তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় সফল আঁখ চাষী সৌদি ফেরৎ রফিকুল

ভালুকায় সফল আঁখ চাষী সৌদি ফেরৎ রফিকুল
[ভালুকা ডট কম : ১২ অক্টোবর]
ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী মিশনপাড়া গ্রামে আঁখের আবাদ করে লাখপতি হয়েছেন সৌদি ফেরৎ রফিকুল ইসলাম। তার মত শত শত কৃষক আঁখের আবাদ করে নিজেদের ভগ্যের চাকা ঘুড়িয়ে এখন সচ্ছল জীবন যাপন করছেন।

উপজেলার মল্লিকবাড়ী, নয়নপুর, চাঁনপুর, সোনাখালী, গোবুদিয়া, টালাব, ডাকাতিয়া,আঙ্গারগাড়া, পাঁচগাও সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে এ বছর ব্যাপক আকারে আঁখের আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে মল্লিকবাড়ী, নয়নপুর, গোবুদিয়া ও সোনাখালী গ্রামে আঁখের জন্য খোলামাঠ চোখে পরেনা। চারিদিকে শুধুই আঁখ আর আঁখ।স্থানীয় ভাবে আর কদিন পরেই শুরু হবে স্যালু চালিত কলে আঁখ মাড়াই। রস জাল করে তৈরী হবে চাকা ও পাটালী গুড়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ জনক হওয়ায় চাষীরা আঁখ চাষে বেশী আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে তারা জানান।

১১ অক্টোবর সোমবর  সরজমিন মল্লিকবাড়ী মিশনপাড়া গ্রামে গেলে কৃষক রফিকুল ইসলামম জানান তিনি সংসারে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ফিরাতে দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটান। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশে ফিরে গ্রামে কৃষিতে অনেকেই উন্নতি করছিলেন দেখে তিনিও কৃষি কাজ করার মনস্থির করেন। পৈত্রিক দুই একর জমিতে আঁখের আবাদ শুরু করেন। গত বছর দেড় একর জমিতে উৎপাদিত আঁখ বিক্রি করে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। জমি তৈরীর পর ফাল্গুন চৈত্র মাসে আঁখের চারা রোপন হয়ে থাকে। আর ৮/৯ মাসের ব্যবধানে ফলন সম্পুর্ণ হলে কার্তিক অগ্রহায়ন মাস হতে মাড়াই ও বাজারজাত শুরু হয়। চলতি মৌসুমে সম্পুর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে জমি চাষ, চারা ক্রয় ও রোপন, পানি সেচ, সার কীটনাশক বাবদ দেড় একর জমিতে নতুন জাতের অমৃত আঁখ বিক্রয়োপযোগী করতে তার প্রায়  ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেড় একর জমির আঁখ সারে ৩ লাখ হতে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। পাইকাররা নিজ খরচে আঁখ কেটে নিয়ে যাবেন। তিনি মনে করেন যেহেতু অন্যান্য ফসলের চেয়ে আঁখ চাষ অধিক লাভ জনক সেজন্য এ এলাকায় সরকারী ভাবে নলকূপের ব্যবস্থা করে সেচযন্ত্র স্থাপন করলে সেচ সমস্যা দুর হবে।

এ ছারা মৌসুমের শুরুতে প্রান্তিক চাষীদের মাঝে চারা, সার, কীটনাশকের উপর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারী প্রনোদনার সুষ্ঠ বন্টন ব্যবস্থা করলে আঁখের আবাদ আরও ব্যাপকতা পাবে বলে চাষীদের অভিমত। আঁখ চাষে বিভিন্ন প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়। পাতার ভিতর এক জাতীয় পোকার আক্রমন হয় এতে উপর থেকে আঁখের রসালো অংশ পঁচে লাল হতে শুরু করে। আবার বন্য কাঠ বিড়ালী স্থানীয় ভাষায় যাকে কডই বলা হয় এরা এগাছ ও গাছ লাফিয়ে চলে। কাঠ বিড়ালী আঁখের মাঝ খানের অংশ কামড়ে নষ্ট করে রস খেয়ে ফেলে।

এ অঞ্চলে অমৃত, মেশ্রীমালা, ঈশ্বরদী জাত, সুন্দরী ও ইন্দোনেশিয়া জাতের আঁখের আবাদ বেশী হয়। এর মধ্যে মেশ্রীমালা ও অমৃতজাত আঁখ পাইকাররা কিনে ঢাকার রস বিক্রেতাদের নিকট অধিক লাভে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া স্থানীয় ভাবে স্যালু চালিত মাড়াইকলে রস ভাঙ্গিয়ে তা থেকে পাটালী গুড় তৈরী হয় যা দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করে কৃষকরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করে থাকেন।

তিনি জানান লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যে টাকা রোজগার হয় তাতে সংসারে স্বচ্ছলতা আসেনা। দেশে থেকে নিজের জমি চাষ করে অনেক মুনাফা পাওয়া যায়। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন তার সকল কাজে। বড় মেয়ে রোকাইয়ার বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে জাকিয়া সুলতানা (১৭) অনার্স প্রথম বর্ষে ও ছেলে ইমরান (২১) ফাজিল পরীক্ষার্থী। বাড়ীর সাথে একটি শেড ঘরে ১৪ শ লেয়ার মুরগীর পোল্ট্রি রয়েছে। মুরগীর ডিম বিক্রি করেও ভাল মুনাফা আসে। এছারও রয়েছে সাথী ফসল আদা ও হলুদ চাষ।

এক সময় ভালুকা ও ফুলবাড়ীয়ায় আঁখের রস জাল করে লাল চিনি নামে পরিচিত ধুলা চিনি তৈরী হতো যা গ্রাম এলাকার মানুষের নিত্য প্রয়োজনে ক্ষীর পায়েশ পিঠা পুলিতে ব্যবহৃত হতো। লালচিনি দিয়ে বড় বড় বাতাসা, মুড়লি, জিলাপি ইত্যাদি গ্রামের মানুষের প্রিয় খাবার তৈরী হতো। গ্রামের বাড়ীতে নতুন জামাই কিংবা আত্মীয় কুটুম আসলে বউঝিরা লালচিনির ক্ষীর রান্না করে পরিবেশন করা যেন চিরাচরিত নিয়ম ছিলো। দুটো বাতাসার জন্য বাজার হতে ফিরে আসা বাবার পথ চেয়ে বসে থাকতেন বাড়ীতে ছোট ছোট শিশুরা। চুনের আলপনা একে মাটির হাঁড়ি ভরে লাল চিনি ও বাতাসা মিষ্টি হিসেবে পালকিতে করে বর যাত্রীরা কনের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। লালচিনি তৈরী কমে গেলেও এখননও আঁখের রসে পাটালী গুড়ের বড় বড় চাকা তৈরী করে বাজারজাত হচ্ছে। এ এলাকার দরিদ্র পরিবার যাদের বাড়ীঘর মাটির দেয়াল আর ছনের ছাউনি ছিলো আঁখ চাষ করে কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন তারা ইটের দেয়াল বেষ্টিত টিনের ঘরে বিদ্যুতের আলো আর ফ্যানের বাতাস উপভোগ করছেন। এসব গ্রামের প্রতিটি কৃষকের সংসারে এখন ফিরে এসেছে আনন্দের উচ্ছলতা।  উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে ভালুকায় ১২ শ ৫০ হেক্টর জমিতে আঁখের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অমৃত জাত ৮০০ হেক্টর, রংবিলাস ৩০০ ও মেশ্রিমলা ১৫০ হেক্টর আবাদ হয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই