তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

শ্রীপুর মুক্ত দিবস

শ্রীপুর মুক্ত দিবস
[ভালুকা ডট কম : ১১ ডিসেম্বর]
১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে  মুক্ত হয়েছিল গাজীপুরের শ্রীপুর। মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমণে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্থানী সেনাবাহিনী।  ১১ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে শ্রীপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়  হানাদারের দল। ১২ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ ভাবে  হানাদার মুক্ত শ্রীপুরের মাটিতে উড়ানো হয়েছিল  লাল সবুজের পতাকা।

শ্রীপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাগনের সাথে কথা বলে জানাযায়, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল হানাদার বাহিনী শ্রীপুরে অবস্থান নেয়। শ্রীপুর থানা, গোসিংগার কাচারি বাড়ি, কাওরাইদ রেলস্টেশন, সাতখামাইর স্টেশন, গোলাঘাট ব্রিজ, ইজ্জত পুর ব্রিজ, বলদিঘাট হাইস্কুল ও গাজীপুরে গড়ে তোলা হয় ৮টি পাক সেনাদের ক্যাম্প।

রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে ট্রেনযোগে শ্রীপুরে ছিল হানাদারদের সহজ যোগাযোগ। শ্রীপুর থানায় ছিল তাদের প্রধান ঘাঁটি। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী নিরীহ নারী পুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ধরে এনে এসব ক্যাম্পে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করতো। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় কেওয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম আকন্দের পিতা আলমগীর বাদশা আকন্দকে ধরে এনে শ্রীপুর থানা ক্যাম্পে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। পরিবারের সদস্যরা তার লাশটিও খুঁজে পাননি।

সাতখামাইর গ্রামে বাড়িথেকে ধরে এনে আতর আলী,ইউসুফ আলী,সুনাব আলী,আ.ছাত্তার,ইসমাইল হোসেন,আজম আলী, মানিক, মো.এরশাদ আলী ও শুক্কুর আলীকে এক রশিতে বেঁধে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে এরশাদ আলী ও শুক্কুর আলী বেঁচে গেলেও বাকীরা শহিদ হন।  শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন বদ্ধভূমি ও সাতখামাইরের গণকবর আজও হানাদার বাহিনীর বর্বর ক্ষতর  সাক্ষ্য বহন করে। হানাদার বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণের ছক তৈরি করেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নূর মোহাম্মদ ফকিরের নেতৃত্বে উড়িয়ে দেয়া হয় রাজাবাড়ির পারুলী নদীর ব্রিজ। গোসিংগা, কাওরাইদ, ইজ্জতপুর, গোলাঘাট ও সাতখামাইরে দুটিসহ ছয়টি সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে পরে হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক গেরিলা আক্রমণে মনোবল ভেঙ্গে যায় তাদের।  বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে পিছু হটতে শুরু করে হানাদার বাহিনী।

৭ ডিসেম্বর জহিরুল ইসলাম সুবেদের নেতৃত্বে ইজ্জতপুর ব্রিজ সেনাক্যাম্পে হামলা করে মুক্তিযোদ্ধারা। রাতভর তুমুল যুদ্ধে হানাদারদের বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন গোসিংগা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সাহাব উদ্দিন। হানাদার বাহিনী বনের ভিতর পুঁতে রাখে তার মরদেহ। পাক সেনারা একে একে সব ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়ে শ্রীপুর থানা ক্যাম্পে গড়ে তোলে শক্ত অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে থানা ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ। বন্ধ করে দেয়া হয় হানাদারদের রসদ ও খাদ্য সরবরাহ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ।

শ্রীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম সংগঠক গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ফকির জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমনে হানাদার বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিশোরযোদ্ধা সাহাব উদ্দিন শহীদ হওয়ার চারদিন পর ১১ ডিসেম্বর বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে  নূর মোহাম্মদ ফকির সঙ্গীয় আকবর আলী,আফাজ উদ্দিন ও নাজিম উদ্দিনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ইজ্জতপুর থেকে শহীদ সাহাবদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে গোসিংগায় নিয়ে আসেন। ওই সময় টহল ট্রেনে থাকা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টাপাল্টি গুলিবর্ষণ চলে। ১১ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে হানাদার বাহিনী  শ্রীপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

১২ ডিসেম্বর ভোরে শ্রীপুর সম্পূর্ণভাবে হানাদার মুক্ত হয়। খবর পেয়ে উল্লাসিত জনতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক। শ্রীপুরের মাটিতে  স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়ান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. গিয়াস উদ্দিন ও আ.হাই।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই