তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে আলুর গাছের সবুজের সমারোহ

নওগাঁর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে আলুর গাছের সবুজের সমারোহ,বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
[ভালুকা ডট কম : ০৩ জানুয়ারী]
উত্তরের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলা। জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা ধান চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও অধিক লাভের আশায় এই অঞ্চলের কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন দিন রবি ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাই চলতি রবি মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামের আশা করছেন কৃষকরা। আলুসহ অন্যান্য রবি শস্যের লাভ থেকে কয়েক দফার বন্যায় ক্ষতি হওয়া আমন ধানের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন জেলার কৃষকরা।

রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদী ও আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদীর দুই তীরে শোভা পাচ্ছে আলুর গাছের সবুজের সমারোহ। নদী মাত্রিক এলাকা হিসেবে নদীর দুই তীরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দোল খাচ্ছে সবুজ পাতা। কোথাও ভুট্টা কোথাও আলু আবার কোথাও বাদামসহ বিভিন্ন রবিশষ্যে এখন দোলা খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আত্রাই উপজেলা ৮ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলার ৮ইউনিয়নের মধ্যে ৭ইউনিয়নেরই বুক চিড়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থৈ থৈ করলেও শুস্ক মৌসুমে নদীর চরসহ দুই কূলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে থাকে। বিশেষ করে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের শলিয়া, তাড়ানগর, বাউল্লা, রায়পুর, শাহাগোলা ইউনিয়নের রসুলপুর, জাতোপাড়া, ভোঁপাড়া ইউনিয়নের সদুপুর, মহাদিঘী, কাশিয়াবাড়ি, ভরতেঁতুলিয়া, আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের চৌরবাড়ি, বেওলা, কুমঘাট, পাঁচুপুর ইউনিয়নের মধুগুড়নই, পাঁচুপুর, মালিপুকুর, পারগুড়নই, গুড়নই, বিশা ইউনিয়নের বৈঠাখালী, উদয়পুর, খালপাড়া পারমোহনঘোষসহ বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার কৃষক নদীর তীরে তাদের জমিতে আলু, ভুট্টা, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকারের ফসল ও শাকসবজি চাষ করেছেন। এসব এলাকার নদীর দুই তীর এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। বিশেষ করে আলু ভুট্টা ও বাদামের সবুজ গাছ কৃষকদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটিয়ে তুলেছে।

অপরদিকে রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে বিশেষ করে মিরাট, গোনা ও কাশিমপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মাঠ জুড়েই এখন শোভা পাচ্ছে আলুর গাছের সবুজের সমারোহ। চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ১১২৫হেক্টর জমি। কিন্তু আলুর চাষ হয়েছে ১১৮০হেক্টর জমিতে। কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শে অধিক ফলনশীল জাতের কাটিনা ডায়মন্ড, উফসি ও স্থানীয় জাতের আলু চাষ করেছে। যদিও উপজেলাতে এখনো পুরোদমে জমি থেকে আলু তোলা শুরু হয়নি। তবুও যে কৃষকরা আগাম জাতের আলু চাষ করেছিলেন তারা কিছু কিছু আলু তোলা শুরু করেছেন। আর কয়েকদিন পর থেকে পুরো দমে আলু তোলা শুরু হবে। তবে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম থাকায় কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫-২০টন আলুর ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে আলুর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় আলু চাষীরা আলু বিক্রির লাভ থেকে কয়েক দফার বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গ্রামের আলু চাষী ইমতিয়াজ আলম বলেন, আমাদের মাঠে চৈতালী ফসল তেমন হয় না শুধু ধানের জন্যই আমাদের মাঠ বিখ্যাত। তবে প্রতি বছর বন্যার পর নদীর তীরের জমিগুলোতে আলু ভুট্টা সরিষা ও বাদামের খুব ভাল ফলন হয়। এবারে আমি নদীর তীরে ৭বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলুর গাছ দেখে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।

রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ি গ্রামের আলু চাষী ফজল হোসেন বলেন কয়েক দফার বন্যায় আমন ধানসহ আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এবার আলুর গাছ আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বন্যার কারণে নদীর তীরের জমিতে পলি পড়ে তাই এই সব জমিতে এবার রেকর্ড পরিমাণ আলুর ফলনের আশা করছি। হয়তোবা আলুর বাম্পার ফলন ও ভালো দামে বন্যার সেই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারবো। এছাড়া কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা আর পরামর্শের কারণে ঘন কুয়াশায় আলুর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।

আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাওছার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা কয়েক দফার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে ১০হাজারের অধিক কৃষকদের আমরা কৃষি সহায়তা প্রদান করেছি। বিশেষ করে চলতি রবি মৌসুমে কৃষকরা যাতে রবিশষ্য চাষ করে ভাল ফলন পায় এ জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। সেই সাথে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন বর্তমানে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে দ্বিতীয় দফায় মাঝারি শৈত প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষি অফিসের তৎপরতা ও কৃষকদের আগাম প্রস্তুতির কারণে ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড শীতে আলুর ক্ষেতের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। আর বর্তমানে ঘন কুয়াশা না থাকা ও আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় এবার কৃষকরা আলুর বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আলুর বাজার ভালো আছে। তাই কৃষকরা এবার আলু থেকে ভালো লাভবান হবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই