তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

যে যেভাবে পারছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন গ্রামে

কেউ ট্রাকে, কেউ পিকআপে কেউ মোটরসাইকেলে, যে যেভাবে পারছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন গ্রামে
[ভালুকা ডট কম : ১১ মে]
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবারের ঈদে গ্রামের বাড়িতে যেতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকলেও করোনা ঝুঁকি নিয়েই ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো হচ্ছে মানুষ। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে ভেঙে ভেঙে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে দেখা গেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিক, ভাসমান ব্যবসায়ী ও বেসরকারী চাকুরীজিবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদেরকে। মঙ্গলবার (১১ মে) সকাল হতে ঘরমুখো মানুষ গাজীপুর ছাড়ার এমন দৃশ্য চোখে পরে।

কেউ ট্রাকে, কেউ পিকআপে কেউ বা মোটরসাইকেলে, যে যেভাবে পারছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন গ্রামে। এ যেন বাড়ি ফেরার এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। করোনা মহামারির ভীতি নেই তাদের মাঝে। দূর পাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ যানেই বাড়ি ফিরছেন তারা। বেলা ১১ টায় সরেজমিন গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এসময় কম সংখ্যক যাত্রীকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।

সরেজমিন চন্দ্রা ত্রি-মোড়ে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। যেকোনো উপায়ে বাড়ি যেতে হবে তাদের। গাড়ি না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। তাদের বাড়ি ফেরার জন্য এখন পিকআপ ভ্যান, মিনি ট্রাক আর মোটরসাইকেলের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ছেড়ে যাচ্ছে দু’-একটা বাস। তিনগুণ ভাড়া দিয়ে তাতে উঠে পড়ছে যাত্রীরা। অনেকে হেঁটে রওনা দিচ্ছে সামনে গিয়ে কোনো যানবাহন পাওয়ার আশায়।

মঙ্গলবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, চন্দ্রা, টঙ্গী, চেরাগ আলী, ষ্টেশন রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন না থাকলেও ঘরে ফেরা মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন পাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে। তবে এভাবে যেতে ভাড়া গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ বেশি। টঙ্গী থেকে ময়মনসিংহ যেতে সাধারণ সময়ের চেয়ে ২০০ টাকার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৪০০/৫০০ টাকা। কালিয়কৈর হয়ে টাঙ্গাইল যেতে ২৫০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ৬০০ টাকা।

টঙ্গী ষ্টেশন রোডে কথা হয় ময়মনসিংহগামী যাত্রী আব্দুল আজিজের সাথে। তিনি বলেন গ্রামের বাড়ি যাব। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় অন্য যাত্রীদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে (হায়েস) বাড়ি যাচ্ছি। মাইক্রোবাসে ভাড়া তিনগুণ বেশি। ময়মনসিংহের সাধারণ সময়ের ভাড়া ২০০ টাকা। কিন্তু এখন যেতে হচ্ছে ৫০০ টাকায়। কী করব পরিবার ও স্বজনদের সাথে নিয়ে ঈদ করতে হবে। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে। তারপরও বাড়িতে যেতে পারছি এটাই মনের আনন্দ।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় কথা হয় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পোশাক কারখানার শ্রমিক জসীম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ট্রাক ও পিকআপে করে বাড়িতে যাওয়া যায় শুনেছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি একজন লোক ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেক্রকনো যাওয়ার জন্য যাত্রী ডাকছেন। ভাড়া ময়মনসিংহ পর্যন্ত একেকজন ৪৫০ টাকা। ভাড়াটা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দিলে ভালো হতো। কারণ আমরা যারা ছোট চাকরি করি বাড়িতে আসা-যাওয়ায় অনেক বেশি খরচ হওয়ায় পরিবারের ওপর চাপ পড়ছে। বাড়িতে যাচ্ছি বৃদ্ধ মা-বাবা, বউ-ছেলেমেয়ের সঙ্গে ঈদের সময়টা কাটালে ভালো লাগবে বলে।

ঈদযাত্রী আনা-নেওয়া করা প্রাইভেটকার ড্রাইভার রাসেল মিয়া বলেন, সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীর চাপ আছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করা লাগে। পুলিশ দেখলে মামলা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যায়। টাকা দিয়ে ছাড়াতে হবে, সে জন্য আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি।

গাজীপুর-কালিয়াকৈর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। লকডাউন স্বত্ত্বেও মহাসড়কে ছিল যানবাহনের চাপ। ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মানুষ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু দূরপাল্লার বাসও রাস্তায় নামে। ঈদ যত এগিয়ে আসছে অন্যান্য দিনের তুলনায় যানবাহনের চাপ আরও বাড়ছে। এসব যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা মাস্কও পরতে দেখা যায়নি অনেক যাত্রীদের।

দুপুরে এই মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা গিয়ে দেখা যায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি যে যেভাবে পারছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। কিছু বাসও রাস্তায় দেখা যায়। গণপরিবহন নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঘরমুখো মানুষ বেশি ভাড়া দিয়েই মাইক্রোবাসে করে গন্তব্যে রওনা হচ্ছে। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক বা পিকআপে করেও গন্তব্যে যাচ্ছে।

গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকার পলমল গ্রুপের সাফা সোয়েটার কারখানার শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, বাস বন্ধ থাকায় তারা গাজীপুর থেকে মাইক্রো ভাড়া করে ১৪ জন বগুড়া যাচ্ছেন। এতে তাদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে। গাজীপুরের যে কোন স্থান থেকে অতিরিক্ত দুই থেকে তিনশ টাকা ভাড়ায় বগুড়ার যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি মানুষের চলাচল। ঈদকে সামনে রেখে এ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। দূরপাল্লার বাস না চললেও প্রাইভেটকার, অটোরিকশা আর মোটরসাইকেল চেপে ভেঙে ভেঙেই বাড়িতে যাচ্ছেন অনেকেই। সরেজমিন দেখা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহণে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও ছিল উপেক্ষিত। স্বাভাবিকের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিলেও বাসের প্রতিটি সিটেই অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয়। এমনকি কোনো কোনো বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহুরুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট নেই। যানজট রোধে ও নিরাপত্তার জন্য গাজীপুরে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৫২৯ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।#





সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই