তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

সৎ মার প্রতিহিংসায় সংকটাপন্ন আড়াই বছরের মরিয়ম

সৎ মার প্রতিহিংসায় সংকটাপন্ন আড়াই বছরের শিশু মরিয়ম আক্তার
[ভালুকা ডট কম : ১৪ আগস্ট]
পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আড়াই বছরের শিশু মরিয়ম আক্তারের পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গে ক্ষত সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিশুটির পায়ূপথ ও যৌনাঙ্গ ছেঁড়া। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

শিশুটির সৎ মা আলিফা আক্তার রিপাকে (৩০) অভিযুক্ত করে শনিবার (১৪ আগস্ট) শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা (৩০) মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে।

স্বামীর কাছ থেকে একটি বহুতল পাকা ভবন লিখে নিতে লোভের বশবর্তী হয়ে সৎ মা এ কাজটি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। শিশুর বাবা মোস্তফা কামাল দুবাই প্রবাসী। তিনি ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে।

শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন জানান, তার ছেলে মোস্তফা কামালকে গত ১৩ বছর যাবত দুবাই প্রবাস যাপন করছেন। প্রবাসের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মোস্তফা কামাল গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা এলাকায় ১৪ শতক জমি ক্রয় করেন। সেখানে তিনি পাঁচ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। আট বছর আগে সাবিনা ইয়াছমিন নামে এক নারীকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করান। তাদের কোলে শিশুকন্যা মরিয়ম আক্তারের জন্ম হয়। শিশুটি জন্মের পর দুবাই প্রবাসকালীন অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপার সাথে মোস্তফা কামালের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। রিপাও বেশ কয়েক বছর দুবাই প্রবাসী ছিলেন। ওই সম্পর্ক পরে বিয়েতে গড়ায়। তারা উভয়ে দেশে ফেরেন। পরকীয়ায় জড়িয়ে ওই নারী মোস্তফা কামালের প্রথম স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে ত্যাগ করাসহ (বিবাহ বিচ্ছেদ) একাধিক শর্ত দেন। নারীর চাপে সকল শর্তে মোস্তফা রাজী হয়ে প্রথম স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। ওই সময় শিশু মরিয়মের বয়স ছিল চার মাস। প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আলিফা আক্তার রিপাকে বিয়ে করেন শিশুর বাবা মোস্তফা কামাল। বিয়ের পর গত ছয় মাস আগে তার আড়াই বছরের শিশুকে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে আবার দুবাই প্রবাসে চলে যান।

এদিকে, দ্বিতীয় স্ত্রী আলিফা আক্তার হঠাৎ নারীঘটিত অসুস্থতার শিকার হন। ওই অসুস্থতায় তিনি কোনোদিন মা হতে পারবেন না বলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন। এ খবরের পর থেকে মোস্তফা কামালের ভবনটি লিখে নিতে নানা কৌশল আঁটতে থাকেন আলিফা আক্তার। লোভের বশবর্তী হয়ে নিষ্পাপ শিশুটির উপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন। ঈদের আগে শিশুটিকে নিয়ে আলিফা আক্তার শিশুর দাদার বাড়ি ময়মনসিংহের পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামে বেড়াতে যান। ঈদের পর সুস্থভাবে সেখান থেকে শ্রীপুরের বেড়াইদেরচালা গ্রামের নিজ ভবনে ফিরে যান।

দাদা আফাজ উদ্দিন আরও বলেন, তার দ্বিতীয় পুত্রবধূ অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা বদ মেজাজি। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে শিশু নাতনিকে নিয়ে অভিযুক্ত আলিফা আক্তার এ বাসাতেই থাকতো। তার অন্যান্য স্বজনদের কাছে শিশুটিকে যেতে দিত না।  তার ছেলের এ ভবনটি নিজ নামে লিখে নিতে আলিফা আক্তার নানা ধরনের কৌশল করে আসছিল। বেশ কয়েকবার তার শিশু নাতিকে সৎ মা আলিফা আক্তার নানাভাবে নির্যাতন করতো। তাকে নিবৃত করতে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও পরিকল্পিতভাবে শিশুকে নির্যাতন করে হত্যার চেষ্টা করছিল সৎ মা আলিফা আক্তার। গত ১১ আগস্ট বুধবার তার এক ছেলেকে সাথে নিয়ে নাতি মরিয়মকে দেখতে যান। সেখানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তার শিশু নাতিকে দেখতে পান। ভাতের গরম মাড়ের ওপর পা পিছলে পড়ে সে অসুস্থ হয়েছে বলে শিশুর সৎ মা জানিয়েছে। কিন্তু এতদিন গোপন রাখার বিষয়ে সে সদুত্তর দিতে পারেনি।

প্রতিবেশী মামুন জানান, শিশুর দাদা নাতিকে দেখতে যাওয়ার সময় তিনিও সাথে ছিলেন। ফ্ল্যাটে প্রবেশের পর শিশুটিকে দেখতে না পেয়ে তার খোঁজ খবর জানতে চান। এসময় সৎ মা শিশুটিকে না দেখানোর উদ্দেশে বার বার এড়িয়ে যায়। পরে একটি অন্ধকার ঘরে শিশুটিকে শুইয়ে রাখতে দেখা যায়। পায়ূপথ কিছুটা বাইরে বের হওয়াসহ শিশুর যৌনাঙ্গে ক্ষত দেখা যায়। সেখান থেকে পরিবারের লোকজনকে সহায়তা করে শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মইনুল আতিক বলেন, শিশুটির পায়ূপথ ছেড়া ও যৌনাঙ্গে দগদগে ঘাঁ রয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরে দ্রুত শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুটির এ অবস্থার প্রকৃত কারণ জানা যেতে পারে। প্রয়োজন। হাসপাতালে তিনি নিজে শিশুটির দাদী রেহেনা খাতুন ও সৎ মা আলিফা আক্তার রিপা রয়েছেন।

মোস্তফা কামালের ভবনটি দেখাশোনা করেন তারই মামা মন্নাছ শেখ। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই একদিন দেখি চিকিৎসকদের কাছে শিশুটিকে নিয়ে সে দৌড়াদৌড়ি করছে। কাউকে কিছু জানায়নি এমনকি জানতে চাইলে সে জানায় গরম পানিতে এমন হয়েছে। শিশুটিকে দাদা-দাদীসহ কারও কাছেই যেতে দিত না। হাসপাতালে যাতায়াতের সময় একদিন শিশুটির এমন অবস্থা দেখে ফেলি। পরে শিশুটির দাদাকে ফোনে জানাই। আগুনে পোড়ার ঘটনা হলে শিশুটি চিৎকার করতো। ভবনের অন্যন্যা বাসিন্দারা জানতে পারত। এমন একটি ঘটনা অভিযুক্ত সৎ মা আলিফা আক্তার কাউকে অনুমান করেতও দেয়নি।

শিশুটির চাচা তারেক বাবু জানান, শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের পরামর্শে বৃহষ্পতিবার (১২ আগস্ট) শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকগণ খুব ক্রিটিক্যাল বলে অবহিত করেছেন। পায়ূপথ ও যৌনাঙ্গের ক্ষত রক্তে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান চিকিৎসকগণ। চিকিৎসায় পজিটিভ এবং নেগেটিভ যে কোনো কিছুই হতে পারে বলে জানিয়েছেন। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

অভিযুক্ত আলিফা আক্তার সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, অভিযোগটি পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। শনিবার (১৪ আগস্ট) এ সংক্রান্ত মামলা রুজু হয়েছে। একমাত্র অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নারী ও শিশু বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই