বিস্তারিত বিষয়
যশোরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে
যশোরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে
[ভালুকা ডট কম : ০৪ জুলাই]
যশোরে কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও ভয়াল হচ্ছে। টানা লকডাউন ও প্রশাসনের কড়াকড়ি অবস্থানের পরও সংক্রমণের বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ১৭৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রেডজোন ও ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জন মারা গেছেন। যা করোনাকালের শুরু থেকে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে সোমবার থেকে হাসপাতালে ৪০ শয্যার আরও একটি করোনা ওয়ার্ড চালু হচ্ছে। এদিকে, কঠোর লকডাউনের ১১ দিনে যশোরে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২০৬ জন। আর মারা গেছেন ১২৫ জন। তাদের ৬০ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বাকি ৬৫ জনের উপসর্গ ছিলো।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া ১৭ জনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৭ জন। তারা হলেন যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার মৃত মজনু শেখের স্ত্রী সখিনা বেগম (৬০), সদর উপজেলার ছোট মেঘলা গ্রামের মখলেছুর রহমানের স্ত্রী সমেত্ত বেগম (৬০), মণিরামপুর উপজেলার দেবীদাসপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মিজানুর রহমান (৪২), ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আখমুন্দিয়া গ্রামের আকবার আলীর স্ত্রী হামিদা বেগম (৭৫), গাবতলা এলাকার তাবারক আলীর ছেলে মোবাচ্ছের (৫৩), মহেশপুর উপজেলার একতারপুর গ্রামের জবেদ আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৬৫), ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আমতলা এলাকার মুনছুর আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৭০)। করোনার উপসর্গে মৃত ১০ জন হলেন, চৌগাছা উপজেলার ফুলসার গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে তোফাজ্জেল হোসেন (৭৫), অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার মাওলা বক্সের ছেলে আব্দুল লতিফ (৭০), সদর উপজেলার আরিচপুর গ্রামের মোসলেম আলীর ছেলে অজিদ বিশ্বাস (৬৫), বসুন্দিয়া গ্রামের তারক নাথের ছেলে অজিত কুমার সাহা (৮০), মনহরপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইউনুস আলী (৬৪), ভেকুটিয়া গ্রামের চেরাক আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম (৬০), উপশহর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৮), মণিরামপুর উপজেলার বজলুর হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৫), কুয়াদা গ্রামের আমিন উদ্দিনের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৭৫) ও ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার শুভ আলীর ছেলে এস হক (৮৪)। এ ছাড়া বাদে কঠোর লকডাউন চলাকালীন ১০ দিনে ৩ হাজার ৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ১০৮ জন। এরমধ্যে ৩ জুলাই শনাক্ত ৩৭১ জন, মারা যান ৮ জন, ২ জুলাই শনাক্ত ২১৭ জন, মৃত্যু ৯ জন, ১ জুলাই শনাক্ত ১১১ জন ,মৃত্যু ১৩, ৩০ জুন শনাক্ত ৩০০ জন, মৃত্যু ১২ জন, ২৯ জুন শনাক্ত ৩৩৩ জন, মৃত্যু ১৪ জন, ২৮ জুন শনাক্ত ৪৬৬ জন, মৃত্যু ৫ জন, ২৭ জুন শনাক্ত ১২৪ জন, মৃত্যু ৬ জন, ২৬ জুন শনাক্ত ৫৭৬ জন, মৃত্যু ৬, ২৫ জুন শনাক্ত ৩১৬ জন, মৃত্যু ১৪ জন, ২৪ জুন শনাক্ত ১৭০ জন, মৃত্যু ৮ জন ও ২৩ জুন শনাক্ত ১০৯ জন ,মৃত্যু ৮ জন।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে ১৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ২৪২ টি নমুনায় পরীক্ষায় ৭৫ করোনা শনাক্ত হয়। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৬২ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৯৪ জনের ফলাফল করোনা পজেটিভ আসে। এছাড়া জিন এক্সপার্ট মেশিনে ১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু মেলে। সবমিলিয়ে ৬১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭৩ জন করোনা পজেটিভ ও ৪৪১ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়। শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৩ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৬ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩২ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৪৭ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ৩ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৯ জন, শার্শা উপজেলায় ৩ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ১০ জন রয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কঠোর লকডাউন সফলে যৌথ বাহিনীর নিয়মিত অভিযান চলছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। মানুষের অসচেতনতায় লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। সকলকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান এডিএম।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, জেলার সাথে করোনা রেডজোনেও রোগী বাড়ছে। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গের রোগীরা মেঝেতে থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। ওয়ার্ডে শয্যার তুলনায় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোববার করোনা রেডজোনে নারী ও পুরুষের দুইটি ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১২১ জন করোনাক্রান্ত রোগী। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৯ শয্যার ইয়োলোজোনে রোগী ছিলেন ৯৫ জন। ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি হলে তাদের মেঝেতে রাখা হচ্ছে। এছাড়া আইসিইউতে ১১ শয্যায় ১১ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে একটি শয্যা ফাঁকা নেই। হঠাৎ করে কারো আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলেও দেয়া সম্ভব নয়। রোগীর চাপ সামলাতে ৪০ শয্যার আরও ১ টি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। সোমবার থেকে সেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা শুরু হবে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ৪ জুলাই পর্যন্ত যশোর জেলায় ১৩ হাজার ৩শ’ ৩৭ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৬৯ জনের। এছাড়া ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরও জানান, মানুষের অসচেতনতায় জেলার করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামে গ্রামে। প্রতিদিন এই মহামারিতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় গত ৯ জুন দিবাগত রাত থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে। এরপর গত ১৫ জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিধিনিষেধ বাড়িয়ে যুক্ত করা হয় ঝিকরগাছা পৌরসভা, সদরের উপশহর, নওয়াপাড়া, আরবপুর, চাঁচড়া, শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল বাজার। এরপর চৌগাছা ও বাঘারপাড়া পৌর এলাকাও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়। সর্বশেষ ২১ জুনের আলোচনায় যশোর জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির আলোচনায় জেলায় ৭ দিনের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৩ জুন রাত ১২ টার পর থেকে ৩০ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত যশোর জেলায় লকডাউন আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ১ জুলাই থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- যশোরে চলছে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক [ প্রকাশকাল : ০১ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক্টর [ প্রকাশকাল : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- শার্শায় বালু উত্তলনে পরিবেশ হুমকির মুখে [ প্রকাশকাল : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.৩৫ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরের আবাদপুকুর হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা [ প্রকাশকাল : ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০.৩০ পুর্বাহ্ন]
- জনবল সংকটে তজুমদ্দিনে বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা [ প্রকাশকাল : ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে আবাসিক মাস্টারপাড়া [ প্রকাশকাল : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রায়গঞ্জ পৌরসভায় নির্মিত ড্রেন বেড়েছে দুর্ভোগ [ প্রকাশকাল : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- তজুমদ্দিনে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ [ প্রকাশকাল : ২২ আগস্ট ২০২৩ ০২.২৫ অপরাহ্ন]
- ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ এমটিএফই [ প্রকাশকাল : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম [ প্রকাশকাল : ১২ আগস্ট ২০২৩ ০২.০০ পুর্বাহ্ন]
- তজুমদ্দিন হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক ও করোনার টিকা [ প্রকাশকাল : ২৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নান্দাইলে অবৈধ কারখানায় হুমকিতে জনজীবন [ প্রকাশকাল : ০৭ জুলাই ২০২৩ ১১.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে শিক্ষক যখন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা [ প্রকাশকাল : ০৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০৫ অপরাহ্ন]
- অস্তিত্ব সংকটে রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা বন্দর [ প্রকাশকাল : ০৩ জুলাই ২০২৩ ০১.১০ অপরাহ্ন]
- উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করেনি রাণীনগরের হাট [ প্রকাশকাল : ৩১ মে ২০২৩ ০১.১৩ অপরাহ্ন]