তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

পত্নীতলায় চলতি মৌশুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

নওগাঁর পত্নীতলায় চলতি মৌশুমে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা, রকেট জাতের সরিষা চাষ কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে
[ভালুকা ডট কম : ২৬ জানুয়ারী]
নওগাঁর পত্নীতলায় উপজেলার মাঠ গুলোর চারিদিকে এখন সরিষা ক্ষেতের হলুদের সমারোহ। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আর যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবছর উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষার রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে এ এলাকার কৃষকরা। এ বছর সরিষা চাষে চাষিরা অধিক মুনাফা লাভ করবেন বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

পত্নীতলা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছরে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৪৭.৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছর এ অঞ্চলে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর সরিষা ক্ষেতে ভালো ফলন দেখা দিয়েছে। এই উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবারে এ উপজেলায় বারি-১৪, ১৫, ১৭, টোরী-৭, রকেট (মানঘোষিত) উচ্চ ফলনশীল সরিষা ও স্থানীয় জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। ভোজ্য তেলের ব্যাপক চাহিদা ও বাজার চড়া থাকায় এবারে সরিষার ভালো দাম পাবেন কৃষকগণ।

সরজমিনে দেখা যায়, পত্নীতলা উপজেলার শিহাড়া ইউপির জামালপুর গ্রামে অবস্থিত সানারুল ইসলাম উজ্জল ও লুৎফা বেগম সরকারী ভাবে কৃষি সরিষা প্রদর্শনী প্লটের সরিষা ফুল গুলো এখন পরিপক্ক দানায় পরিণত হয়েছে। উক্ত প্লটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকবর হোসেন জানান সরকারী ভাবে কৃষি সরিষা প্রদর্শনী প্লটের সরিষার ফলন অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে। এই কৃষকদের দেখে আশেপাশের অন্যান্য কৃষকরাও সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সরিষা আবাদে খরচ কম এবং আমন ও ইরি-বোরো চাষের মাঝের একটি উদ্বৃত্ত উৎপাদনকারী ফসল তাই এর দিকে বেশী ঝুকছেন অত্রাঞ্চলের কৃষকেরা।

পত্নীতলা উপজেলার শিহাড়া ইউপির এনামুল হক, সানারুল ইসলাম উজ্জল ও লুৎফা বেগম সহ ঐ এলাকার আরো কয়েক জন চাষী এবারে উচ্চ ফলনশীল রকেট (মানঘোষিত) জাতের সরিষার চাষ করেছে। এনামুল হক বলেন বগুড়া এলাকার এক কৃষকের কাছ থেকে পত্নীতলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকবর হোসেন এই নতুন জাতের (রকেট) বীজ সংগ্রহ করে আমাদের এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এবারে এ এলাকায় ৫/৬ বিঘা জমিতে এই রকেট জাতের চাষ করা হয়। সাধারণ জাতের বীজ ৮০-১০০ টাকা কেজি হলেও রকেট জাতের বীজের দাম ৫০০-১০০০ টাকা কিন্তু সাধারন জাতের সরিষার ফলন ৬/৭ মণ বিঘা হারী হলেও রকেট জাতের সরিষার ফলন প্রায় ১৫/২৫ মণ বিঘা হারী হয়ে থাকে। এ জাতের সরিষা গাছ ৮ থেকে ১০ফিট লম্বা ও স্বাভাবিক সরিষা চেয়ে দ্বিগুন ফলন হয়। দেশীয় জাতের সরিষা মন প্রতি ১৪ থেকে ১৬ লিটার তেল হলেও রকেট জাতের সরিষা ২০ থেকে ২২ লিটার পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। সরিষার এমন ব্যতিক্রমী গাছ দেখতে প্রতিনিয়তই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন ঐ এলাকাবাসী। রকেট জাতের সরিষার বীজ সংগ্রহের জন্য এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন সরিষা চাষি এনামুল হক ও সানারুল ইসলাম উজ্জল।

পত্নীতলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম ও উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে সরিষার রোগ বালাই তেমন নেই বললেই চলে। শীতকালীন ফসল হবার ফলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারনে এবারে সরিষায় তেমন কোন রোগ নেই। তবে ছত্রাকনাশক হিসেবে ম্যানকোজেভ গ্রুপের বালাইনাশক এবং ইমিডা ক্লোপিট গ্রুপের কিটনাশক ব্যাবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, উপজেলায় এবার উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, বারি-১৫, বারি ১৭ ও রকেট (মানঘোষিত) জাতের সরিষার আবাদ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। নতুন উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদে আশানুরুপ ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবছর যদি কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হয় তাহলে এ উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে। চলতি বছরে উপজেলার প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে সরকারী ভাবে কৃষি সরিষা প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে এবং গোটা উপজেলায় ৪৭.৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। বোরো ধানের চারা লাগানোর আগেই বোনাস ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করা হয়। আর এ কারণে অনেক কৃষক আমন ধান কাটার পর লাভবান হতে ওই জমিতে সরিষা চাষ করে। ঘন কুয়াশা এ ফসলের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না তাই বেশির ভাগ কৃষকই এখন অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষ করছেন। সরিষা কেটে ঐ জমিতেই আবার বোরোর আবাদ করা যায়। এতে করে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। আমরা সরিষা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারিভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। প্রণোদনা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা যতক্ষণ ফসল ঘরে না তুলছেন ততক্ষণ কৃষি বিভাগ তাঁদের পাশে থাকবে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই