তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় চালের দাম না কমলেও কমেছে ধানের দাম

নওগাঁয় চালের দাম না কমলেও কমেছে ধানের দাম,হতাশায় কৃষক
[ভালুকা ডট কম : ০৯ জানুয়ারী]
উত্তরবঙ্গের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত জেলা হচ্ছে নওগাঁ। নওগাঁর ১১টি উপজেলায় আমন মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিলো। ধানের বাজার বেশি হওয়ায় গত দুই সপ্তাহ পূর্বে চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। সেই বৃদ্ধি পাওয়া দামেই স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। এরই মধ্যে চাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়ার খবরে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ১০০টাকা। স্থানীয় বাজার থেকে মিল মালিকেরা ধান কেনা কমিয়ে দেওয়ায় হতাশ কৃষক।

জেলার বিভিন্ন চালের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানের বাজার বৃদ্ধির অজুহাতে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি তিন থেকে চার টাকা এবং খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মুহূর্তে হঠাৎ ধানের দাম কমতে শুরু করলেও চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় খুচরা বাজারেও বেশি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। শুধু স্বর্ণা-৫ (মোটা চাল) চালের দাম সামান্য কিছুটা কমেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় ২০১৭-১৮ সালের মতো নিয়ন্ত্রণহীন আমদানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাপক পরিমাণ চাল আমদানি হলে দেশের চালের বাজার অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মিলাররা চিন্তা-ভাবনা করে ধান কিনছেন। আমদানি করা চাল দেশের বাজারে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে ধান-চালের বাজার কমে গিয়ে বড় ধরনের লোকসান হতে পারে এমন আশঙ্কায় ধান কেনা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিলাররা।

সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী চাল আমদানির শুল্ক ৬২দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫শতাংশ করার ঘোষণা দেন। নতুন শুল্কহারে চাল আমদানি করতে আগামী ১০জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবেন আমদানিকারকরা।

নওগাঁর বড় ধানের মোকাম মহাদেবপুর সদর ও উপজেলার মাতাজীহাট, রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট, মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়াহাট ঘুরে দেখা যায়, ওই সব বাজারে মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৫০ থেকে ১হাজার ৬০ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ১হাজার ১৬০ থেকে ১হাজার ১৭০ টাকায়। আর গুটি স্বর্ণা (স্বর্ণা-৫১) ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৩০ থেকে ১হাজার ৪০ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ১হাজার ১২০ থেকে ১হাজার ১৩০ টাকায়।

রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক মোতাহার হোসেন, গুলবর রহমান বলেন, ১০ মণ হাটে ধান বিক্রি করতে এসেছি। আগে যে ধান ১হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি, সেই ধান এখন ১হাজার ৩০ টাকা মণ বিক্রি করতে হলো। হঠাৎ করে ধানের দাম কমে যাওয়ায় আমরা কৃষকরা পড়েছি চরম বিপাকে। কারণ আমন ধান বিক্রি করেই আমরা ইরি-বোরো ধান লাগানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করি।

মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক শাহাদত হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ আর নকল কীটনাশকের কারণে এমনিতেই জমিতে এবার ধানের ফলন আগের চেয়ে অর্ধেক হয়েছে আর এরই মধ্যে ধানের দাম প্রতি মণে ১০০টাকা কমে গেছে। আমাদের কাছে ১০০টাকা কমে যাওয়া মানেই অনেক বড় লোকসান। কৃষকদের লোকসান হলেও লাভবান হচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ।

আবাদপুকুর বাজারের ধানের আড়তদার রাকিবুল আলম বলেন, চাল আমদানির খবর শোনার পরপরই অনেক মিলার আড়তদারদের জানিয়ে দিয়েছেন তারা আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ গাড়ি ধান কিনতেন, এখন সেখানে এক থেকে দুই গাড়ি ধান কিনবেন। এ ছাড়া প্রশাসন ধান-চালের অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। গুদামে ধানের মজুত রাখলে যেকোনো মুহূর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করতে পারেন। এ অবস্থায় আমি ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছি। আমার মতো অন্য আড়তদারদেরও একই অবস্থা।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, সরকার চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেবে এমন খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে মোকামে চাল বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। ইতোমধ্যে মিলগেটেও চালের দাম বস্তা প্রতি ১০০-১৫০টাকা কমে গেছে।

জেলা ধান্য ও চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছে চাল আমদানির শুল্ক প্রায় ৩৭ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে যা চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে অনেকটায় কাজে দেবে। তবে আমদানিকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ২০১৭-১৮ সালের মতো নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চাল আমদানি হলে ধানের দাম ২০১৮-১৯ সালের মতো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় নেমে আসতে পারে। এ অবস্থায় আমাদের প্রস্তাব হলো সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানি করুক। তবে আমদানি যেন নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশে যতটা চালের প্রয়োজন রয়েছে কেবল ততটুকুই যেন আমদানি করা হয়। নিয়ন্ত্রণহীন আমদানি কৃষকদের কপালে আবারো দুর্দিন নেমে আসতে পারে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই