তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁর কোলাহাট ইজারা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী কোলাহাট ইজারা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ
[ভালুকা ডট কম : ২৪ সপ্টেম্বের]
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাট হচ্ছে কোলা-ভান্ডারপুর হাট। এই হাট-বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির বিরুদ্ধে দরপত্রে দাখিল করা টাকার চেয়ে অনেক কম টাকায় ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির রেজুলেশনে স্বাক্ষর না দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন, কোলা হাট-বাজার ইজারায় ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। দরপত্রে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম টাকা নিয়ে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। একারণে হাট-বাজার ইজারার মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে তিনি স্বাক্ষর করিনি। উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দাবী নীতিমালার আলোকে কোলা হাট-বাজার ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  ইজারায় কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর বৈশাখ মাসে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়। কোলা-হাট বাজারের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে হাট-বাজারের প্রশস্তকরণের জন্য  বাংলা ১৪২৬সালের কোলা হাট-বাজার ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে হাইকোর্ট একটি রিটপিটিশন মামলা (১২৯৭/২০২০) দায়ের করেছিলেন। আইনী জটিলতা থাকায় বাংলা ১৪২৭সালে  কোলা হাট-বাজার ইজারা দরপত্র আহবান করা হয়নি। প্রায় ১৪ মাস ধরে এই হাট-বাজারে খাস হাসিল আদায় করা হয়েছে। সেই হাট থেকে লাখ লাখ টাকা খাস আদায় করে নাম মাত্র সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ইউএনও। নিয়মানুযায়ী ভূমি অফিসে লোকজনের সরকারি খাস হাসিল আদায় করার কথা ছিল। কিন্তু সাবেক ইজারাদারের লোকজনদের সরকারি খাস হাসিল আদায়ে নিযুক্ত রেখে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর হাইকোর্টের রিটের বাদী ফেরদৌস হোসেনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ইউএনও রিট নিষ্পত্তির আবেদনে জোর করে স্বাক্ষর নেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী ফেরদৌস হোসেন। পরে  গত ২৯ জুলাই দৈনিক আজকালের খবর ও বগুড়ার দৈনিক উত্তরকোণ পত্রিকায় কোলা হাট-বাজার ইজারাদার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেন ইউএনও আলপনা ইয়াসমীন।

পত্রিকায় প্রকাশিত কোলা হাট-বাজার ইজারাদার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত হাট-বাজারসমূহ  বাংলা ১৪২৮সনের ‘অবশিষ্ট’ সময়ের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র সিডিউলে বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে প্রতিটি হাট-বাজার জন্য পৃথক-পৃথকভাবে সিলমোহরযুক্ত খামে হাট-বাজারের নাম উল্লেখ পূর্বক ক্যালেন্ডারে সময়সূচি মোতাবেক দরপত্র আহবান করা যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে হাট-বাজার ইজারা সংক্রান্ত তফসিলের কলামে ১৪২৮সালের সরকারি ইজারা মূল্য  ৫৪লাখ ৮৬হাজার ৩৫৬টাকা ও মন্তব্যের কলামে বর্ণিত হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রিটপিটিশন মামলার বাদী কর্তৃক অভিযোগটির নিষ্পত্তির আবেদন পাওয়ায় রিটের আদেশ অনুসারে ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারী করা হলো।

গত ১৬আগষ্ট দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল। পরদিন ১৭আগষ্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের সময় নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন দুপুর দেড়টায় দরপত্র  খোলা হয়। বাংলা ১৪২৮ সালের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কোলা হাট-বাজার ইজারায় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার পাতনা গ্রামের মো. এনামুল হক, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন ও নওগাঁ সদর উপজেলার আতিকুজ্জামান আলী এই দরপত্র দাখিলে অংশ গ্রহন করেন। তাদের মধ্যে মো. এনামুল হক সর্বোচ্চ দরদাতা। তিনি দরপেত্রে ৭১লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা দর দিয়েছেন। দ্বিতীয় দরদাতা সাজ্জাদ  হোসেন ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা দর দিয়েছেন। অতিকুজ্জামান আলী সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে  ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা দরপত্রে মূল্য দিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মো. এনামুলক হকের কাছ থেকে ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকার পরিবর্ততে ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকা নিয়ে তাকে কোলা হাট-বাজার ইজারাদার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইজারাদার হাট-বাজারের হাসিল আদায় করছেন।

দ্বিতীয় দরদাতা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট সময়ে জন্য অথাৎ আট মাসের জন্য ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা দর দিয়েছিলাম। আমার চেয়ে মো. এনামুল হকের দর অনেক বেশি থাকায় নিয়মানুযায়ী তাকেই হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে মো. এনামুল হকের কাছ থেকে ৪৬ লাখ টাকা ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকায় হাট-বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। যোগসাজশ করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ইউএনও রাজস্ব ফাঁকির দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।

হাইকোর্টে রিটপিটিশন মামলা বাদী ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমি বাংলা ১৪২৬ সালে কোলা হাট-বাজারের ইজারাদার ছিলাম। তখন কোলা হাট-বাজারের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। হাট-বাজারের জায়গা কমে যাওয়ায় কোলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠের জায়গায় হাট-বাজার লাগাতে হতো। এতে ইজারাদারকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হতো। হাট-বাজারের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ইউএনওসহ প্রশাসনের কাছে আমি বহুবার অভিযোগ করেও কোন সুফল পাইনি। পরে হাইকোর্টে রিটপিটিশন মামলা দায়ের করেছিলাম। তিনি বলেন, রিটপিটিশন মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় ঈদুল আজহার পর ইউএনও আলপনা ইয়াসমীন আমাকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে রিটপিটিশন মামলার নিষ্পত্তির জন্য একটি লিখিত কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন। আমি ইউএনওর চাপে মুখে স্বাক্ষর দিয়েছি।

বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খাঁন বলেন, কোলা হাট-বাজার ইজারাদার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল ‘অবশিষ্ট’ সময়ে জন্য ইজারা দেওয়া হবে। আর সেই ইজারায় ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ছিল। সিডিউলে দেওয়া দরের চেয়ে একটি টাকাও কম নেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। কিন্তু সিডিউলে  দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম টাকায় হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এটা চরম অনিয়ম বলে মনে করছি। একারণে হাট-বাজার ইজারার দরপত্রে মূল্যয়ন কমিটির  রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষর করিনি আর কখনো করবও না। এই জন্য আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীন বলেন, ১৭ আগষ্ট দরপত্র মূল্যয়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক খাস হাসিল আদায়ের সময় বাদ দিয়ে আনুপাতিক হারে ইজারার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার আলোকে হাট-বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই