তারিখ : ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় ৪০০বছর ধরে কালের সাক্ষী অচিন গাছ

নওগাঁয় ৪০০বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নামহীন বিশাল অচিন গাছ
[ভালুকা ডট কম : ০৯ সেপ্টেম্বর]
নওগাঁয় প্রায় ৪০০ বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নামহীন একটি বিশাল অচিন গাছ । কিন্তু এ ব্যাপারে নাম আবিষ্কার কিংবা প্রজন্ম বিস্তার কোনটিই আজ পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের দাবি এই প্রাচীণ গাছটিকে গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করার।

নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৭কিলোমিটার দূরে চকপ্রসাদ মহল্লায় নওগাঁ-শৈলগাছি সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে এক একর জায়গার উপর প্রায় ৪০০বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি নামহীন অচিন গাছ। দূর থেকে দেখতে বট গাছের মত হলেও পাতা কিছুটা জাম পাতার আকৃতির মত। গাছটির চারিদিকে ডালপালা হেলে গিয়ে প্রায় মাটি ছুঁয়ে রয়েছে গাছটি। গাছের ব্যাসার্ধ অনেক। প্রায় ৬০থেকে ৬৫ফিট এর মত হবে। এই গাছটির বৈশিষ্ট্য হলো পাতা তেমন একটা ঝড়ে পড়ে না। এছাড়া পাতার রং সব সময় সবুজ বর্ণের মত হয়ে থাকে। এলাকার সাধারণ মানুষ বংশ পরম্পরায় এখন পর্যন্ত গাছটির কোন পরিচয় বা নাম খুঁজে পায়নি। স্থানীয়রা জানান, ৪০০বছর পূর্বে বড় ধরনের বন্যায় গাছের বীজ ভেসে এসেছিল। তার পর বীজ থেকে এখানে গাছে রুপান্তরিত হয়।

স্থানীয় চকপ্রসাদ মহল্লায় বাসিন্দা ফিরোজ উদ্দিন মন্ডল বলেন, নামহীন এই অচিন গাছটিকে  ঘিরে আমাদের এলাকার মানুষের মাঝে অনেক কৌতুহল। আমার চার পূর্ব পুরুষের আগের এই গাছ। তা প্রায় ৪শত বছরের পুরোনো হবে এই গাছটি। তবে কেউ এখন পর্যন্ত গাছটির সঠিক নাম খুঁজে পায়নি।

আব্দুল মান্নান নামের স্থানীয় একজন জানান, আমার বাবা ও দাদার কাছে থেকে শুনেছিলাম অনেক অনেক বছর পূর্বে বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যায় গাছটির বীজ ভেসে এসেছিল এখানে। তার পর বীজ থেকে এখানে গাছটির জন্ম হয়। গাছটির বয়স প্রায় ৪০০বছর হবে। বেশ কয়েকবার এখানে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষদ দল এসেছিল গাছের নমুনা নিয়ে পরিক্ষা করার জন্য। তবে পরবর্তীতে তার ফলাফল আমরা জানতে পারিনি। তাই আজও সকলের কাছে গাছটি নামহীন রয়ে গেছে। যার কারনে আমরা অচিন গাছ বলেই গাছটিকে চিনি থাকি।

এলাকার সচেতন মানুষের অচিন এই গাছটিকে ঘিরে ব্যাপক কৌতুহল থাকলেও, গাছটির নাম না জানার কারনে তার কোন অবসান হয়নি এখন পর্যন্ত। প্রাচীন বৃহৎ এই গাছকে দেবতাতুল্ল্য মনে করে সেই বিশ্বাস থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা গাছের নিচে কালি মন্দির হিসেবে ব্যবহার করে পূজা অর্চনা করে থাকেন। শুধু তাই নয় এ উপলক্ষে মেলাও বসে প্রতি বছর।

স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীর বাসিন্দা সন্তোষ কুমার বলেন, প্রতি বছর আমরা এখানে কালিপূজা করে থাকি। গাছটি তিন একর জমির উপর অবস্থিত। এই জায়গাটি কালি মন্দির এর নামে পত্তন করা আছে। প্রতি বছর পূজা অর্চনার পাশাপাশি এখানে মেলাও বসে। অনেক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এটি মূলত একটি দুর্লভ গাছ। প্রাচীন এই গাছটিকে বট গাছের মত দেখতে হলেও এটা কিন্তু বটবৃক্ষ নয়। গাছটির ফল হয় কিন্তু সেই ফল থেকে গাছ জন্মায়না। অনেক বার আমি চেষ্টা করেছিলাম ফল থেকে গাছ জন্মনোর জন্য কিন্তু তা করতে পারিনাই। আসলেই এক অচেনা গাছ এটি। এর আগে আমি কখনো এমন গাছ কোথায় দেখিনাই। গাছটিকে ঘিরে প্রতিদিনই আশে পাশের এলাকা থেকে অনেক মানুষ দেখতে আসে। কিন্তু পাকা রাস্তার পাশে একটি আবাদি জমির পর এই গাছটির অবস্থায়, তাই জমি বেয়ে গাছটিকে দেখতে আসতে এবং আমাদের পূজা পালন করতে অনেক সমস্যা হয়। যদি সরকারিভাবে গাছটিকে সংরক্ষণ এবং এখানে আসার রাস্তা নির্মান করে দেয়, তবে অনেক সুবিধা হতো।

গাছটির বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় পরিবেশবিদ ও নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: শরিফুল ইসলাম খান এর সাথে, গাছটি সম্পর্কেতিনি বলেন, যতদূর জানি গত বছরের শেষের দিকে দূর্লভ এই গাছটির পাতা ও ডালপালা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য নিয়ে গেছেন দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। কিন্তু ফলাফল এখনও জানা যায়নি । কেউ বলতে পারে না গাছটির সঠিক নাম কি । তবে প্রায় ৪০০বছরের পুরাতন হবে গাছটি। গাছটিকে গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু কেন যে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলোনা বুঝতেছিনা।

তিনি আরো বলেন, গাছটিকে ঘিরে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। এটি সত্যেই দূর্লভ প্রজাতির গাছ। আমার জীবনে আমি অন্য কোথায় এমন গাছ দেখিনি। অতি দ্রুত প্রাচীণ গাছটির পরিচয় নিরুপণ ও বংশ বিস্তারসহ প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যাপারে দেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদদের গবেষণা করে তা সরকারি ভাবে দ্রুত সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

পরিবেশ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই