ায় বাড়িতে এসেই দুপুরের দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। তার ব্যতিক্রমধর্মী একটা নাম রয়েছে। আর সেটা হলো আনাম্মিয়া। ঘুড়ি বিক্রেতা আনাম্মিয়াকে গৌরীপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলায় একনামে চেনে। ঘুড়ি বিক্রি করে তিনি সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছিলেন।

আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে পিতাকে হারান এই ঘুড়ি কারিগর। পিতার বিশ শতাংশ জমির উপর নির্ভর ছিলো তার সংসার। সাংসারিক জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ছেলেমেয়ে দু’জনকেই বিয়ে দিয়েছিলেন এই ঘুড়ি বিক্রি করে। কিনেছিলেন প্রায় ৩০ শতাংশ জমি এবং বসবাস করার জন্য ভাঙা ও পুরাতন জীর্ণ শীর্ণ ঘরের জায়গায় তুলেছিলেন একটি আধা পাকা বাড়ি। একমাত্র ছেলে তেমন লেখাপড়া না করায় বাড়িতেই তাকে একটি দোকান দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিলেন ব্যবসার কাজে। বাড়ির সবাইকে নিয়ে ঘুড়ি তৈরি করে বদলে দিয়েছিলেন ভাগ্যের চাকা। অথচ একসময় তার জীবন ছিলো খুবই কষ্টের। দিনগুলো যাচ্ছিলো প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে। কিন্তু তিনি ঘুড়ি বিক্রি করে হয়েছিলেন লাখপতি।

বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস নামক যে মহামারি চলছে এই ভাইরাসের ছোঁয়া বাংলাদেশে লাগার পর থেকেই আনাম্মিয়ার ঘুড়ি বিক্রির চাহিদা বেড়ে যায়। ধানকাটা শেষ হলে সকলেরই কিছু অবসর সময় থাকে। আর করোনা ভাইরাস আক্রমণের কারণে অনেক অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। এতে মানুষের অবসর সময় আরো বেড়ে যাওয়াতে তার ঘুড়ির চাহিদা বেড়ে যায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরই তিনি সবচেয়ে বেশি ঘুড়ি বিক্রি করেছিলেন। প্রতিদিনই মেঘমুক্ত আকাশে আনাম্মিয়ার তৈরি রং-বেরঙের ছোট বড় যে ঘুড়ি উড়তে দেখা যেতো এখন তা আর দেখা যাবেনা।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

শোক সংবাদ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই