তারিখ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে মুঘল আমলের প্রাচীন মসজিদ

নওগাঁয় অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ভাঙা মসজিদ
[ভালুকা ডট কম : ০৭ মে]
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ভাঙা মসজিদ বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্টের পথে। বর্তমানে মসজিদের কিছু ধ্বংস প্রায় অবকাঠামো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। মসজিদের অক্ষত দেহে প্রাচীন ঐতিহ্যের ছাপ এখনোও পরতে পরতে লেগে আছে। নান্দনিক নকশা ও সুনিপুণ নির্মাণ কাজ বলে দেয় যে, মুসলিম ইতিহাসের নান্দনিকতার কথা। এতো সুন্দর ও প্রাচীন সুদর্শন এই মসজিদ এবং এই মসজিদের শৈল্পিক অবকাঠামোর কথা অনেকেই জানেন না।

এই বর্ণনাগুলো হচ্ছে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে অবস্থিত ধর্মপুর ভাঙা মসজিদের কথা। স্থাপত্যকলা, শিল্প-সৌন্দর্যের আধার ধর্মপুরে ভাঙা মসজিদটি ঠিক কত বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল, এর সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কোনো এক সময় প্রাচীন মসজিদটির আশপাশে মুসলিম ঘন জনবসতি ছিল। মসজিদের পাশে বিশাল পুকুর থাকার কারণে এখানে প্রাচীন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আবার কি কারণে তারা মসজিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান সে সম্পর্কেও সঠিক কোন তথ্য আজও কেউ জানতে পারেননি। এর গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও অনন্য। ৯গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটির ভেতর রয়েছে চারটি সুদৃঢ় খিলান। দরজা রয়েছে মাত্র একটি। দ্বিতল ভবনের ভেতরে মেহরাব ও দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানি ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনি চার ফুট প্রস্থ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা।

প্রাচীন স্থাপত্যকলার সুদৃশ্য মসজিদটি চিকন ইট, চুনচুরকির নির্মিত দেয়ালে এখনো নকশা করা কারুকাজ রয়েছে। চারটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে নয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। এর আয়তনের সঠিক তথ্য জানা যায় নাই । মসজিদটি সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজ ঘর তিনটি অংশে বিভক্ত। বিভিন্ন তথ্য মিলিয়ে মসজিদটির সম্ভাব্য বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০/৫০০ বছর।

কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় ঐতিহ্য ও গর্বের এই মসজিদ আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করেছে। দেয়ালে গাছপালা জেগে উঠেছে, দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। নামাজ পড়ার অনুপোযুক্ত হওয়ার কারণে একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আরও একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়।

মসজিদটির পার্শ্ববর্তী ধর্মপুর পাইকপাড়া মন্ডলপাড়া জামে মসজিদের মুসল্লী হাকিম আলী (৮৫) বলেন ,আমার নিজের চোঁখে দেখা মসজিদটি ২০বছর আগেও অনেক সুন্দর ছিলো। দূর-দূরান্তর থেকে মানুষ আসতেন প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে। এখানে শুধু দুই ঈদের নামাজ হতো। শেষ ঈদের জামাত ২০০০সালে অনুষ্ঠিত হয়। বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি ১৯২০সালে মহা ভূমিকম্পে ৯টি গম্বুজসহ মসজিদটির কিছু অংশ ভেঙে যায়। তারপর থেকেই ভাঙা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটির একটি দরজার ওপর মূল্যবান কষ্টি পাথরে খোদাই করে আরবি ভাষায় কোরআনের সূরা লেখা ছিলো। মূল্যবান পাথর ৩০/৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা কাবুল হোসেন বলেন, এই প্রাচীন মসজিদটি আমার ধারণা মতে ৩০০বছরের পুরাতন হবে। আমার বাপ-দাদারাও সঠিক কবে নির্মাণ হয়েছিল, তা বলে যেতে পারেননি। গত বছর সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কিছু লোক এসে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেছিল। তারপর আজ পর্যন্ত তাদের আর কোনো খোঁজ-খবর নেই। এই মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি। মসজিদটি পুনরায় সংস্কার চাই আমরা। পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যও রক্ষা করার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।

নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান ইতিহাস বিভাগ ফারুক হোসেন বলেন, নওগাঁর ইতিহাস ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে এই মসজিদটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। শুধু দায়িত্বই নয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা না হলে যা অবশিষ্ট রয়েছে তাও আর কিছুদিন পর অবশিষ্ট থাকবে না।

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া জয়া পেরেরা বলেন, মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছি। শিগগির এই মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের আওতায় থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, আনুমানিক ১৭ শ খ্রিস্টাব্দের ৯ গুম্বুজবিশিষ্ট ৪টি পিলার ও পশ্চিম দিকে মেহেরাবের সন্ধান পাওয়া গেছে। যা দেখে মনে হয়, এটি মুঘল আমলের একটি মসজিদের ভিত্তি। ৯গম্বুজ মসজিদটি বর্তমানে জেলায় দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। আমরা মসজিদ এলাকা ঘুরে দেখেছি। প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এটি সংরক্ষণযোগ্য। স্থানীয় লোকজন এবং মুসল্লীরাও এটি সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন। মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করে এর সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করার ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই