তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকার সাবেক এম পি অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ

ভালুকার সাবেক এম পি অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ
[ভালুকা ডট কম : ১১ মার্চ]
উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এম. আমান উল্লাহ ১৯৩৯ইং সালের ১৬ই মার্চ মাসে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার মাহমুদপুর গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম ডা: এম সাফায়েত উল্লাহ এবং মাতা মরহুমা সায়েরা খাতুন। তাঁর দাদা মরহুম নুর মোহাম্ম্দ সরকার তৎকালীন মুক্তাগাছা জমিদারের নায়েব ছিলেন এবং তাঁর দাদী মরহুমা মরিয়ম আক্তার গ্রামের মহিলাদের কোরআন শিক্ষা দিতেন।

অধ্যাপক ডা: এম, আমান উল্লাহ সরকারী বৃত্তিসহ প্রাথমিক পাশ, Middle English Exam পাস করে ১৯৫৫ সনে দুইটি লেটার সহ ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫৭ সনে প্রথম বিভাগে আই,এস,সি পরীক্ষায় পাস করেন এবং ১৯৬৩ সনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে M.B.B.S. ডিগ্রী লাভ করেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টারনীশীপ সমাপ্ত করে ১৯৬৪ সালে তিনি মেডিসিন ও কার্ডিওলজি চাকুরি জীবন আরম্ভ করেন। তাঁর পিতা ডা: এম সাফায়েত উল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে ইন্তেকাল করেন । তিনি কার্ডিওলজির উপর উচ্চতর শিক্ষা নিতে মনস্থির করেন এবং ১৯৬৮ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে গমনের পূর্ব পর্যন্ত জুনিয়র রেজিস্টার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৮-১৯৭০ পর্যন্ত The Royal Postgraduate Medical School (RPMS) UK এবং The University Of Edinburgh's Royal Infirmary হতে ইন্টারনাল মেডিসিনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

বিদেশে প্রশিক্ষণ কালে ১৯৭১ সালে ১ বছর ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র মেডিকেল রেজিস্টার হিসেবে এবং ১৯৭২-১৯৭৩ সালে ২ বছর নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল রেজিস্টার হিসেবে কাজ করেন।তিনি ১৯৭৩ সালে MRCP (লন্ডন) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং তিনি ১৯৭৪ সালে সারবার্টিক্যাল ছুটি নিযে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট লুইস মেডিকেল সেন্টারে এক্সচেঞ্জ ফেলো হিসেবে কাজ করেন এবং আমেরিকান MD ডিগ্রী লাভ করেন।১৯৭৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্টার ও লেকচারার ইন কার্ডিওলজি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল কার্ডিওভাসকুলার থেকে উচ্চতর ফেলোশিপ অর্জন করেন।তিনি ১৯৭৮ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রেজিস্টার এবং সিনিয়র লেকচারার (কার্ডিওলজি) হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১২ বছর বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় গবেষণারত থাকা কালে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কার্ডিওলজির প্রফেসর জুলিয়ান, প্রফেসর গুডউইন, প্রফেসর গিলিং কোড প্রফেসর সেলিয়ানকলি, প্রফেসর লিথাম, প্রফেসর জেন সোমরভিল প্রমুখের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন এবং পেসমেকার সংযোজন, ক্যাথেটারাইজেশন, এনজিওগ্রাফী, করোনারি ইত্যাদিতে বাস্তব প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি তদানীন্তন সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং দেশের একমাত্র জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ১৪ই সেপ্টেম্বর সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং একই বছর ১৮ই সেপ্টেম্বর উনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় উক্ত হাসপাতালে দেশের সর্ব প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি সফলতার সাথে সম্পন্ন করা হয়। তিনি ১৯৮৯ সালে কার্ডিওলজির অধ্যাপক হিসেবে Bangladesh Public Service Commission (BPSC) কর্তৃক নিযুক্ত হন।

তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৩ সালের শুরুর দিকে Royal College of Physicians (UK) যথাক্রমে FCP(Ireland),FRCP (Edinburgh)এবং FRCP (London) ফেলোশীপে ভূষিত করে।

* এশিয়া প্যাসিফিক সোসাইটি অব কার্ডিওলজি এর নির্বাহী সদস্য ছিলেন (১৯৮৫-১৯৯৪) পর্যন্ত।
* এশিয়া প্যাসিফিক সোসাইটির কার্ডিওলজির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।
* সার্ক কার্ডিয়াক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন (১৯৮৫-২০০২) পর্যন্ত।
* বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন (১৯৯৮-২০০২) পর্যন্ত।
* বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ।
* বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর আজীবন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
* বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর কনসালটেন্ট ।
* শেরেবাংলা নগর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এর অনারারি কনসালটেন্ট।
* সভাপতি ন্যাশনাল চিলড্রেন হার্ট ফাউন্ডেশন।
* Parliamentary Standing Committee on MOHFW. (Ex)
* Parliamentary standing Committee on Petition. (Ex)
* State Minister, MOHFW, GOB, (Ex)
* Member Syndicate- (Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University Hospital, Dhaka)
* Member Syndicate- (Bangladesh Agricultural University, Mymensingh (Ex).

তিনি অনেক গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত। তাছাড়া তিনি নিজ উদ্যোগে মাহমুদপুর গ্রামে ১৯৮৫ সালে তাঁর মরহুম পিতা-মাতার নামে সায়েরা- সাফায়েত স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারী হাসপাতাল, মসজিদ, বিরুনীয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেনে।

অধ্যাপক ডা: এম.আমান উল্লাহ শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকায় বিনামূল্যে ১৯৮৫-২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি ঘরেই শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করিয়াছেন এবং উনার গড়া বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি করিতেছেন।

অধ্যাপক ডা: এম. আমান উল্লাহ ও তাঁর সহধর্মীনি ডা: সাঈদা আক্তার স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ভালুকা বাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সহ প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রাদি ক্রয় করে দিয়েছেন এবং বর্তমানে ও তাদের এক মাত্র পুত্র ডাঃ মোনাসির সাকিফ আমান উল্লাহ ভালুকা বাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মাতা মরহুমা সায়েরা খাতুন গরীব-দু:খী রোগীদের বিনামূল্যে ইউনানী চিকিৎসা দিয়ে গেছেন।

অধ্যাপক ডা: এম. আমান উল্লাহর শখ:
* তিনি একজন সাংস্কৃতিক মনা ব্যক্তি।
* ব্যাডমিন্টন, হকি, টেবিল টেনিস খেলায় বিশেষ পারদর্শী।
* বইপড়া, টেবিল টকিং, ক্লাস করা বিশেষ আগ্রহ ছিল।
* বিশ্বের প্রায় দেশই তিনি ভ্রমণ করেছেন।
* তিনি নিজের গাড়ি ড্রাইভ করতে পছন্দ করতেন।
* তিনি বাগান করতে পছন্দ করতেন।

রাজনৈতিক অর্জন
* ১৯৯৬-২০০১ জাতীয় সংসদ সদস্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
* ৭ম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ২৪৮৭৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন।
* ৮ম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ৩০৯২৩ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন।
* ৯ম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ৭৬৯৯৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন।
* ১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ৭৯৮৯১ ভোটে বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন।

লেখকঃ
এস. এম ওয়াসেক আল আমিন শিপন
অধ্যক্ষ
সায়েরা সাফায়েত স্কুল এন্ড কলেজ
মাহমুদপুর, ভালুকা, ময়মনসিংহ।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ব্যাক্তিত্ব বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই