তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় জমে উঠেছে কাঠালের বাজার যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

ভালুকায় জমে উঠেছে কাঠালের বাজার যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়
[ভালুকা ডট কম : ১১ জুন]
ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার গুলি মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে বাঙ্গালীর প্রিয় জাতীয় রসালো ফল কাঠাল বেচা কেনায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় দামও পাচ্ছেন বেশী। উপজেলার ১১ টিইউনিয়নের প্রায় সবগুলো গ্রামেই কমবেশী কাঠাল চাষ হয়েছে। ব্যবসায়য়ীরা বলছে ভিন্ন কথা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কাঠালের আমদানী কম  দাম বেশী।

কাঠাল উৎপাদনে ভালুকা উপজেলা অনেক আগে থেকেই প্রসিদ্ধ। স্বাদ গুনে কাঠালের বিভিন্ন প্রকারভেধ রয়েছে। লাল কোষ সাদা কোষ নরম মধ্যম ও শক্ত কোষের বিভিন্ন রং ছোট বড় মধ্যম সাইজের কাঠাল রুচি অনুসারে চাহিদার শেষ নেই। জৈষ্ঠ আষাঢ় মাস এলে মধু মাসের রসাল মিষ্টি ফল কাঠাল নিয়ে কুটুমবাড়ী যাওয়া পাড়াগাঁয়ের মানুষের একটি চিরায়ত ঐতিয্যগত প্রথা। কাঠালের কোন কিছুই ফেলনা নয়। রসালো কোষ খাওয়ার পর বিচি রেখে দেওয়া হয় আর খোসা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিচি কাঁচা অবস্থায় তরকারী আর ঘরে রেখে শুকিয়ে ভেজে খেতে দারুন সুস্বাধু।

গ্রামের সব বাড়ীতেই কম বেশী ৮/১০ টি কাঠাল গাছ রয়েছে। কাঠাল আবাদ লাভ জনক হওয়ায় অনেকে বড় বড় বাগান করে বছরে লাখ লাখ টাকার কাঠাল বিক্রি করে সংসাারে স্বাচ্ছন্দ এনেছেন। আর এসব কাঠাল ভ্যান গাড়ী করে ভালুকা বাসষ্ট্যান্ড, সীডষ্টোর বাসষ্ট্যান্ড, ভরাডোবা বাসষ্ট্যান্ড, উথুরা বাজার, মল্লিকবাড়ী বাজার, বিরুনিয়া বাজার , কাচিনা বাজার, আঙ্গারগাড়া বাজার ও মাষ্টারবাড়ী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে চাষীরা বিক্রি করেন। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে পাইকার এসে স্থানীয় ফরিয়াদের সহায়তায় কাঠাল কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যায়। ভালুকার কাঠাল বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সরজমিন সীডস্টোর বাজারে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন আরতে কাঠাল বেচা কেনা চলছে। এ সময় ইমরান মিয়ার আরত থেকে ট্রাকে কাঠাল উঠাচ্ছিলেন কয়েয়কজন শ্রমিক। সীলেট জেলার গোবিন্দ গঞ্জের বেপারী আলী ফরিদ (৬৬) ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এক ট্রাক কাঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ জেলায়। তিনি জানান তার এলাকায় ক্রয়কৃত এক ট্রাক কাঠাল দেড় লাখ টাকা বিক্রি হবে। সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা তিনি মুনাফা পাবেন বলে আশা করছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা হতে কাঠাল নিয়ে সীলেট জেলায় বিক্রি করছেন। ভালুকার কাঠাল তাদের এলাকায় অনেক চাহিদা। রিক্সাভ্যানে কাঠাল নিয়ে দাড়িয়ে থাকা স্থানীয় বেপারী আব্দুস সালাম জানান তিনি হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও বড়চালায় ১২ লাখ টাকায় ২০/২৫ জন কৃষকের কাঠাল বাগান মৌসুমের শুরুতেই কিনে রেখেছেন।

তিনি জানান এ বছর কাঠালে কোন রোগ বালাই বা পোকার আক্রমন না থাকায় সাইজে বড় হয়েছে। গত বছর ৯ লাখ টাকায় বাগান কিনে ১১লাখ টাকা বিক্রি করেছিলেন এ বছরও ভাল মুনাফা আসবে বলে তিনি আশাবাদী। আরতদার আফছার উদ্দীন মৃধা জানান তিনি প্রায় ৩০ বছর যাবৎ কাঠাল বেচা কিনা করছেন। ভালুকার কাঠাল সুস্বাদু হওয়ায় ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালি,বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঠাল রপ্তানী হয়ে থাকে। তবে আগের চেয়ে কাঠালের আমদানি অনেক কমে গেছে। কারন হিসেবে তিনি জানান এ অঞ্চলে অপরিকল্পিত ভাবে আকাশমণি গাছের বিস্তার বাড়ানোয় ফলজ বৃক্ষগুলি ক্রমশ মরে যাচ্ছে এর প্রভাব কাঠাল গাছেও ব্যাপক আকারে পরেছে। বনজ বৃক্ষ আকাশমণির বিষাক্ত প্রভাবে অন্যান্য দেশীয় গাছে পচনধরে আস্তে আস্তে গাছ মরে যায়। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি কামনা করেছেন অন্যথায় জাতীয় ফল কাঠাল এক সময় হারিয়ে যাবে কালের গর্বে।

এ বছর প্রতিটি কাঠাল ওজন ও আকৃতি অনুসারে স্থানীয় বাজারে ৩০ টাকা হতে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।  উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ১৫০ হেক্টর জমিতে কাঠাল আবাদ রয়েছে। উপজেলা উপসহকারি উদ্বিদ সংরক্ষন অফিসার এনামুল হক জানান প্রক্রিয়াজাত করনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক চাষী কাঠাল ছেড়ে মালটা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন যার ফলে ভরা মৌসুমেও আগের মত কাঠালের আমদানী নেই।

সর্বপরি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ধারনা ভালুকায় কম খরচে উৎপাদিত কৃষকের অর্থকরী ফসলের মাঝে কাঠাল অন্যতম। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কাঠাল বিক্রির টাকায় অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। চালা পতিত জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা, ক্ষেতের আল, পুকুর পাড়, রাস্তার কিনারে কাঠাল গাছ ভাল হয়। গাছের পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও রোগ নির্মুলে বিভিন্ন কীটনাশক দিলে পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা ও আকারে কাঠাল বড় হওয়ায় মূল্য বেশী পাওয়া যায়।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই