তারিখ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

৭০ এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়,সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা তজুমদ্দিন

৭০ এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়,সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা তজুমদ্দিন
[ভালুকা ডট কম : ১১ নভেম্বর]
১৯৭০ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশী প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছিলো ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায়। অনেক পরিবার তাদের স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সে সময় স্বজন হারানোদের কান্নায় আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে আসতো। স্বজন হারিয়ে এসব মানুষগুলো নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য এক জীবনের যাত্রা শুরু করেন। এদিনটি উপকূল বাসীর জন্য একটি স্মরনীয় দিন।

ঘূর্ণিঝড়ে পরিবারের ১২ জনের মধ্যে ১১জন স্বজন হারানো আঃ বারেক (৭০) বলেন, হারানো সব স্মৃতি নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। সেটা ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের কথা। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে প্রবল স্লোতে সেই রাতে পরিবারের ১২ জন সদস্যর মধ্যে ১১ জনকে হারিয়ে সর্বহারা হন তিনি।

উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আঃ বারেক পেশায় একজন কৃষক। হারানো সব স্মৃতি নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। আমি তখন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। বাবা, মা, ভাই বোনসহ পরিবারের মোট সদস্য ছিল ১২ জন। ঝড়ের দুই দিন আগে মনপুরার সাকুচিয়া ইউনিয়নে আমি বাবার সাথে যাই ধান কাটার জন্য। একদিন পর বৃহস্পতি বার (১২ নভেম্বর) দিবগত রাতে শুরু হয় ঝড়ের তান্ডব। ১২ থেকে ১৩ ফুট পানি। আমি আর বাবা একটি খেুজুর গাছে উঠি। কখন যে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন তা আর বলতে পারবো না। খেজুর গাছের পাতা ধরে জোয়ারের পানির সাথে ভাসতে থাকি। এভাবে সারা রাত থাকার পর সকালে পানি কমতে থাকলে গাছ থেকে নেমে দেখি সবই ধ্বংশ স্তুপ। চারদিন পর মনপুরা থাকার পর বাড়িতে এসে দেখি খালি ভিটা পড়ে আছে। মা, ৬ ভাই, ৩ বোন ও নানী কেউ বেঁচে নেই। কোথায় থাকবো কী নিয়ে বেঁচে থাকবো এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আশ্রয় নেই পাশের বাড়িতে ভাঙ্গাচুরা টিন দিয়ে কোন রকম একটি ঘর তোলে বসবাস করা সুলতান আহম্মদের ঘরে। সরকারি ভাবে যে খাবার পাই তা খেয়েই দিন যাপন করতে থাকি। পাশাপাশি খুঁজতে থাকি পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া লোকজনকে। দীর্ঘ ১৫ দিন খোঁজার পরও তাদের সন্ধান মেলেনি।

স্বজন হারানো সোনাপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের মোল্লা বাড়ির মিন্টু মোল্লা (৬৬) বলেন, ৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমার বয়স ছিলো ১৬ বছর। ঝড়ে আমাদের বাড়ির ২৫ জনে ৯জন প্রাণ হারায়। ২/৩ দিন পর নিহতদের লাশ পাই কচুরী পানার নিচে। পরে সেই লাশগুলো উদ্ধার করে গণকবর দেই। তখন কোন ঘরবাড়ি না থাকায় ঝুপড়ী ঘরে অবস্থান নিয়ে চলতে থাকে বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধ। সেই থেকে ৫০ বছর হয়ে গেলেও স্বজন হারানোর সেই কথা মনে হলে কষ্টে বুক ভারী হয়ে উঠে।

উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্য মতে, ১৯৭০ এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলা। ওই সময়ে এ উপজেলার ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষ ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। যা একটি এলাকার প্রায় ৪৬ শতাংশ প্রাণ হারানোর ঘটনা ছিলো অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। বাংলদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। যার নাম ছিলো ভোলা সাইক্লোন।

এদিকে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এই দিনটিকে উপকূল দিবস ঘোষনার দাবীতে ২০১৬ সাল থেকেই তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্মরকলিপি প্রদানসহ সমাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

জীবন যাত্রা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই