তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

কালের স্বাক্ষী গোপাল গিরিধারী জিউর মন্দির

কালের স্বাক্ষী রাণীনগরের গোপাল গিরিধারী জিউর মন্দির
[ভালুকা ডট কম : ১২ মার্চ]
নজরদারির অভাবে নওগাঁর রাণীনগরের প্রায় আড়াই শত বছরের পুরাতন গোপাল গিরিধারী জিউর মন্দির ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। মন্দিরটির তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও কালের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে শেষাংশটুৃকু। সরকার পর্যায় থেকে এটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ্বয় এবং এলাকাবাসি।

দেশের সংস্কৃতি ইতিহাস ও ঐতিহ্য রাক্ষায় এই সব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ ও সংস্কার করা বিশেষ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন উপজেলার হিন্দু বদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও রাণীনগর মহিলা অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ চন্দন কুমার মহন্ত।

উপজেলার গহেলাপুর গোপাল গিরিধারী জিউর মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াইশত বছর আগে সিদ্ধ পুরুষ কান্তজী বাবাজী মহারাজ বহু চেষ্টায় প্রায় ৩৭ শতক জায়গায় ইষ্টক দিয়ে নির্মাণ করেন একটি মন্দির। সেখানে শ্রী শ্রী গোপাল গিরিধারী ঠাকুর সেবা অর্থাৎ কৃষ্ণের বাল্য স্বরুপ কষ্টিপাথরের মূর্তি  স্থাপন করে পূজা-অর্চনা শুরু করেন। এ এলাকা থেকে ফিরে যাওয়ার সময় মন্দিরের সেবায় মহারাজ প্রায় ১৬ বিঘা ফসলি জমিও দিয়েছিলেন যা এখনোও মন্দিরের নামে রয়েছে। এই মন্দিরে এক সময় রাণীনগর উপজেলার প্রায় ৬৪ টি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদয়ের মানুষ দৈনন্দিন পূজা-অর্চনার পাশাপাশি মন্দিরকে ঘিরে একটি বিশেষ সময়ে মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ফেটে গিয়ে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ১৯২২ সালের প্রবল বন্যায় মন্দিরের একাংশ ডেবে গিয়ে ভেঙ্গে যায়। তারপর থেকে স্থানীয় মানুষজন মন্দির ও ফাঁকা জায়গাটি বেপরোয়া  ব্যবহার ও অসচেতনতার কারণে মন্দিরটির আজ এই বেহাল দশা। প্রাচীতন এই মন্দির কত সালে স্থাপিত হয়েছে সে তথ্য জানা জায়নি!

মন্দিরটি দেখতে আসা তরুণদের মধ্যে উপজেলার সিম্বা গ্রামের তানভির রহমান ফায়সাল, আমিনুল ইসলাম ও কচুয়া গ্রামের জিললুর রহমান বলেন, তখনকার সমাজ ব্যবস্থা কেমন ছিল আর এখনকার সমাজ ব্যস্থা কেমন এটা আমাদের ভাবাই।

গোপাল গিরিধারী জিউর মন্দির কমিটির একটানা ২৩বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী গহেলাপুর গ্রামের অমিয় কুমার শাহা জানান, দিনাজপুরের মহারাজ কর্তৃক নির্মিত এই মন্দিরটি কালের বিবর্তনে যখন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে তখন আমাদের পূর্বপুরুষরা চোর-ডাকাতের ভয়ে কৃষ্ণের বাল্য স্বরুপ কষ্টিপাথরের মূতিটিসহ আরোও অন্যান্য কারুকার্য সমৃদ্ধ প্রাচীন জিনিসপত্র গ্রামের ভিতরের একটি মন্দিরে রেখে ছিল। অনেক বছর আগে সেই মন্দির থেকে সে গুলো চুরি হয়ে যায়।

মন্দিরটির বর্তমান ৭সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি বিন্দাবন পাল বলেন, বাপ-দাদার আমলে পূজা-অর্চনা ও বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের দৃশ্যপটের সংমিশ্রণে সিদ্ধ পুরুষ কান্তজী বাবাজী মহারাজ এর নির্দেশে নির্মিত মন্দিরটি মুখরিত হয়ে থাকতো। কিন্তু অসচেতনতার কারণে কালক্রমে যখন মন্দিরটি অকেজো হয়ে পড়ে তখন পূজা-অর্চনা বন্ধ হয়ে গেলে মন্দিরের সকল জিনিসপত্র গ্রামের ভিতরের একটি মন্দিরে রাখা হয়েছিল, তাও আবার বহু বছর আগে কৃষ্ণমূর্তিসহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহৃ গুলো চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে মন্দিরটির শেষাংশটুকু যেমন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি কর্তৃপক্ষের সদইচ্ছায় এটি তৈরি হতে পারে একটি দর্শনীয় পর্যটন স্পটে।

তবে গোপাল গিরিধারী  জিউর মন্দির নিয়ে প্রচলিত একটি কাহিনী রয়েছে,  সিদ্ধ পুরুষ কান্তজী বাবাজী মহারাজ ছিলেন নিস্ব-সন্তান, একদিন স্বপ্নে তিনি দেখলেন তার রাজত্বের তৎকালীন রাজশাহী জেলার আত্রাই পাচুপুর স্টেটের আওয়াতাধীন গহেলাপুর গ্রামে মন্দির নির্মাণ করে গোপাল গিরিধারী ঠাকুর স্থাপণ করে  (কৃষ্ণের বাল্য স্বরুপ) সেবা করলে তিনি সন্তান লাভ করবেন, তাই তিনি এই মন্দির নির্মাণ করে  গিরিধারী ঠাকুর সেবা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তিনি সন্তান লাভ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন এই মন্দিরটি বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে লিখিত ভাবে জানাবো। তারাই পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই