তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব

একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব
[ভালুকা ডট কম : ২৬ অক্টোবর]
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মুক্তাচাষ বিপুল সম্ভবনার তোরণ উম্মোচিত করতে পারে। মাছের সাথে ঝিনুক-মুক্তা চাষ করে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। হাওড়-বাওড়, নদ-নদী, দীঘি-নালা ও বিভিন্ন জলাশয় সমৃদ্ধ নদীমাতৃক বাংলাদেশকে প্রকৃতি মুক্তা চাষের উপযুক্ত পরিবেশ দান করেছে।

গবেষণালব্ধ তথ্যমতে মাত্র ৫/৬ মাসে এক একর জলাশয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঝিনুক চাষ করে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা আহরণ করা সম্ভব। ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুক্তা বিদেশে রফতানী করে বছরে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। একই সাথে এখাতে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২ টি মুক্তা জন্মে। প্রতিটি মুক্তার খুচরা মূল্য ৫০টাকা। প্রতি শতাংশে প্রায় ৮০ টি ঝিনুক থেকে গড়ে ৮০০ টি মুক্তা পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৪০ হাজার টাকা।  সেই হিসাবে একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। কাজেই মাছের সাথী ফসল হিসাবে মুক্তা চাষ খুবই লাভজনক। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মুক্তা চাষের ওপর ব্যাপক আকারে গবেষণা করছে। এলক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে ঝিনুকের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন এবং মুক্তা চাষে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহন করা সম্ভব হবে। মুক্তা চাষের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া দরকার। কৃষি ও মৎস্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে তৃণমূল পর্যায়ে মৎস্যচাষী ও কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদেশে মুক্তার সফল চাষাবাদ করা সম্ভব। যা থেকে মাত্র ২/৩ বছরে দেশ এমন বিস্ময়কর আর্থিক স্বাবলম্বীতা অর্জন করবে যা অনেকটা রূপকথার গল্পের মত শোনাবে। আমরা জানি একর প্রতি জলাশয়ে বছরে প্রায় দেড়লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হয়। সেই মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি ঐ পরিমাণ জলাশয়ে ঝিনুকের চাষ করে বছরে ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব; এটা বলা হলে প্রথম এরকমই শোনাবে। অথচ ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণাসহ বাস্তবে এর চাষ করে হাতে কলমে প্রমাণ দিয়েছেন বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীরা।

আমাদের দেশের জলবায়ূ মুক্তাচাষের উপযোগী। মাত্র কয়েক মাস বাদে এখানে প্রায় সারাবছরই উষ্ণ আবহাওয়া বিদ্যমান। যা ঝিনুকের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মুক্তা চাষের জন্য বেশ অনুকূল। তাই মাছ চাষের সাথেই প্রায় সারা বছর ঝিনুক চাষ করা সম্ভব। এতে মাছ চাষের মত পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রয়োজন হয়না। জলাশয়ে পরিমিত চুন ও সার প্রয়োগ করলেই চলে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই পুকুর দীঘি জলাশয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুকের চাষ করে মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নারীদের সম্পৃক্ত করতে পারলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে নারীর বিশেষ মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তার চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একারণে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে মুক্তা চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চীন ও জাপান অন্যতম মুক্তা উৎপাদনকারী দেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিত। তবে জলবায়ূর দিক থেকে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে ভাগ্যবান। এখানে তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তা উৎপাদনের লক্ষ্যে ঝিনুকের চাষ যথাযথভাবে করলে বাংলাদেশ মুক্তা উৎপাদনে বিশ্বে সেরা বাজার দখল করতে পারবে। সংশিষ্ট সূত্রমতে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৩.৩৭ লাখ হেক্টর। এরমধ্যে প্লাবনভূমি সহ মুক্ত জলাশয় ৪০.৪৭ লাখ হেক্টর। উপকূলীয় চিংড়ি খামারসহ বদ্ধ জলাশয় ২.৯০ লাখ হেক্টর। দেশের ৭১০ কিঃ মিঃ তটরেখার কাছাকাছি বেইজ লাইন থেকে সাগরের ২০০ ন্যাটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত আমাদের অভ্যন্তরীণ জলসীমা। এর প্রায় ১,৬৪,০০০ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা দেশের সামুদ্রিক জলসীমা হিসাবে গণ্য; যা দেশের মূল ভূ-খন্ডের আয়তনের চেয়েও অনেক বড়। এই জলসীমার মাত্র ৫০ভাগ এলাকায় প্রণোদিত উপায়ে ঝিনুকমুক্তা চাষ করতে পারলে বছরে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার  মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। এসব খাতে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দেয়া যাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি বেকার যুবক ও  মহিলা।# 



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই